জোর করে রায়গঞ্জে সভা করা হবে না বলে শনিবার জানিয়েছিল বিশ্ব হিন্দু পরিষদ (ভিএইচপি)। যেখানে পুলিশ তাঁদের আটকাবে সেখানেই থেমে গিয়ে সভা করার চেষ্টা করবেন বলে তাঁরা জানিয়েছিলেন। কিন্তু রবিবার দেখা গেল, ১৪৪ ধারা অগ্রাহ্য করে বেলা ২টো নাগাদ রায়গঞ্জের মার্চেন্ট ক্লাব ময়দানে ঢুকে পড়লেন ভিএইচপি ও বিজেপি-র সদস্যেরা। অসমাপ্ত মঞ্চে ভিএইচপি-র পতাকা লাগিয়ে ওই মাঠেই প্রায় মিনিট কুড়ি ধরে তাঁরা সভা করেন। সভায় মিনিট দশেক বক্তৃতা দেন বিজেপি-র জেলা সাধারণ সম্পাদক প্রদীপ সরকার। পুলিশ তারপরে একাধিক গাড়ি নিয়ে মাঠে গিয়ে ভিএইচপি-র সদস্যদের গ্রেফতার করে। তার পরেও ভিএইচপি-র শতাধিক সদস্য মাঠে ঢোকার চেষ্টা করলে পুলিশ লাঠি উঁচিয়ে তাঁদের ছত্রভঙ্গ করে দেয়।
জেলা তৃণমূল সভাপতি অমল আচার্য এর পরে প্রশাসনের সমালোচনা করে বলেন, ‘‘জেলায় সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি রক্ষা ও ধর্মনিরপেক্ষ পরিবেশ বজিয়ে রাখার স্বার্থে পুলিশ ও প্রশাসনের এ দিন আরও সক্রিয় ও তৎপর থাকা উচিত ছিল। ১৪৪ ধারা জারি থাকা সত্ত্বেও পুলিশের সামনে মাঠে ঢুকে ভিএইচপি সভা করল কী করে?’’ রাজ্য পুলিশের মালদহ রেঞ্জের ডিআইজি সত্যজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায়ের দাবি, ভিএইচপি-র সদস্যরা যখন ১৪৪ ধারা লঙ্ঘন করে মাঠে ঢোকেন, সেই সময় পুলিশকর্মীদের একটি বড় অংশ রায়গঞ্জের বিভিন্ন এলাকা থেকে ওই সংগঠনের অন্য সদস্যদের গ্রেফতার করতে ব্যস্ত ছিলেন। মাঠে পর্যাপ্ত পুলিশকর্মী না থাকায়, তাঁরা প্রতিরোধ করতে পারেননি। তবে কোনও পুলিশকর্মীর গাফিলতি থাকলে নিশ্চয়ই ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন তিনি। জেলা পুলিশ সুপার সৈয়দ ওয়াকার রেজা জানান, ১৪৪ ধারা লঙ্ঘনের অভিযোগে এদিন রায়গঞ্জের বিভিন্ন এলাকা থেকে ভিএইচপি-র প্রায় ৭০০ সদস্যকে গ্রেফতার করে তাঁদের ব্যক্তিগত বন্ডে জামিন দেওয়া হয়েছে। সবার বিরুদ্ধেই নির্দিষ্ট ধারায় মামলা রুজু করা হচ্ছে।
ভিএইচপি-র দায়ের করা একটি মামলার ভিত্তিতে রায়গঞ্জের জেলা ও দায়রা আদালত গত বৃহস্পতিবার রায়গঞ্জের মার্চেন্ট ক্লাব ময়দানে সভা করার পক্ষে রায় দিয়েছিল। কিন্তু ওই দিনই রায়গঞ্জের মহকুমাশাসক বিপুলকুমার বিশ্বাস সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি নষ্ট হতে পারে আশঙ্কায় ওই মাঠ ও তার চার দিকের ২০০ মিটার এলাকায় ১৪৪ ধারা জারি করেন। শনিবার কালিয়াগঞ্জ ও ইসলামপুর বাদে গোটা জেলা জুড়েই ১৪৪ ধারা জারি করা হয়। তার পরে ভিএইচপি-র এই সভার কার্যকর্তা বিজয়কৃষ্ণ তালুকদার জানিয়েছিলেন, তাঁরা জোর করে সভায় ঢোকার চেষ্টা করবেন না। কিন্তু এ দিনের ঘটনার পরে বিজয়কৃষ্ণবাবু বলেন, ‘‘জেলার বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আমাদের সদস্যরা এসেছিলেন। তাঁরা স্বতঃস্ফূর্ত ভাবে মাঠে ঢুকে পড়েন।’’
বিশ্ব হিন্দু পরিষদের পূর্ব ক্ষেত্রের সংগঠন সম্পাদক শচীন্দ্রনাথ সিংহ এ দিন বলেন, ‘‘পুলিশের নির্যাতনের প্রতিবাদে সোমবার সকাল ৬টা থেকে ১২ ঘণ্টা উত্তর দিনাজপুর জেলায় বন্ধ ডাকা হয়েছে।’’ বিজেপি-র সহ সভাপতি সুভাষ সরকারও ঘটনার নিন্দা করে জানান, মুখ্যমন্ত্রী আদালতের নির্দেশ অর্থাৎ সংবিধানকে অমান্য করে ১৪৪ ধারা জারি করেছিলেন। তাঁর দাবি, প্রবীণ তোগাড়িয়ার রাজ্যে আসা ঠেকাতে মুখ্যমন্ত্রী ১৪৪ ধারা জারি করেছেন। অথচ, সিমির প্রতিষ্ঠাতা সদস্য ইমরানকে সাংসদ করে রাজ্যসভায় পাঠিয়েছেন। সুভাষবাবু বলেন, ‘‘মনে হচ্ছে, হিন্দু ভোট যেন মুখ্যমন্ত্রীর দরকার নেই! তাঁর এই সাম্প্রদায়িক আচরণ কোনও সম্প্রদায়ই ভাল ভাবে নিচ্ছে না।’’
বিকেল চারটে নাগাদ ভিএইচপি কার্যালয়ে যুগ্ম সাংবাদিক সম্মেলন করে শচীন্দ্রনাথবাবু ও বিজয়কৃষ্ণবাবু জানান, অন্যায় ভাবে ১৪৪ ধারা জারি করার প্রতিবাদে আজ, সোমবার রায়গঞ্জের মহকুমাশাসকের বিরুদ্ধে রায়গঞ্জ জেলা আদালতে আদালত অবমাননার মামলা দায়ের করা হবে।