একসঙ্গে বসে চলছে খাওয়া। —নিজস্ব চিত্র।
হবু মায়েদের হাসপাতালে প্রসব করানোর আগ্রহ বাড়াতে পিকনিককে হাতিয়ার করছে কোচবিহার জেলা স্বাস্থ্য দফতর। যার পোশাকি নাম দেওয়া হয়েছে ‘মাদার্স পিকনিক’। সেপ্টেম্বর মাস থেকে ব্লক ভিত্তিক ওই পিকনিক শুরু হয়েছে। ওই তালিকায় বৃহস্পতিবার যুক্ত হলেন দিনহাটা ১ ও ২ নম্বর ব্লকের ২৩ জন হবু মা।
স্বাস্থ্য পরীক্ষা থেকে আলোচনা-ঘরোয়া আড্ডার পরিবেশে চলল খোলামেলা আলোচনা। দুপুর গড়াতেই সবাইকে এক সঙ্গে নিয়ে যাওয়া হয় দিনহাটা নার্সিং হোস্টেলের ডাইনিং রুমে। সেখানেই বসে ভাত, ডাল, সব্জি আর মুরগির মাংসের ঝোল দিয়ে পিকনিকের খাওয়াদাওয়া। সব মিলিয়ে দিনের শেষে রীতিমতো খুশি হবু মায়েরা। অনেকে আবার প্রথম সন্তান প্রসবের সময় হাসপাতালে না আসার ‘ভুল’ প্রকাশ্যে মেনে নিয়েছেন।
কোচবিহারের মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক সুমিত গঙ্গোপাধ্যায় বলেন, “আমরা নিশ্চিত করতে চাই যে, জেলার সমস্ত প্রসূতিরা যেন হাসপাতালেই যান। মাদার্স পিকনিকের মাধ্যমে ওই ব্যাপারে আমরা সচেতনতা বাড়ানোর পাশাপাশি সঙ্কোচ, দ্বিধা কাটানোরও চেষ্টা করছি।” দিনহাটার এসিএমওএইচ পরিতোষ মন্ডল বলেন, “পিকনিকে সামিল সকলেই স্বতঃস্ফূর্তভাবে আলোচনা, স্বাস্থ্য পরীক্ষাতে অংশ নিয়েছেন।”
স্বাস্থ্য দফতর সূত্রেই জানা গিয়েছে, কোচবিহারের ১২টি ব্লকে বছরে গড়ে ১৩ শতাংশ হবু মা নিজের বাড়িতে পরিচিতদের মাধ্যমে কিংবা দাইয়ের সাহায্য নিয়ে সন্তান প্রসব করান। বহু ক্ষেত্রে প্রসবের সঠিক পদ্ধতি মানা হয় না, এমন অভিযোগও ওঠে। এমনি জেলায় এক বছর বয়স পর্যন্ত শিশু মৃত্যুর হার বৃদ্ধির পিছনেও ওই প্রবণতা খানিকটা দায়ী বলে চিকিৎসকদের একাংশের ধারণা।
সব মিলিয়েই এ বার হবু মায়েদের হাসপাতালে নিয়ে এসে প্রাতিষ্ঠানিক প্রসব একশো শতাংশ করার ব্যাপারে জোর দেওয়া হয়। ওই পরিকল্পনা মাথায় রেখেই জেলার সব ক’টি ব্লক থেকে পর্যায়ক্রমে বাছাই করা এলাকার হবু মায়েদের নিয়ে পিকনিকের আসর হচ্ছে। আগে শীতলখুচি, মাথাভাঙা ও হলদিবাড়ি ব্লকেও মাদার্স পিকনিক হয়। বাকি ব্লকেও এ মাসেই করা হবে।
হাসপাতাল সূত্রের খবর, দিনহাটার ওই হবু মায়েরা সকলেই ৪ থেকে ৮ মাসের গর্ভবতী। স্বাস্থ্যকর্মীরাই তাদের গাড়িতে তুলে দিনহাটা মহকুমা হাসপাতালে নিয়ে আসেন। সেমিনার হলে আলোচনা সভা হয়। স্ত্রী রোগ বিশেষজ্ঞ থেকে নির্দিষ্ট বিভাগের দায়িত্বে থাকা নার্সরাও সেখানে ছিলেন। দেখানো হয় ‘লেবার রুম’।
সিঙিমারির মোমিনা বিবি বলেন, “সাত বছর আগে আমার প্রথম সন্তান বাড়িতে প্রসব হয়। তখন এ ভাবে হাসপাতালের কথা জানতাম না। খুব ঝুঁকি নিয়েছিলাম।” সেউটির মৌসুমী বর্মন বলেন, “প্রথমবার মা হতে চলেছি। অনেক ভয়ভীতি ছিল। এ দিনের পিকনিকের দৌলতে সে সব অনেকটাই কেটে গিয়েছে।” দিনহাটা হাসপাতালের চিকিৎসক উজ্জ্বল আচার্য বলেন, “ভাল উদ্যোগে সাড়া মেলে। এক্ষেত্রেও মিলেছে।”