শাস্তি: জওয়ানদের হাঁটু মুড়ে হাঁটানো হচ্ছে। নিজস্ব চিত্র
রুটি কেন তাড়াতাড়ি শেষ হয়ে গেল— এই প্রশ্ন এবং তার পরেই জওয়ানদের শাস্তি দেওয়ার ঠেলায় রবিবার রাতে অগ্নিগর্ভ হয়ে ওঠে শিলিগুড়ির ইন্ডিয়ান রিজার্ভ ব্যাটালিয়নের (আইআরবি) প্রশিক্ষণ কেন্দ্র। এখানেই প্রশিক্ষণ নিতে আসা র্যাফের লোকজনের অভিযোগ, অফিসারদের একাংশ তাঁদের লাঠিপেটা করেন, রিভলভার উঁচিয়ে শাসান, হাঁটু মুড়ে হাঁটাতে বাধ্য করেন। গোলমাল রাতেই ব্যারাক থেকে রাস্তায় নেমে আসে। রবিবার গভীর রাত থেকে সোমবার দুপুর অবধি এনজেপি থানার ফুলবাড়ির অম্বিকানগরে দফায় দফায় বিক্ষোভ, গাড়ি ভাঙচুর, মারধর, চিৎকার-চেঁচামেচি চলে।
যা দেখেশুনে আতঙ্কিত এলাকার বাসিন্দারা বলছেন, ‘‘এতে রীতিমতো ব্যারাকে পুলিশ বিদ্রোহ!’’
পুলিশ সূত্রের খবর, ক্যান্টিনে খাবার নিয়ে গোলমাল ছাড়াও রাতে ব্যাটালিয়নে উপস্থিতি নিয়ে দু’পক্ষের মধ্যে রীতিমতো সংঘর্ষের পরিস্থিতি তৈরি হয়েছিল। অফিসারদের একাংশ ২২ জন প্রশিক্ষিত র্যাফ জওয়ানের উপরে চড়াও হন। তখনই তাঁদের মারধর, রিভলভার উঁচিয়ে শাসানি এবং হাঁটু মুড়ে হাঁটানো হয় বলে অভিযোগ। ব্যাটালিয়নের এক রিজার্ভ ইন্সপেক্টর (আরআই) সৌরভ চক্রবর্তীর বিরুদ্ধে ক্ষোভ ফেটে পড়েন জওয়ানেরা। কিছুক্ষণের মধ্যে তাঁরা অফিসারদের ধাক্কা দিয়ে রাস্তায় নেমে বিক্ষোভ দেখাতে শুরু করেন। তখন প্রচুর পুলিশ গিয়ে পরিস্থিতি স্বাভাবিক করার চেষ্টা করে। বিক্ষোভকারীরা পুলিশের একটি গাড়িও ভাঙচুর করেন বলে অভিযোগ।
সকাল অবধি টানা বিক্ষোভের পর ব্যাটালিয়নের মূল ফটক আটকে বসে পড়েন জওয়ানরা। অফিসার সৌরভকে অন্যত্র সরিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়। রাজ্য সশস্ত্র পুলিশের ডিআইজি জয়ন্ত পাল, ডিসি (পূর্ব) গৌরব লাল-সহ একাধিক উচ্চ পদস্থ অফিসার গিয়ে জওয়ানদের সঙ্গে কথা বলেন। শেষে বিভাগীয় তদন্তের নির্দেশ দেওয়া হয়। পরে ডিআইজি বলেন, ‘‘এটা পুরোটাই আমাদের আভ্যন্তরীণ বিষয়। বাইরে এ নিয়ে কিছু বলার নেই।’’
জওয়ানদের দাবি, রবিবার রাতে কেন এত তাড়াতাড়ি রুটি শেষ হয়ে গেল, তা থেকে গোলমাল শুরু হয়। জওয়ানরা বলছেন, ‘‘আমরা মুখ্যমন্ত্রীর কাছে বিচার চেয়ে দৃষ্টি আকর্ষণের জন্য প্রতিবাদ করেছি।’’
পাল্টা অভিযোগ করেছেন ব্যাটালিয়নের অফিসারদের একাংশও। তাঁদের দাবি, এলাকার চড়ক মেলায় রাতে ব্যাটালিয়ন থেকে দল বেঁধে যেতে বারণ করা হয়েছিল। তার পরেও কয়েক জন যান বলে অভিযোগ। রাত ১০টার পরে বারবার হাজিরার সাইরেন বাজানোর পরেও দেখা যায়, কয়েক জন গরহাজির। তাঁরা ফিরলে আরআই শাস্তি দেন। অফিসারদের দাবি, র্যাফ, আইআরবি ও কমব্যাট জওয়ানদের যে শাস্তির কথা বলা আছে, সেগুলিই করান হয়েছে। অভিযুক্ত সৌরভবাবুর সঙ্গে অবশ্য এ দিন যোগাযোগ করা যায়নি।