প্রতীকী ছবি।
উলেন রায়ের মৃত্যুর তদন্তভার দেওয়া হোক সিবিআইকে— সোমবার কলকাতা হাইকোর্টে এই আর্জি জানালেন উলেনের স্ত্রী মালতি রায়। সোমবার তিনি কলকাতা হাইকোর্টের জলপাইগুড়ি সার্কিট বেঞ্চে আবেদন দাখিল করেন। ২১ জানুয়ারি সার্কিট বেঞ্চে আবেদন প্রথম শুনানি হওয়ার কথা। মালতিদেবী জানিয়েছেন, তিনি আর পুলিশের তদন্তে ভরসা রাখতে পারছেন না। তাঁর আবেদন, তাই দোষীদের শাস্তির দাবিতে নিরপেক্ষ সংস্থা সিবিআইকে তদন্তের নির্দেশ দিক উচ্চ আদালত। মালতিদেবীর কথায়, ‘‘আমার ন্যায্য বিচার চাই। আদালতই তা দিতে পারবে।’’
গত ৭ ডিসেম্বর শিলিগুড়িতে উত্তরকন্যা অভিযান করেছিল বিজেপির যুব মোর্চা। জলপাইমোড় থেকে ফুলবাড়ির ক্যানেল রোড অবধি জায়গায় জায়গায় পুলিশ ব্যারিকেড তৈরি করে। সাহুডাঙির বাসিন্দা উলেনবাবু ফুলবাড়ি ক্যানেল রোডের দিকে মিছিলে ছিলেন। অভিযানের একটা সময় পরে পুলিশের সঙ্গে বিজেপি কর্মীদের গোলমাল সংঘর্ষের আকার নেয়। পুলিশকে লক্ষ করে ইটপাথর, বোতল ছোড়া হয় বলে অভিযোগ। পুলিশের দাবি, তারা পাল্টা কাঁদানে গ্যাস, জল কামানের ব্যবহার করে। তার পর রবার বুলেটও ছোড়া হয়।
এর মধ্যে উলেনবাবুকে জখম অবস্থায় উদ্ধার করে লাগোয়া একটি নার্সিংহোমে নিয়ে যাওয়া হলে সেখানে তাঁকে মৃত বলে জানানো হয়। চিকিৎসকেরা উলেনবাবুর শরীরে শটগানের ছররা গুলির আঘাতের চিহ্ন দেখতে পান। ওই দিন গভীর রাতেই জেলাশাসকের বিশেষ নির্দেশ মেনে উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজে দেহের ময়নাতদন্ত করানো হয়। পরের দিন, অবশ্য মৃতের বোন শান্তিবালা রায় জলপাইগুড়ি আদালতে নতুন করে ময়নাতদন্তের আবেদন করে। তিন চিকিৎসক এবং ভিডিয়োগ্রাফিরও দাবি করা হয়। রাজ্যের তরফে আদালতে জানানো হয়, সব মেনেই ময়নাতদন্ত করা হয়েছে। পরে আদালতের নির্দেশে দেহ পরিবারের হাতে তুলে দেওয়া হয়।
বিজেপি প্রথম থেকেই দাবি করছিল, পুলিশের গুলিতে মৃত্যু হয়েছে উলেনের। মালতিদেবীও পুলিশের বিরুদ্ধেই অভিযোগ দায়ের করেন। রাজ্যের তরফে তদন্তভার সিআইডিকে দেওয়া হয়। মালতিদেবীর আইনজীবী অভ্রজ্যোতি দাস বলেন, ‘‘পুলিশের বিরুদ্ধে খুনের অভিযোগ। আর তদন্তভার রাজ্যের পুলিশের বিরুদ্ধে। তাই সিবিআই তদন্ত চেয়েছি।’’
ঘটনাকে নিয়ে বিধানসভা ভোটের আগে বিজেপি এগোবে, তা আগে থেকেই পরিষ্কার ছিল। সিবিআই তদন্ত নিয়ে জোরদার সওয়াল শুরু করছেন বিজেপির জলপাইগুড়ি, শিলিগুড়ির নেতারা। জবাবে পর্যটনমন্ত্রী গৌতম দেব বলেন, ‘‘মামলাটি বিচারধীন, তাই কিছু বলব না। মৃত্যু নিয়ে রাজনীতি কারা করছে, তা মানুষ দেখুক।’’
উত্তরকন্যা অভিযানে কৈলাস বিজয়বর্গীয়, রাজু বিস্তা এবং সায়ন্তন বসুর নামে পুলিশের করা মামলা খারিজের দাবি জানিয়েও সার্কিট বেঞ্চে আলাদা দু’টি আবেদন দাখিল করা হয়েছে।