ইদের দিনে দুই খুদে। শিলিগুড়িতে। — বিশ্বরূপ বসাক
সাকিন বিহার। গায়ের রং সাদা-ধূসর। ট্রাকের ডালা খুলে নধর খাসিটিকে দেখেই হইহই পড়ে যায়। ইদের বাজারে বিহার থেকে আসা খাসিটির শিলিগুড়ি বাজারে দাম ওঠে ৪০ হাজার।
কুরবানির ইদে সচরাচর উট-দুম্বার দেখা মেলে না শিলিগুড়িতে। ভরসা খাসি-পাঁঠা। তবে এ বার ট্রাকে চাপিয়ে বিহার থেকে ওজনদার খাসি নিয়ে আসা হয়েছিল শিলিগুড়িতে। শিলিগুড়ি টাউন স্টেশন লাগোয়া বাজারে সেই খাসিগুলি বিক্রি শুরু হতেই খবর ছড়িয়ে পড়ে। ওজনের সঙ্গে রং বিচারও চলে। দর পৌঁছে যায় চল্লিশ হাজারে। সর্বোচ্চ দরে বিক্রি হওয়া খাসির ওজন ছিল ৩০ কেজি। কাড়াকাড়ি শুরু হওয়ায় প্রায় নিলাম হওয়ার জোগাড় হয়। শেষ পর্যন্ত আলোচনায় দর স্থির হয়। ভিন রাজ্যের শুধু নয়, এলাকার খাসি-পাঠার দরও চড়েছে পাল্লা দিয়ে। শিলিগুড়ির অঞ্জুমান খিদমতে খালক-এর সম্পাদক ফিরোজ আহমেদ বলেন, ‘‘ওজন দিয়ে দাম বিচার করলে চলে না। খাসি বা পাঠার রং, দেখতে কেমন সব মিলিয়ে দাম ঠিক হয়। ইদের উৎসবের অঙ্গ এ সবই।’’ এমন ভাবেই হইচই করেই মঙ্গলবার গোটা উত্তরবঙ্গে পালিত হল ইদ। নমাজের পর থেকে চলেছে বাজার। খাবারের দোকান থেকে মোবাইলের দোকান, মাল্টিপ্লেক্স ভিড় ছিল সর্বত্র।
শুধু কি পাঁঠা-খাসি, উত্তরপ্রদেশ থেকে এসেছিল আতরও। নকশাকাটা মোটা কাচের ছোট্ট শিশিতে ভরা সামান্য আতর বিক্রি হয়েছে হাজার টাকা দামে। বারাণসী থেকেও এসেছে বিশেষ এক আতর। যার ৮ মিলিলিটার দাম ৬০০ টাকা। ব্যবসায়ীদের দাবি, একবার সে আতর মাখলে অন্তত সাত দিন তার রেশ থাকতে বাধ্য।
কুরবানির হোক অথবা খুশির, ইদ মানেই আতর-সেমাই এর আয়োজন। শিলিগুড়ির হাসমিচকে মসজিদের পাশে ঈদের বাজারও বসেছিল। জলপাইগুড়ির দিনবাজার, ডিবিসি রোডেও বাজার বসেছিল। সেমাইয়ের সঙ্গে বিক্রি হয়েছে জামা-কাপড়ও।
ইদের ছুটিতে পর্যটন ব্যবসায়ীরাও খুশি। এ দিন শিলিগুড়ি, জলপাইগুড়ির আসেপাশের নানা জায়গা যেমন ভরে গিয়েছিল, তেমনই পাহাড় ও ডুয়ার্সের নানা পর্যটন কেন্দ্রেও ভিড় ছিল। শনিবার রবিবারের পরে এক দিন ছুটি নিলেই ইদের ছুটি। সব মিলিয়ে চার দিন। এই সুযোগ ছাড়েননি অনেকেই। কলকাতার এক পর্যটক যেমন বলেন, ‘‘বর্ষার ডুয়ার্স দেখার ইচ্ছা ছিল অনেক দিন ধরে। এ বার সেই শখ মিটিয়ে নিলাম।’’
এ দিন সকালে জলপাইগুড়ির কালু সাহেবের মসজিদ, মার্চেন্ট রোড মসজিদ, দিনবাজার মসজিদ সহ জেলার মসজিদগুলিতে নামাজ পড়া হয়৷ শিলিগুড়ির পুলিশ কমিশনারেটের আওতায় ৪১টি মসদিজে নামাজ পড়া হয়। প্রচুর মানুষ সাত সকালে কাঞ্চনজঙ্ঘা স্টেডিয়াম এবং কারবালাতেও ইদের নামাজ পড়েন। দক্ষিণ দিনাজপুরের হরিরামপুর, কুমারগঞ্জ, বংশীহারি, গঙ্গারামপুর, তপন-সহ একাধিক এলাকাতেও সাড়ম্বরে ইদ পালিত হয়। হরিরামপুর, বংশীহারি-সহ বেশ কয়েকটি এলাকায় ইদ উপলক্ষে মেলাও বসেছিল। মালদহের কালিয়াচকের সুজাপুরে নয়মৌজা ইদগাহ ময়দানে এক সঙ্গে লক্ষাধিক মুসলিম ধর্মপ্রাণ মানুষ নামাজ পাঠ করেন। ইংরেজবাজারের কুট্টিটোলাতে ইদগাহে হাজারখানেক মহিলা নামাজ পাঠে অংশগ্রহণ করেন। ২০০১ সাল থেকে এখানে শুধুমাত্র মহিলারা নামাজ পাঠ করেন। কোচবিহার, উত্তরদিনাজপুর, আলিপুরদুয়ারেও ইদ উৎসবের আমেজে পালিত হয়েছে।