রং দেখে হয় ভ্রম। —নিজস্ব চিত্র।
উত্তরবঙ্গ রাষ্ট্রীয় পরিবহণ সংস্থার আদলে নীল-সাদা রং করে যাত্রীদের বিভ্রান্ত করার অভিযোগ উঠছে কিছু বেসরকারি বাসের বিরুদ্ধে।
শিলিগুড়ি থেকে জলপাইগুড়ি, কোচবিহার ও অন্য কয়েকটি রুটের বেশ কিছু বাসের রং রাতারাতি বদলে এনবিএসটিসি-র মত নীল-সাদা রং করানো হয়েছে। সাধারণ যাত্রীরা তাড়াহুড়োয় ভুল করে এনবিএসটিসি-র বাস মনে করে উঠে পড়ে বিভ্রান্ত হচ্ছেন। যেভাবে এনবিএসটিসি-র বাসে নকশা আঁকা রয়েছে সেভাবেই ওই বেসরকারি বাসগুলোর গায়েও ঢেউ খেলানো নকশা আঁকা হয়েছে। শুধু তাই নয়, পরিবহণ সংস্থাগুলোর নামও এনবিএসটিসি-র নামের সঙ্গে মিলিয়ে রাখা হচ্ছে। মানুষকে বিভ্রান্ত করে যাত্রী টানার অভিযোগ গুরুত্ব সহকারে খতিয়ে দেখা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন উত্তরবঙ্গ রাষ্ট্রীয় পরিবহণের চেয়ারম্যান সৌরভ চক্রবর্তী। তিনি বলেন, ‘‘যাত্রীদের বিভ্রান্ত করার অভিযোগ পেয়েছি। প্রয়োজনে আইনি পদক্ষেপ করা হবে।’’
নতুন কলেবরে উত্তরবঙ্গ রাষ্ট্রীয় পরিবহণের অধীনে উত্তরের রাস্তায় নেমেছে শতাধিক বাস। জওহরলাল নেহরু ন্যাশনাল আরবান অ্যান্ড রুরাল মিশনের ( জেএনএনইউআরএম) ঝাঁ চকচকে বাসগুলির সঙ্গে আরও কিছু এনবিএসটিসি-র বাসও রাস্তায় নেমেছে। পুজোর আগে আরও কিছু বাস নামার কথা উত্তরের রাস্তায়। এই বাসগুলো তুলনামূলক আরামদায়ক। ভাড়াও প্রায় সমান। তাই সেগুলো ছেড়ে আর বেসরকারি বাসগুলোতে পারতপক্ষে চড়তে চাইছেন না সাধারণ যাত্রীরা। প্রতিযোগিতায় সরকারি বাসের সঙ্গে পিছিয়ে পড়ে ভাড়া কমিয়ে দিয়েছিলেন বেসরকারি বাস মালিকরা। তাতেও লাভ হয়নি। এই প্রেক্ষিতে যাত্রী টানার জন্য এনবিএসটিসি-র আদলে বাস তৈরি করা হচ্ছে বলে অভিযোগ। সেই অভিযোগ পরোক্ষে মেনেও নিচ্ছেন বাস মালিকরা। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক বাস মালিক বলেন, ‘‘এত দিন বাস চালিয়ে উপার্জন করতাম। এখন সরকারি বাসের দাপটে প্রায় যাত্রী শূন্য বাস নিয়ে যেতে হয়। কোনও নতুন কৌশল তো অবলম্বন করতে হবে। না হলে খাব কী?’’ আর এক বাস মালিক বলেন, ‘‘নিজেদের বাস রং করে আমরা কোনও অপরাধ তো করছি না। এটা নিয়ে অযথা হইচই ব্যাক্তি স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ।’’
বিষয়টিতে প্রচ্ছন্ন প্রশ্রয় রয়েছে বেসরকারি বাস মালিকদের সংগঠনেরও। এক সংগঠনের সম্পাদক প্রণব মানি বলেন, ‘‘কয়েকজন বাস মালিক এমন করছে বলে জানতে পেরেছি। তবে এই ধরনের রং করার মধ্যে কোনও বাধা নেই।’’ দার্জিলিং জেলা পরিবহণ বোর্ডের সদস্য মদন ভট্টাচার্যও রঙে কোনও অসুবিধা দেখছেন না। তবে নাম ভাঙানোর বিষয়ে আপত্তি জানিয়েছেন তিনি। মদনবাবু বলেন, ‘‘নীল-সাদা রং কেউ করতেই পারে। কিন্তু এনবিএসটিসি-র নাম ভাঙিয়ে যাত্রী ওঠানো বরদাস্ত করা হবে না। মুখ্য সচিবকে জানাব।’’
যে যা-ই বলুন না কেন, এই কাজ আইনবিরুদ্ধ বলেই মনে করছেন এনবিএসটিসি-র চেয়ারম্যান। তিনি বলেন, ‘‘আমি ইতিমধ্যে কয়েকটি বেসরকারি বাস মালিক সংগঠনের সঙ্গে কথা বলেছি। তাঁদের বিষয়টি নিয়ে সতর্কও করেছি। দ্রুত রং বদলে না নিলে এনবিএসটিসি-র পক্ষ থেকে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’’
পরে অবশ্য কিছুটা আশ্বস্ত গলায় সৌরভবাবু যোগ করেন, ‘‘নকল করার এই প্রবণতায় প্রমাণ হচ্ছে এনবিএসটিসি-র বাস পরিষেবা কতটা জনপ্রিয় হয়েছে সাধারণের কাছে।’’