চেয়ারম্যান হবেন কি, দোলাচলে উদয়ন গুহ

তাঁকে সামনে রেখে দিনহাটা পুরসভা দখলে রেখেছে বামেরা। কিন্তু, এখন তিনিই দিনহাটা পুরসভার চেয়ারম্যান হবেন কি না তা নিয়ে উদয়ন গুহ নিজেই দোলাচলে পড়েছেন বলে দল সূত্রের খবর। দলের একাংশের মতে, পুরসভার চেয়ারম্যান হলে দিনহাটার মধ্যেই আবদ্ধ হয়ে পড়বেন ভেবে উদয়নবাবু আরও ভাল করে ভাবতে চাইছেন। দলের কয়েকজন জানান, বামেদের রাজ্য রাজনীতিতে তাঁর যথেষ্ট গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে।

Advertisement

নমিতেশ ঘোষ

দিনহাটা শেষ আপডেট: ০৬ মে ২০১৫ ০২:৩৭
Share:

উদয়ন গুহ।—নিজস্ব চিত্র।

তাঁকে সামনে রেখে দিনহাটা পুরসভা দখলে রেখেছে বামেরা। কিন্তু, এখন তিনিই দিনহাটা পুরসভার চেয়ারম্যান হবেন কি না তা নিয়ে উদয়ন গুহ নিজেই দোলাচলে পড়েছেন বলে দল সূত্রের খবর।

Advertisement

দলের একাংশের মতে, পুরসভার চেয়ারম্যান হলে দিনহাটার মধ্যেই আবদ্ধ হয়ে পড়বেন ভেবে উদয়নবাবু আরও ভাল করে ভাবতে চাইছেন। দলের কয়েকজন জানান, বামেদের রাজ্য রাজনীতিতে তাঁর যথেষ্ট গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে। উদয়নবাবু ঘনঘন কলকাতায় যান। সেখানেই থাকেন। কিন্তু দিনহাটার চেয়ারম্যান হলে বারবার কলকাতা যাওয়া নিয়ে সমস্যা হবে। এই নিয়েই চলছে দলের মধ্যে বিতর্ক। তাই উদয়নবাবু চাইছেন দলের মধ্যে আরও একবার আলোচনা। তিনি বলেন, “এখনও কিছু স্থির হয়নি। দলের মধ্যে আলোচনা করে ঠিক করা হবে। মানুষের কথা ভেবেই সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।”

উদয়নের চেয়ারম্যান হওয়া নিয়ে দলের মধ্যে বিতর্ক শুরু হয় পুরসভা ভোটের আগে থেকেই। দিনহাটায় শাসক দল তৃণমূলের শক্তিবৃদ্ধিতে ক্রমশ কোণঠাসা হয়ে পড়া দলকে তুলে আনতে উদয়নবাবুকেই সামনে থেকে লড়াই করতে হবে এমনটাই চেয়েছিলেন কর্মীরা। উদয়নও কর্মীদের সুরেই কথা বলছিলেন। শুধু ফরওয়ার্ড ব্লক নয়, শরিক দল সিপিএমের পক্ষ থেকেও দাবি করা হয়েছিল, উদয়ন ভোটে না দাঁড়ালে এই দুর্গ রক্ষা করা সম্ভব নয়। বাম নেতারা উদয়নবাবুকেই চেয়ারম্যান করা হবে বলে ভোটের আগে ঘোষণা করেন। তার পরেই শুরু হয় বিতর্ক।

Advertisement

দিনহাটা পুরসভার বর্তমানে বিদায়ী চেয়ারম্যানের দায়িত্ব রয়েছেন ফরওয়ার্ড ব্লক নেতা চন্দন ঘোষ। দুই দফায় তিনি দশ বছর চেয়ারে ছিলেন। তাঁর কাজ নিয়ে এলাকার মানুষের মধ্যে ক্ষোভ সেরকম নেই। দলের একটি পক্ষ চাইছিলেন চন্দনবাবুকেই চেয়ারম্যান রাখা হোক। দলের বেশির ভাগ অংশই অবশ্য উদয়নবাবুর পক্ষেই। চন্দনবাবু নিজেও ঘনিষ্টমহলে উদয়নের চেয়ারম্যানে হওয়ার পক্ষেই মত দিয়েছেন। ভোট শেষে পুরসভার ১৬ টি আসনের মধ্যে বামেরা ১৩ টি দখল করে নেওয়ায় সে দাবি আরও জোরদার হয়।

দলীয় সূত্রের খবর, উদয়নবাবু দিনহাটার বিধায়ক। তিনি বছরে একটা বড় সময় কলকাতায় থাকেন। সেখান থেকে তিনি কোচবিহার সহ রাজ্যের রাজনীতিতেও সক্রিয় যোগদান করেন। বিভিন্ন টেলিভিশন চ্যানেলেও তাঁকে বিতর্কে অংশ নিতে দেখা যায়। ভোটের সময়েও কোচবিহার তো বটেই উত্তরবঙ্গ ও দক্ষিণবঙ্গের বহু এলাকাতেই প্রচারে যান। রাজ্যের বাম কর্মীরা উদয়নবাবুকে রাজ্য রাজনীতির একটা মুখ হিসেবেই দেখেন। সেখানে চেয়ারম্যানের দায়িত্ব নিলে সে সব থেকে দূরে থাকতে হবে তাঁকে।

চেয়ারম্যানের দায়িত্ব নেওয়া মানে এলাকার মানুষের প্রতিদিনের কাজের সঙ্গে জড়িয়ে যাওয়া। পুর এলাকার পরিষেবা থেকে শুরু করে মানুষের সুবিধে অসুবিধে সহ নানা বিষয়ে নানা বিষয়ে নজরদারি করতে চেয়ারম্যানকে। উন্নয়নমূলক কাজের তদারকি, কেন্দ্রীয় ও রাজ্যের প্রকল্পের তদারকি সব করতে হয় চেয়ারম্যানকে। একদিন চেয়ারম্যান চেয়ারে না থাকলে নানা অসুবিধে তৈরি হয় পুর এলাকায়। সেক্ষেত্রে উদয়নবাবুকে দিনহাটার মধ্যেই সীমাবদ্ধ হয়ে পড়তে হবে।

দলের কর্মীদের অবশ্য একটা অংশের বক্তব্য, রাজ্যে অন্তত তিরিশটি জায়গায় বিধায়ক পুরসভার চেয়ারম্যানের দায়িত্বে রয়েছেন। সেখানে যখন অসুবিধে হচ্ছে না, উদয়নবাবুরও হবে না। আর বিধায়ক বা চেয়ারম্যানের নানা কাজে মাঝে মধ্যেই কলকাতায় যেতে হয়। সেই সূত্রে রাজ্যের রাজনীতিও তিনি করতে পারবেন। দলের কোচবিহার জেলার এক বাম নেতা বলেন, “আসলে সিদ্ধান্তটা উদয়নবাবুকেই নিতে হবে। তিনি কি পারবেন চেয়ারম্যান দায়িত্ব নিয়ে সব দিক সামলাতে?”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন