জানলার কাচ ভাঙা, শীতে কাঁপছেন রোগী

গায়ে সোয়েটার ও কম্বল চাপিয়েও গোটা রাত ঠান্ডায় ঠক ঠক করে কাঁপছেন তিনি। কারণ, তাঁর পায়ের কাছের জানলার কাচ ভাঙা। আর সেখান দিয়েই হু হু করে ঢুকছে হিমেল হাওয়া। একে শ্বাসকষ্টের রোগী। তায় রাতভরের এই ঠান্ডায় শারিরীক পরিস্থিতি আরও খারাপ হচ্ছে তাঁর।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

মালদহ শেষ আপডেট: ১৫ জানুয়ারি ২০১৮ ০২:০৩
Share:

খোলা: ভাঙা জানলা প্লাস্টিক দিয়ে ঢেকে রাখা। নিজস্ব চিত্র

বুকে ব্যথা ও শ্বাসকষ্ট নিয়ে মালদহ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের মেল মেডিক্যাল এক নম্বর ওয়ার্ডে ভর্তি হয়েছেন মহব্বতপুরের ভুট্টু শেখ। গায়ে সোয়েটার ও কম্বল চাপিয়েও গোটা রাত ঠান্ডায় ঠক ঠক করে কাঁপছেন তিনি। কারণ, তাঁর পায়ের কাছের জানলার কাচ ভাঙা। আর সেখান দিয়েই হু হু করে ঢুকছে হিমেল হাওয়া। একে শ্বাসকষ্টের রোগী। তায় রাতভরের এই ঠান্ডায় শারিরীক পরিস্থিতি আরও খারাপ হচ্ছে তাঁর। শুধু ভুট্টু সাহেবেরই নয়, হাসপাতালের সার্জিক্যাল ওয়ার্ড থেকে শুরু করে প্রসূতি বিভাগ সর্বত্রই ভর্তি থাকা অসংখ্য রোগীকে এমন পরিস্থিতির মুখে পড়তে হচ্ছে।

Advertisement

কোনও ওয়ার্ডে জানালার কাচ ভাঙা, কোথাও দরজার কাচ। রোগীদের পরিজনেরা সেই ভাঙা অংশগুলির কোথাও প্লাস্টিক বা ছেঁড়া শাড়ি ঝুলিয়ে হাওয়া রোখার চেষ্টা করছেন। কিন্তু তাতে লাভ যে হচ্ছে না, এটাতো বলাইবাহুল্য। পরিস্থিতি ভয়াবহ মেল মেডিক্যাল ওয়ার্ডের বারান্দার করিডরে। ওয়ার্ডে রোগীর ভিড়ে ঠাঁই নেই অবস্থা। তাই করিডরে পাতা শয্যায় রয়েছেন অন্তত ২০ থেকে ২৫ জন রোগী। ঠাণ্ডা হাওয়া আটকাতে বারান্দার গ্রিলে পলিথিন ঝুলিয়েছে কর্তৃপক্ষ। কিন্তু তাতে কী? ফাঁকফোকর দিয়ে ঢোকা ঠাণ্ডা হাওয়ায় সেখানে ভর্তি থাকা রোগীরা জুবুথুবু। তাঁদের মধ্যে রয়েছেন শ্বাসকষ্টের রোগীরাও। দিনে যেমন-তেমন, রাতে তাঁদের অবস্থা একেবারেই কাহিল।

ওই করিডরে চিকিত্সাধীন শ্বাসকষ্টের রোগী আজিজুর রহমানের স্ত্রী গোলাপ বিবি বললেন, ‘‘ঠাণ্ডায় বুকে কফ জমায় স্বামীর শ্বাসকষ্ট বেড়ে গিয়েছে মারাত্মকভাবে। তাই হাসপাতালে ভর্তি করতে হয়েছে। কিন্তু এখানকার পরিস্থিতিতো আরও ভয়াবহ।’’ তিনি জানান, বারান্দায় ঢেকে রাখা ত্রিপল ঠাণ্ডা হাওয়া রুখতে পারছে না। রাতে গায়ে দু’টি সোয়েটার ও কম্বল চাপিয়েও ঠাণ্ডায় কাঁপছেন। কাউকে বলে কোনও লাভ হচ্ছে না।

Advertisement

মেল মেডিক্যাল ২ ওয়ার্ডের বারান্দায় ভর্তি রয়েছেন রতন মণ্ডল। তাঁর ছেলে কাঞ্চন মণ্ডলকে এ দিন দেখা গেল বারান্দায় গ্রিলের উপর উঠে ত্রিপল ঠিকঠাক করছেন। কাঞ্চনবাবু বলেন, ‘‘রাতে ওই ত্রিপলের একদিকের বাঁধন খুলে যাওয়ায় অনেকটা অংশ ফাঁকা ছিল। বাবা অসুস্থ। সেখানে উঠে ওই অংশটি আর বাঁধতে পারেননি। ফলে রাতভর সে দিক দিয়ে ঠাণ্ডা হাওয়া হু হু করে ঢুকেছে। রাতে বাবা একেবারেই ঘুমোতে পারেননি। সকালে হাসপাতালে এসে বাবার কাছে শুনে নিজেই উঠে ত্রিপল বাঁধলাম। কিছুটা হলেও তো ঠাণ্ডা হাওয়া আটকাবে।’’

মালদহ মেডিক্যালের সুপার অমিত দাঁ বলেন, ‘‘হাসপাতালের ৭০০ শয্যায় এখন ১১০০ রোগী ভর্তি। যে সব ওয়ার্ডে জানলা বা দরজার কাচ ভাঙা সেগুলি মেরামতের ব্যাপারে আগেই জানিয়েছি। জরুরি ভিত্তিতে সেগুলি মেরামতেরও চেষ্টা করছি।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন