অতিরিক্ত পণের দাবি, পুড়িয়ে খুন অন্তঃসত্ত্বাকে

পাঁচ মাসের অন্তঃসত্ত্বাকে বিছানায় বেঁধে পুড়িয়ে মারার অভিযোগ উঠল তাঁর স্বামী ও শ্বশুরের বিরুদ্ধে। ১০ জানুয়ারি পুরাতন মালদহের মুচিয়া পঞ্চায়েতের বাড়ুইপাড়ার ঘটনা। পুলিশ জানিয়েছে, বুধবার ভোরে মালদহ মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালে মৃত্যু হয়েছে সরস্বতী সরকার (২০) নামে ওই তরুণীর।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

মালদহ শেষ আপডেট: ১৫ জানুয়ারি ২০১৫ ০২:২৯
Share:

পাঁচ মাসের অন্তঃসত্ত্বাকে বিছানায় বেঁধে পুড়িয়ে মারার অভিযোগ উঠল তাঁর স্বামী ও শ্বশুরের বিরুদ্ধে। ১০ জানুয়ারি পুরাতন মালদহের মুচিয়া পঞ্চায়েতের বাড়ুইপাড়ার ঘটনা। পুলিশ জানিয়েছে, বুধবার ভোরে মালদহ মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালে মৃত্যু হয়েছে সরস্বতী সরকার (২০) নামে ওই তরুণীর।

Advertisement

মৃতার বাপের বাড়ির লোকেরা ঘটনার দিনই তরুণীর স্বামী নিরয় সরকার ও শ্বশুর নীলকান্ত সরকারের বিরুদ্ধে থানায় খুনের চেষ্টার অভিযোগ করেন। বুধবার তাঁর মৃত্যুর পরে খুনের অভিযোগ দায়ের করা হয়। মালদহের পুলিশ সুপার প্রসূন বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “পণের দাবিতে ওই তরুণীকে খুনের অভিযোগ উঠেছে। অভিযুক্তরা ফেরার। তাঁদের খোঁজে গ্রামে তল্লাশি চালানো হচ্ছে।” মৃতার বৌদি সুলতাদেবীর আরও অভিযোগ, “ননদকে তাঁর শ্বশুর মাঝেমধ্যেই কুপ্রস্তাব দিতেন। তাতে রাজি না হওয়ায় তাকে মারধর করা হতো। লজ্জায় সে কাউকে বলতে পারেনি। আমাকে বলেছিল। আমরা নীলকান্তবাবুর শাস্তি চাই।”

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, আট মাস আগে ইংরেজবাজার থানার ২১ নম্বর ওর্য়াডের হালদারপাড়ার বাসিন্দা ধীরেন সরকারের মেয়ে সরস্বতীর সঙ্গে বিয়ে হয় নিরয় সরকারের। তিন মাস যেতেই তাঁর উপর নির্যাতন শুরু হয়। নীলকান্ত সরস্বতীকে বাপের বাড়ি থেকে টাকা আনার জন্য চাপ দিতেন বলেও অভিযোগ। ১০ জানুয়ারি সকাল সাড়ে ১০টা নাগাদ তরুণীর শোওয়ার ঘরেই তাঁকে বিছানার সঙ্গে বেঁধে গায়ে কেরোসিন ঢেলে আগুন লাগিয়ে দেওয়া হয়। প্রতিবেশীরা ছুটে গেলে অভিযুক্তেরা পালায়। তরুণীকে মালদহ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়। এ দিন ভোরে তাঁর মৃত্যু হয়।

Advertisement

এ দিন সুলতাদেবী মৃতার শ্বশুরের বিরুদ্ধে কুপ্রস্তাব দেওয়ার অভিযোগ তুললেও পুলিশ দাবি করে, লিখিত অভিযোগে তার উল্লেখ ছিল না। হাসপাতালের দাবি, মৃত্যুকালীন জবানবন্দিতেও সরস্বতী ধর্ষণের চেষ্টা বা কুপ্রস্তাবের কথা উল্লেখ করেননি। হাসপাতালের চিকিত্‌সককে জানিয়েছিলেন, তাঁর শ্বশুর তাঁকে কেরোসিন তেল ঢেলে পুড়িয়ে মারার চেষ্টা করেন। পুলিশ সুপার জানান, যে অভিযোগ লিখিত ভাবে মিলেছে, সেই অনুযায়ী পদক্ষেপ করা হয়েছে।

তবে মৃতার পরিবারের দাবি, থানায় অভিযোগ করার সময়ে বিষয়টি জানানো হয়েছিল।

ঘটনার পর থেকে অভিযুক্তেরা ধরা না পড়ায় পুলিশের উপর ক্ষুব্ধ মৃতার পরিবারের লোকজন। মৃতার দাদা বীরেন সরকার বলেন, “আমরা ধারদেনা করে বোনের বিয়ে দিয়েছিলাম। বিয়ের পরে কয়েক মাস কোনও অশান্তি হয়নি। সম্প্রতি ওকে টাকার জন্য চাপ দিচ্ছিল। আমাদের আর্থিক অবস্থা ভাল না। তাই বোন আমাদের ওই বিষয়ে প্রথমে কিছু জানায়নি। পরে জানিয়েছিল, ওর স্বামী মাছের ব্যবসা করার জন্য হাজার দশেক টাকা দাবি করেছে। সে জন্য ওরা বোনকে এ ভাবে মেরে ফেলবে, ভাবিনি।”

ইংরেজবাজার পুরসভার ভাইস চেয়ারম্যান তথা ওই ওর্য়াডের তৃণমূল কাউন্সিলর দুলাল সরকার বলেন, “আমাদের এলাকার একটি মেয়েকে তার শ্বশুরবাড়ির লোকেরা খুন করেছে বলে অভিযোগ উঠেছে। থানায় বলেছি, যাতে অভিযুক্তদের দ্রুত গ্রেফতার করা হয়।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন