দারিদ্রকে হারাতে ভাওয়াইয়া গাইছেন ভারতী

সারাদিন হাড়ভাঙা খাটনির পরেও ভাওয়াইয়া গান গেয়ে এলাকাবাসীকে আনন্দ দেন দিনমজুর ভারতী বর্মন। শিলিগুড়ির ৪২ নম্বর ওয়ার্ডের বিবেকানন্দনগরের বাসিন্দা ভারতী।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

শিলিগুড়ি শেষ আপডেট: ০৯ মে ২০১৮ ০৩:১২
Share:

শিল্পী: লড়াই করেই চলছে গান। নিজস্ব চিত্র

ঘরে নুন আনতে পান্তা ফুরোয়। তবু গলায় গান অফুরন্ত! উদয়াস্ত খাটনির মাঝে গলাই তাঁর বাঁচার মন্ত্র, সেটিই বাদ্যযন্ত্র! কারণ, তাঁর নিজের কোনও হারমোনিয়াম বা দোতারা নেই!

Advertisement

সারাদিন হাড়ভাঙা খাটনির পরেও ভাওয়াইয়া গান গেয়ে এলাকাবাসীকে আনন্দ দেন দিনমজুর ভারতী বর্মন। শিলিগুড়ির ৪২ নম্বর ওয়ার্ডের বিবেকানন্দনগরের বাসিন্দা ভারতী। ১৪ বছর বয়সেই ভারতীর বিয়ে হয়ে যায়। এক সন্তানের পর স্বামী দ্বিতীয় বিয়ে করে পালিয়ে যায়। যুদ্ধ শুরু হয় ভারতীর। ছেলে বিনোদকে বড় করে তোলার লক্ষ্যে দিনমজুরি শুরু করেন তিনি। কাজের ফাঁকে গুনগুনিয়ে গান গাইতেন। সেই গান শুনে অনেকেই প্রশংসা করতেন। কেউ আবার ডেকে গান গাইতে বলতেন। ধীরে ধীরে এখন ভাওয়াইয়া শিল্পী হিসেবে পরিচিতি পেয়েছেন তিনি। ইতিমধ্যে ভাওয়াইয়া শিল্পী পুলিনচন্দ্র রায়ের কাছ থেকে তালিম নিয়েছেন। গত চার বছর ধরে নানা অনুষ্ঠানে ডাকও পাচ্ছেন তিনি।

গোটা উত্তরবঙ্গ জুড়েই নানা অনুষ্ঠানে গান করেন তিনি। ভারতীর কথায়, ‘‘দিনমজুরের কাজ করে গান গাওয়া কঠিন ব্যাপার। ছেলেটাকেও দেখতে হয়। এখন বড় হলেও ও দৃষ্টিহীন। কোনও কাজ করতে পারে না। আমি গান গাইতে গেলে ওকে দেখাশোনা করার কেউই থাকে না।’’

Advertisement

ভারতীর আবার গান গাওয়ার কোনও সরঞ্জামই নেই। হারমোনিয়াম, দোতারা কিছুই কিনতে পারেননি তিনি। ওঁর সঙ্গীত গুরু পুলিনবাবু বিনা পারিশ্রমিকে শেখান ওঁকে। তিনি বলেন, ‘‘সুর-তাল জ্ঞান চমৎকার বলেই ভারতী দ্রুত উন্নতি করেছে। তাল ছন্দ ভাল হবার সুবাদে,খুব অল্প সময়েই গান শিখেছে ভারতী।’’

স্থানীয় বাসিন্দা পম্পা পাল জানান, তাঁর বাড়িতেই তালিম নিতে যান ভারতী। যতক্ষণ তাঁর অনুশীলন চলে এলাকাবাসী ভিড় জমান তাঁর গান শুনতে। তাঁরা আশা করেন, লোকশিল্পী হিসেবে ভারতী একদিন বড়সড় স্বীকৃতি পাবেনই। সরকারি স্বীকৃতির লক্ষ্যে জেলা তথ্য সংস্কৃতি দফতরে আবেদনের প্রস্তুতিও নিচ্ছেন তাঁরা।

জেলা তথ্য সংস্কৃতি দফতরের এক আধিকারিক জানান, তাঁরা ভারতী দেবীর আবেদন পেলেই বিবেচনা করবেন।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন