স্কুলে ভর্তি আটকে দুই কিশোরীর

দু’জনেই দিনহাটার সরকার অনুমোদিত স্কুল থেকে চতুর্থ শ্রেণি উত্তীর্ণ হয়েছে। কিন্তু, ‘বার্থ সার্টিফিকেট’ না থাকায় হাই স্কুলে পঞ্চম শ্রেণিতে ভর্তি হতে পারছে না। বিস্তর ছোটাছুটি করেও কাজ না হওয়ায় দুই ছাত্রী কোচবিহারের জেলাশাসকের কাছে সরাসরি চিঠি লিখে তাদের ভর্তির ব্যবস্থা করার আর্জি জানিয়েছে।

Advertisement

কিশোর সাহা

দিনহাটা শেষ আপডেট: ১৭ জানুয়ারি ২০১৮ ০২:১৭
Share:

অপেক্ষায়: আরও পড়তে চায় সাবেক ছিটের দুই ছাত্রী। নিজস্ব চিত্র।

বাংলাদেশ ভূখণ্ডের ছিটমহল থেকে আসা ভারতীয়দের ‘সার্টিফিকেট’ নিয়ে প্রতি পদে বিপত্তি চলছেই। এ বার সমস্যায় পড়েছে দিনহাটার কৃষি বাজার লাগোয়া ‘ইনকিলাব সেটেলমেন্ট ক্যাম্প’-এর দুই ছাত্রী। কল্পনা রানি মোহান্ত ও রাবেয়া আখতার। দু’জনেই দিনহাটার সরকার অনুমোদিত স্কুল থেকে চতুর্থ শ্রেণি উত্তীর্ণ হয়েছে। কিন্তু, ‘বার্থ সার্টিফিকেট’ না থাকায় হাই স্কুলে পঞ্চম শ্রেণিতে ভর্তি হতে পারছে না। বিস্তর ছোটাছুটি করেও কাজ না হওয়ায় দুই ছাত্রী কোচবিহারের জেলাশাসকের কাছে সরাসরি চিঠি লিখে তাদের ভর্তির ব্যবস্থা করার আর্জি জানিয়েছে।

Advertisement

মঙ্গলবার কোচবিহারের জেলাশাসক কৌশিক সাহা বলেছেন, ‘‘বাংলাদেশে যাদের জন্ম তাদের বার্থ সার্টিফিকেট নিয়ে সমস্যা চলছেই। তা বলে দুই ছাত্রীর পড়াশোনা বন্ধ হয়ে যাবে সেটা হতে পারে না। প্রশাসনের পক্ষ থেকে সবরকম পদক্ষেপ করার নির্দেশ দিয়েছি।’’

দিনহাটারই ভারতীয় ভূখণ্ডে সাবেক বাংলাদেশি ছিটমহল মশালডাঙার বাসিন্দা বারাক হোসেন ওবামাও একই সমস্যায় পড়েছিল। সাধারণত সাবেক ছিটের বাসিন্দারা পড়াশোনার জন্য ভারতীয় স্কুলে সন্তানদের ভর্তি করার সময়, ভারতীয় গ্রামের কোনও বাসিন্দাকেই সন্তানের পিতা বলে পরিচয় দিতেন। ছিটমহল মিশে যাওয়ার পরে সেখানকার বাসিন্দারা নিজেদের পরিচয়েই সন্তানদের ভর্তি করাতে গিয়েই সমস্যায় পড়েন। কেননা, তখন আর সন্তানের জন্মের শংসাপত্র তাঁরা দেখাতে পারতেন না। কিন্তু স্কুলে ভর্তি হওয়ার সময় তা দেখানো আবশ্যিক। ওবামা সেখানেই আটকে যায়। পরে অবশ্য প্রশাসনের হস্তক্ষেপে সে পঞ্চম শ্রেণিতেও ভর্তি হতে পেরেছে। রাবেয়া ও কল্পনা রানির ক্ষেত্রেও প্রশাসনের তরফে তেমনই সাহায্য করার আশ্বাস দেওয়া হয়েছে।

Advertisement

কিন্তু, ভর্তি না হওয়া অবধি কল্পনা, রাবেয়ার দুশ্চিন্তা যাবে না। কল্পনার বাবা হরিচরণবাবু দিনমজুরি করেন। তিনি জানান, জানুয়ারি মাসে দুদিন কাজ পেয়েছিলেন। কোনও মতে ধারদেনা করে চলছে তাঁদের সংসার। একই অবস্থা রাবেয়ার বাবা নজরুল ইসলামের। দু’জনেই একাধিকবার স্থানীয় গার্লস হাইস্কুলে গিয়েছেন। সেখানে কয়েকজন আশ্বাস দিলেও কাজের কাজ হয়নি।

রাবেয়া, কল্পনারা সবে ১০ পেরোলেও ছিটমহল হস্তান্তরের পরে প্রতি পদে কী হয়রানি হচ্ছে, সেই বিবরণ বেশ গড়গড় করেই বলতে পারে। ২০১৫ সালের নভেম্বরে বাংলাদেশের ভূখণ্ডের ছিটমহলে থেকে ওরা দিনহাটায় ঢুকে ওই ক্যাম্পে জায়গা পায়। প্রশাসনের উদ্যোগে স্থানীয় প্রাথমিক স্কুলে ভর্তি হতে পারে। দু’জনেই ভাল ফল করেছে। রাবেয়া বলে, ‘‘আমরা অনেক পড়তে চাই। কিন্তু, ফাইভেই তো ভর্তি হতে পারছি না।’’ কল্পনা কথা বলতে গিয়ে কেঁদেই ফেলেছে। সে বলেছে, ‘‘আমাদের দু’জনের বাবার হাতে টাকা নেই। ভর্তিটা বিনে পয়সায় করে না দিলে পড়াই হবে না।’’

খবর গিয়েছে কোচবিহারের তৃণমূল জেলা সভাপতি তথা উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী রবীন্দ্রনাথ ঘোষের কানেও। তিনি বলেন, ‘‘আমি রাবেয়া-কল্পনাদের ভর্তি নিয়ে যাতে সমস্যা না হয়, সে দিকে সকলকে নজর রাখতে বলেছি। শিক্ষ দফতরের সঙ্গেও কথা বলব।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন