প্রতীকী ছবি।
বাড়িতে মণ্ডপ বেঁধে পুজোর জোর প্রস্তুতি চলছে। আজ মঙ্গলবার থেকে তিন রাত্রি ধরে মনসা পুজো। পাড়া পড়িশরাও এসে পেন্নাম ঠুকে যাচ্ছেন, মানত করে যাচ্ছেন দেবীর থানে। তাই মুখ বুজে গত দিন সাতেক শুধু দুধ-কলা খেয়ে যাচ্ছে বাড়ির মেয়ে। কারণ একাদশ শ্রেণির ওই ছাত্রীর উপরেই নাকি ‘ভর’ করেছেন দেবী মনসা। এতটা দেখে মনে হতেই পারে সত্যজিৎ রায়ের ছবি ‘দেবী’র কোনও দৃশ্য।
‘দেবী’তে শ্বশুরের স্বপ্নাদেশে দয়াময়ীর স্বাভাবিক জীবন থমকে গিয়েছিল। একটা সময়ের পরে সে নিজেই নিজেকে দেবী ঠাওরাতে থাকে এবং মুখোমুখি হয় জীবনের চরম ট্র্যাজেডির। রুপোলি পর্দার সঙ্গে অনেকটাই মিলে গিয়েছে জলপাইগুড়ি শহর লাগোয়া ধাপগঞ্জ এলাকার এই মেয়েটির জীবন। সবে মাধ্যমিক পাশ করেছে তিন বিষয়ে লেটার নম্বর নিয়ে। খুব ইচ্ছে, উচ্চ মাধ্যমিক দিয়ে আইন নিয়ে পড়বে। কিন্তু সব আপাতত থমকে। কারণ তার মাকে দেবী মনসা স্বপ্নে আদেশ দিয়েছেন, পুজোর পরে যদি তিনি মেয়ের শরীর ছেড়ে চলে যান, তবেই পড়াশোনা শুরুর কথা ভাবা হবে। না হলে স্কুলে যাওয়া বন্ধ।
সোমবার ধাপগঞ্জের বাড়িতে গিয়ে জানা গেল, বেশ কিছু দিন ধরেই ওই ছাত্রী আমিষ, বিশেষত মাছ খেয়ে সহ্য করতে পারছিল না। ছাত্রীর ঠাকুমার বলেন, ‘‘দেখি মেয়ের গায়ে অনেকটা আঁশের মতো দাগ। বুঝতে পারি শরীরে দেবী এসেছেন।’’ আর ডাক্তার? তাঁর কথায়, ‘‘এটা ডাক্তারদের ব্যাপার নয়।’’ ছাত্রীর মায়ের দাবি, ‘‘কিছু দিন পরে স্বপ্নাদেশ পাই। পুরোটা বলতে পারব না। দেবীর আজ্ঞা নেই। তবে পুজো দিলে তিনি ছেড়ে চলে যাবেন।’’
মাস দুয়েক আগেই দক্ষিণ ২৪ পরগনার ফলতার বনমালীপুরে দুই ভাই-বোনকে সাপে কামড়ানোর পরে বাবা-মা ওঝার কাছে নিয়ে গিয়েছিলেন। মৃত্যু হয় দু’জনেরই। সাপ নিয়ে এমন অন্ধ বিশ্বাসেরই আরও একটি উদাহরণ এই ঘটনা, বলছে স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনগুলি। তাঁদের অনেকেরই দাবি মেয়েটির দ্রুত চিকিৎসা প্রয়োজন। জলপাইগুড়ির একটি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের সদস্য রাজা রাউত দাবি করলেন, ‘‘এই মুহূর্তে ডাক্তার না দেখালে অন্ধবিশ্বাসের বশে খারাপ কিছু হয়ে যেতে পারে।’’ মেয়েটি জানায়, ‘‘মা-ঠাকুমারা বলাবলি করল। তাই সব শুনলাম। আমি কিছু জানি না।’’
মেয়ের শরীরে যদি দেবী স্থায়ী ভাবে থেকে যান তবে তাকে স্কুলেও যেতে দেওয়া হবে না বলে এলাকার প্রবীণেরা নিদান দিয়েছেন। আশপাশের গ্রামের লোকেরা খবর পেয়ে ছাত্রীর সামনে মানত করে যাচ্ছেন। বয়স্ক লোকেরাও পায়ে হাত দিয়ে প্রণাম করছেন। ছাত্রীর পাশে মনসার মূর্তিও থাকবে। মূর্তি গড়ছেন বাড়ির পাশেরই প্রবীণ মৃৎশিল্পী। তিনি বলেন, ‘‘এ সব অনেক সময়ে সত্যিও হয়।’’ জলপাইগুড়ির সদর মহকুমাশাসক রঞ্জন দাস জানান, পদক্ষেপ করা হবে।