মোমের আলোয় চিকিৎসা, তেতে উঠল স্বাস্থ্যকেন্দ্র

বিদ্যুৎ নেই। তাই মোমবাতির আলো জ্বালিয়েই এক প্রসূতির চিকিৎসা করছিলেন চিকিৎসক। রবিবার রাতে তাতেই তেতে উঠল মালদহের হরিশ্চন্দ্রপুর-২ ব্লক প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্র।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

চাঁচল শেষ আপডেট: ১১ অগস্ট ২০১৫ ০২:৪১
Share:

বিদ্যুৎ নেই। তাই মোমবাতির আলো জ্বালিয়েই এক প্রসূতির চিকিৎসা করছিলেন চিকিৎসক। রবিবার রাতে তাতেই তেতে উঠল মালদহের হরিশ্চন্দ্রপুর-২ ব্লক প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্র। কেন হাসপাতালে জেনারেটরের ব্যবস্থা নেই সেই অভিযোগ তুলে তাণ্ডব চালানোর সময় এক মহিলা চিকিৎসককে চেয়ার ছুড়ে মারা হয় বলে অভিযোগ। লাগোয়া বিএমওএইচের আবাসনে চড়াও হয়ে দরজায় লাথি মেরে দরজা খোলানোর পর তাকেও চূড়ান্ত হেনস্থার হুমকিও দেওয়া হয় বলে অভিযোগ। পরে রাত সাড়ে ১১টায় পুলিশ গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।

Advertisement

ঘটনায় বিএমওএইচের চিকিৎসকেরা আতঙ্কিত হয়ে পড়লেও পুলিশে অভিযোগ জানানো হয়নি। ব্লক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে কেন বিকল্প আলোর ব্যবস্থা নেই, তা নিয়ে জেলা স্বাস্থ্য দফতর ও হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের মধ্যে চাপানউতোরও শুরু হয়েছে। স্থানীয় প্রশাসন থেকে শুরু করে স্বাস্থ্য ভবনে সমস্যার কথা জানিয়েও ফল মেলেনি বলে অভিযোগ তুলেছেন বিএমওএইচ। রবিবারের ঘটনার পর নড়েচড়ে বসেছে প্রশাসন। জেলাশাসক শরদকুমার দ্বিবেদী বলেন, ‘‘জরুরি ভিত্তিতে আলোর জন্য ব্লক প্রশাসনকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।’’

গোটা ব্লকের বাসিন্দাদের চিকিত্সা যে স্বাস্থ্যকেন্দ্রের উপর নির্ভরশীল সেখানে বিকল্প আলোর ব্যবস্থা নেই কেন? মালদহের সিএমওএইচ দিলীপ মন্ডল বলেন, ‘‘সব হাসপাতালে জেনারেটর দেওয়া যায় না। স্থানীয় বিডিও ও বিএমওএইচের কাছে স্বাস্থ্য দফতরের তহবিলের টাকা রয়েছে। সেই টাকায় ইনভার্টারের ব্যবস্থা করতে বলা হয়েছিল। কিন্তু কেউই তা করেননি।’’

Advertisement

বিডিও টেলিফোন ধরেননি। বিএমওএইচ সাবির আলি বলেন, ‘‘জেনারেটর কেন নেই সেই অভিযোগ তুলে কিছু বাসিন্দা আমাকে চরম হেনস্থা করেন। কিন্তু আমার কী অপরাধ? সর্বস্তরে জেনারেটরের দাবি জানানো হলেও কারও কোনও হেলদোল নেই। যা ঘটেছে তাতে নিরাপত্তার অভাব বোধ করছি।’’

ইনভার্টার কেনা প্রসঙ্গে বিএমওএইচের দাবি, ‘‘ইনভার্টার থাকলে তা চার্জের জন্য বিদ্যুৎ প্রয়োজন। কিন্তু এখানে অধিকাংশ সময় বিদ্যুৎ থাকে না। থাকলেও এতই লো ভোল্টেজ, যে কাজেই আসে না। ফলে ইনভার্টার দিয়ে কী হবে।’’

স্বাস্থ্যকেন্দ্র ও স্থানীয় সূত্রেও জানা যায়, ৩০ শয্যার ব্লক স্বাস্থ্যকেন্দ্রটি রয়েছে মশালদহ এলাকায়। কিন্তু দিনের অধিকাংশ সময় এলাকায় বিদ্যুৎ থাকে না। রবিবার দিনও বিকেল ৪টে থেকে এলাকায় বিদ্যুৎ ছিল না। রাত ন’টায় দক্ষিণ পরানপুর এলাকার প্রসূতি আদরিবিবিকে হাসপাতালে নিয়ে আসেন পরিজনেরা। মোমবাতির আলোয় চিকিত্সা শুরু হতেই প্রসূতির আত্মীয়ের পাশাপাশি অন্য রোগীদের পরিজনরা ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠেন। হাসপাতালে চেয়ার, টেবিল উল্টে তাণ্ডব চালানোর সময় অন্তর্বিভাগে থাকা চিকিত্সক মৌমিতা কবিরাজকে চেয়ার ছুড়ে মারা হয় বলেও অভিযোগ। তারপরেই তাঁরা বিএমওএইচের আবাসনেও চড়াও হন বলে অভিযোগ।

স্থানীয় বাসিন্দা মহম্মদ ইয়াসিন, পিন্টু সাহাদের অভিযোগ, ‘‘একেই বিদ্যুতের সমস্যায় আমরা নাজেহাল। কিন্তু হাসপাতালেও বিকল্প ব্যবস্থা নেই। এমনকি রাতে মোমবাতি, টর্চের ব্যবস্থাও রোগীদের পরিজনকেই করতে হয়।’’ চিকিত্সক মৌমিতা কবিরাজ বলেন, ‘‘কিন্তু বিদ্যুৎ না থাকলে, জেনারেটরের ব্যবস্থা না থাকলে আমরা কী করব?’’ এলাকার বেহাল বিদ্যুৎ সরবরাহ প্রসঙ্গে বিদ্যুৎ বন্টন কোম্পানির ভালুকার স্টেশন ম্যানেজার সুপ্রিয় সিংহের দাবি, ‘‘সমস্যার কথা আমাকে কেউ জানাননি। সমস্যা যাতে মেটে তা দেখছি।’’

চাঁচলের এসডিপিও রানা মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘‘গন্ডগোলের খবর পেয়ে পুলিশ গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নিয়ে আসে। কিন্তু কেউ কোনও অভিযোগ জানাননি।’’

ওই মহিলাকে পৌনে ন’টা নাগাদ স্বাস্থ্যকেন্দ্রে নিয়ে আসা হয়েছিল। তার পরে তাঁকে রেফার করে দেওয়া হয় মালদহে। সে দিন রাতে সেখানে স্বাভাবিক ভাবেই তিনি একটি কন্যা সন্তানের জন্ম দিয়েছেন।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন