অধিগ্রহণ হলেও খোলেনি বান্দাপানি বাগান

অর্থলগ্নি সংস্থা বাগানের দায়িত্ব ছেড়ে চলে যাবার পরে অথৈ জলে পড়েছিলেন ডুয়ার্সের বান্দাপানি চা বাগানের শ্রমিকেরা। মাস চারেক আগে লিজ বাতিল করে সরকার বাগানটি অধিগ্রহণ করলেও কবে নতুন মালিক এসে বাগানের হাল ধরবেন তা এখনও অজানা শ্রমিকদের। প্রভিডেন্ট ফান্ড ও গ্র্যাচুইটির টাকা কবে মিলবে নেই তার দিশাও। এই অবস্থায় হতাশাই সঙ্গী শ্রমিকদের।

Advertisement

নিলয় দাস

বীরপাড়া শেষ আপডেট: ১২ মার্চ ২০১৫ ০২:২২
Share:

বাগানের শ্রমিকদের পাথর ভাঙতে হচ্ছে। ছবি: রাজকুমার মোদক।

অর্থলগ্নি সংস্থা বাগানের দায়িত্ব ছেড়ে চলে যাবার পরে অথৈ জলে পড়েছিলেন ডুয়ার্সের বান্দাপানি চা বাগানের শ্রমিকেরা। মাস চারেক আগে লিজ বাতিল করে সরকার বাগানটি অধিগ্রহণ করলেও কবে নতুন মালিক এসে বাগানের হাল ধরবেন তা এখনও অজানা শ্রমিকদের। প্রভিডেন্ট ফান্ড ও গ্র্যাচুইটির টাকা কবে মিলবে নেই তার দিশাও। এই অবস্থায় হতাশাই সঙ্গী শ্রমিকদের।

Advertisement

প্রায় দু’বছর ধরে পরিত্যক্ত ওই বাগানে ইতিমধ্যেই ৩১ জনের মৃত্যু হয়েছে বলে শ্রমিকদের দাবি। বাগানের শ্রমিকদের বকেয়া প্রভিডেন্ট ফান্ডের সাড়ে তিন কোটি টাকা ও গ্র্যাচুইটির এক কোটি টাকা কবে মিলবে সে বিষয়ে সরকারের তরফে স্পষ্টভাবে কোনও কিছু না জানানোয় অন্ধকারে শ্রমিকেরা।

শ্রমিকেরা জানান, বান্দাপানি চা বাগানের বহু ছাত্র স্কুলছুট হয়ে গিয়েছে। সকাল হলে তারা মা-বাবার সঙ্গে চলে যাচ্ছে ঝোরায় পাথর ভাঙতে নতুবা অন্য কোনও দিনমজুরির সন্ধান করতে। বাগানের এক শ্রমিকের কথায়, “দু’টাকা কিলো দরে যে চাল মেলে তা দিয়ে সারা সপ্তাহ চলে না। আর কতদিন অনুদান নিয়ে আমরা চলব!” এলাকার বাসিন্দা তথা ঝাড়খণ্ড মুক্তি মোর্চার বান্দাপানি পঞ্চায়েতের উপপ্রধান রমেশ ওঁরাওয়ের কথায়, “দেড় হাজার টাকায় কী-ই বা হয়! চার মাস ধরে অধিগ্রহণ করেও সরকার তো কিছু করছে না!”

Advertisement

বাগানের খোলার বিষয়ে দিশা মেলেনি প্রশাসনের কাছেও। উত্তরবঙ্গের শ্রম দফতরের যুগ্ম আধিকারিক মহম্মদ রিজওয়ান বলেন, “বিষয়টি আমাদের নয়, তা দেখছে রাজ্য সরকারের বাণিজ্য দফতর।” আলিপুরদুয়ারের মহকুমা শাসক সমীরণ মণ্ডলের কথায়, “বান্দাপানি বাগান নিয়ে কোনও রকম সিদ্ধান্ত হয়েছে কি না তা এই মুহূর্তে আমার জানা নেই।”

২০১০ সালে শিলিগুড়ির এক অর্থলগ্নি সংস্থা বাগানটি পরিচালনার দায়িত্ব নিয়েছিল। ওই সংস্থা বাগান দেখিয়ে সাধারণ মানুষের কাছ থেকে প্রচুর অর্থ সংগ্রহ করে। তবে সারদা-কাণ্ডের পর এক এক লগ্নি সংস্থা বন্ধ হবার সঙ্গে সঙ্গেই এই সংস্থার অফিসও বন্ধ হয়ে যায়।

২০১৩ সালের জুলাই মাসে ১২০০ জন শ্রমিকের তিন মাসের বেতন বকেয়া রেখে রাতারাতি বাগান ছেড়ে চলে যায় কর্তৃপক্ষ। সে সময় থেকে চরম দুর্দশার মধ্যে দিন যাপন করছেন শ্রমিকেরা। বাগান মালিকদের সংগঠন ইন্ডিয়ান টি প্ল্যান্টার্স অ্যসোসিয়েশনের মুখ্য উপদেষ্টা অমিতাংশু চক্রবর্তীর কথায়, “ওই সংস্থা সাধারণ মানুষের থেকে অর্থ সংগ্রহ করত কি না জানি না, তবে বাগান চালানোর মতো আর্থিক ক্ষমতা না থাকায় তাঁরা বাগানটি বন্ধ করতে বাধ্য হন। ওই সংস্থার এক কর্তার সঙ্গে যোগাযোগ করা হলেও তিনি ফোন ধরেননি।

শ্রমিকেরা জানান, অপারেটিং ম্যানেজিং কমিটি গড়ে অন্য সব বন্ধ বাগানে কাঁচা পাতা বিক্রি করে শ্রমিকেরা সামান্য আয় করে থাকলেও বান্দাপানি বাগানে সেই কমিটি গঠন করা হয়নি। মাসিক দেড় হাজার টাকা ভাতা-সহ অন্ত্যোদয় যোজনার চাল ও সপ্তাহে মেডিক্যাল ক্যাম্প ছাড়া কোনও সুবিধা পাচ্ছেন না শ্রমিকেরা। বহু শ্রমিক সংসার চালাতে ভুটানের খাদানে পাথর ভেঙে কোনও মতে দিন গুজরান করছেন।

এ দিকে দ্রুত বাগান চালু করা না হলে বড় ধরনের আন্দোলনে নামার হুমকি দিয়েছে আর এস পি-সহ একাধিক শ্রমিক সংগঠন। দলের শ্রমিক নেতা গোপাল প্রধানের অভিযোগ, “মোট ৩১ জন শ্রমিক এতদিনে মারা গিয়েছেন। সেখানে চার মাস আগে অধিগ্রহণ করা হলেও কেন রাজ্য সরকার চুপ করে বসে রয়েছে তা বুঝতে পারছি না।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন