সাজার মেয়াদে অখুশি আক্রান্ত

তিন বছর আগে বৈষ্ণবনগরের সাটাঙ্গাপাড়ার এক তরুণীর উপর অ্যাসিড হামলার ঘটনায় এক যুবককে ১০ বছরের কারাদণ্ড দিল আদালত। মঙ্গলবার মালদহের অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা বিচারক (ফাস্ট ট্র্যাক ফার্স্ট কোর্ট) ইয়াসমিন আহমেদ ওই রায় দেন।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ১৭ মে ২০১৭ ০২:০৩
Share:

প্রতীকী ছবি।

তিন বছর আগে বৈষ্ণবনগরের সাটাঙ্গাপাড়ার এক তরুণীর উপর অ্যাসিড হামলার ঘটনায় এক যুবককে ১০ বছরের কারাদণ্ড দিল আদালত। মঙ্গলবার মালদহের অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা বিচারক (ফাস্ট ট্র্যাক ফার্স্ট কোর্ট) ইয়াসমিন আহমেদ ওই রায় দেন। আদালতের রায়ের বিরোধিতা করে উচ্চ আদালতে বিচার চাইবেন বলে জানিয়েছেন সাজাপ্রাপ্তের বাবা।

Advertisement

অ্যাসিড আক্রান্ত তরুণীও এই রায়কে মানতে পারছেন না। তিনি বলেন, ‘‘অ্যাসিডে আক্রান্ত হওয়ার পর আমার যে শারীরিক ও মানসিক কষ্ট ওই সাজায় লাঘব হল না। বরং আতঙ্ক আরও বেড়ে গেল। কয়েক বছরের মধ্যেই জেল থেকে বেরিয়ে এলে আমার উপর হয়তো ফের হামলা হতে পারে। আমার পরিবারও হামলার শিকার হতে পারে। আমি মনেপ্রাণে চেয়েছিলাম অভিযুক্তের যাবজ্জীবন সাজা হবে। কিন্তু না হওয়ায় আমি হতাশ।’’

আদালত সূত্রে জানা গিয়েছে, কলেজে পড়ার সময়েই ওই তরুণীকে রাস্তাঘাটে প্রায়ই উত্ত্যক্ত করত বাঙালিপাড়ার যুবক উজ্জ্বল মণ্ডল। ওই যুবক প্রেমের প্রস্তাবও দেয় ওই তরুণীকে। কিন্তু সে রাজি হয়নি। ২০১৪ সালের ২০ ফেব্রুয়ারি সন্ধে প্রায় ৭টা নাগাদ তরুণী ও তাঁর মা দু’জনে বাড়িতে ছিলেন। সে সময় পরিবারের অন্য সদস্যদের নিয়ে চড়াও হন ওই যুবক। ঘরে ঢুকে ওই তরুণীর মুখে অ্যাসিড ছুড়ে মারা হয়। স্থানীয় বাসিন্দারা তাকে প্রথমে বেদরাবাদ গ্রামীণ হাসপাতালে ও পরে রাতেই মালদহ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করান। পরে তাঁকে কলকাতার এসএসকেএমে স্থানান্তরিত করা হয়। অ্যাসিডে তাঁর মুখের একাংশকে বিকৃত করে দেওয়ার পাশাপাশি খাদ্যনালীকে সঙ্কুচিত করে দিয়েছে। এখনও তাঁর যন্ত্রণা হয় বলে পরিবারের দাবি। কলকাতার এসএসকেএমকে চিকিৎসাও চলছে।

Advertisement

ওই ঘটনায় তরুণীর বাবা উজ্জ্বল মণ্ডল, তার বাবা বিশ্বনাথ মণ্ডল, দুই দাদা নিখিল ও নির্মল মণ্ডলের বিরুদ্ধে বৈষ্ণবনগর থানায় মামলা দায়ের করেন। ঘটনার পর পুলিশ উজ্জ্বলকে গ্রেফতার করে এবং তাকে সংশোধনাগারে রেখেই এত দিন বিচার চলছিল। বাকি তিন জন উচ্চ আদালত থেকে জামিন পায়। আদালত সূত্রে খবর, মামলায় মোট ৯ জন সাক্ষ্য দেন। বিচারক সোমবারই উজ্জ্বলকে দোষী সাব্যস্ত করেন ও বাকি তিন জনকে বেকসুর খালাস করে দেন।

এ দিন বেলা সাড়ে ১২টা নাগাদ দোষীকে কাঠগড়ায় তোলা হয়। বিচারক তাঁর কোনও বক্তব্য রয়েছে কি না জানতে চান। উজ্জ্বল বলে, ‘‘আমাকে ফাঁসানো হয়েছে। বিনা অপরাধে যদি আমাকে অপরাধী করা হয়, তবে আমাকে ফাঁসি দেওয়া হোক। আমার দুঃখ নেই।’’

এজলাসে পুরো সময়টা উজ্জ্বল ছিল নির্লিপ্ত ও ভাবলেশহীন। বিকেল পাঁচটা নাগাদ বিচারক সাজা শোনান। মামলার সরকারি আইনজীবী গোলাম গৌসখান লোদি বলেন, ‘‘বিচারক দোষীকে ৩২৬ এ ধারায় ১০ বছরের সাজা ও ১০ হাজার টাকা জরিমানা এবং অনাদায়ে আরও ৬ মাসের জেল। ৩০৭ ধারায় ১০ বছরের সাজা ও ১০ হাজার টাকা জরিমানা অনাদায়ে ৬ মাসের জেল এবং ৪৪৮ ধারা মামলায় এক বছরের সাজা ও এক হাজার টাকা জরিমানা করেছেন।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement