কলেজের সামনে ছাত্র পরিষদের বিক্ষোভ। —নিজস্ব চিত্র।
অনলাইন পদ্ধতিতে ভর্তি হতে গিয়ে পড়ুয়াদের নাজেহাল হতে হচ্ছে বলে অভিযোগ তুলে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ ও শিক্ষকদের কলেজের ভিতরে আটকে তালা ঝুলিয়ে দিল ছাত্র পরিষদ। মূল ফটকে তালা ঝুলিয়ে ছাত্র পরিষদের অবস্থান বিক্ষোভের জেরে সন্ধে পর্যন্ত ৭ ঘন্টা কলেজেই আটকে থাকলেন অধ্যক্ষ, শিক্ষক ও শিক্ষাকর্মীরা।
মালদহের চাঁচল কলেজে মঙ্গলবার দুপুর ১২টা থেকে অবস্থান বিক্ষোভ চলার পর সন্ধেয় বিশ্ববিদ্যালয়কে লিখিতভাবে সমস্যার কথা জানানো হবে বলে কলেজ কর্তৃপক্ষ আশ্বাস দেওয়ার পর কলেজের তালা খোলা হয়। দু’দিনের মধ্যে সমস্যা না মিটলে অনির্দিষ্টকালের জন্য কলেজে তালা ঝুলিয়ে দেওয়া হবে বলে হুমকি দিয়েছে ছাত্র পরিষদ। গৌড়বঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য় গোপাল মিশ্র বলেন, ‘‘অনলাইনে কি সমস্যা হচ্ছে তা জেনে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে। ছেলেময়েদের কোনও ক্ষতি যাতে না হয় সেইভাবেই ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’’
ছাত্র পরিষদের বক্তব্য এবার থেকেই অনলাইনে ভর্তি প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। ফর্ম পূরণ করার পর তালিকাও অনলাইনেই দেওয়া হয়েছে। ছাত্রছাত্রীদের সাইবার ক্যাফেতে গিয়েই আবেদন করতে হচ্ছে। কিন্তু চাঁচল মহকুমায় সাইবার ক্যাফের সংখ্যা প্রয়োজনের তুলনায় খুব কম। যে ক’টি রয়েছে সেখানেও দক্ষতা না থাকায় অনেকেই ঠিক মতো ফর্ম পূরণ করতে পারছেননা। আবার অনলাইনে যে তথ্য আপলোড করা রয়েছে তা ত্রুটিপূর্ণ বলে পাল্টা অভিযোগ তুলেছে সাইবার ক্যাফেগুলি। আর ওই চাপানউতোরে তালিকায় নাম থাকা পড়ুয়াদের নাজেহাল হতে হচ্ছে বলে অভিযোগ।
কলেজ সূত্রে জানা গিয়েছে, যাদের নাম অনার্সে ভর্তির তালিকায় রয়েছে তাঁদের পাশ কোর্সে ভর্তি হতে পারার কথা নয়। আবার তপশিলি জাতি বা উপজাতি কোটায় যাদের তালিকায় নাম রয়েছে তাদের সাধারণ বিভাগে ভর্তি হতে পারার কথা নয়। কিন্তু অনেক ক্ষেত্রেই দেখা যাচ্ছে কোনও ছাত্র অনার্সে ভর্তি প্রক্রিয়া সম্পূর্ণ হওয়ার পর দেখা যাচ্ছে যে তার ভর্তি হয়েছে পাস কোর্সে। আবার ভর্তির পর যে টাকা সে দিয়েছে, প্রমাণ স্বরূপ তার কাছে সেই রসিদ থাকার কথা। কিন্তু ভর্তি হওয়ার পর সেই রসিদ বের না হওয়ায় বিপাকে পড়তে হচ্ছে অনেককেই। এছাড়া অনলাইনে ফর্ম পূরণ করার পর অনেকের নথিও মিলছে না বলেও অভিযোগ উঠেছে।
উচ্চমাধ্যমিকে ৪৩৮ পাওয়া এক ছাত্র ইংরেজি অনার্সে সুযোগ পেয়েছেন। তিনি বলেন, ‘‘ভর্তি হওয়ার পর দেখি পাস কোর্সে আমার নাম উঠেছে। ছুটোছুটি করেও সমস্যা মেটেনি।’’ একই অভিজ্ঞতা মিনু পরভিন ও অরিজিত সরকারদের। তারা বলেন, ‘‘ভেবেছিলাম অনলাইন হওয়ায় সমস্যা মিটবে। কিন্তু তালিকায় নাম উঠলেও ভর্তি হতে পারছি না।’’
আর ওই পরিস্থিতিতে পাস কোর্সের পাশাপাশি অনার্সেও প্রচুর আসন খালি পড়ে রয়েছে বলে কলেজ সূত্রেই জানা গিয়েছে। বাংলা অনার্সে ৫২টি, সংস্কৃতে ৩৭টি, ইতিহাসে ৩০টি, দর্শনে ৪৫টি, অ্যাকাউন্টেন্সিতে ১১৩টি, অঙ্কে ৩০টি, রাষ্ট্রবিজ্ঞানে ৫৫টি, ইংরেজিতে ৪২টি আসন খালি পড়ে রয়েছে। একইভাবে পাস কোর্সেও প্রচুর আসন খালি পড়ে রয়েছে। কেননা ওই সমস্যা দেখা দেওয়ায় ভর্তি হতে সাহস করছেন না পড়ুয়ারা।
ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ তপেশ লাহিড়ী বলেন, ‘‘সমস্যার কথা বিশ্ববিদ্যালয়কে জানানো হচ্ছে। ওরা যা সিদ্ধান্ত নেওয়ার তা নেবে।’’
কলেজের ছাত্র সংসদের সাধারণ সম্পাদক মহম্মদ ফিরদৌস ইসলাম বলেন, ‘‘অনলাইন বা অফলাইন যেভাবেই হোক তালিকায় থাকা প্রত্যেকে যাতে ভর্তি হতে পারে সেই ব্যবস্থা করতে হবে। দূরদূরান্ত থেকে প্রতিদিন ছাত্রছাত্রীরা ভর্তি হতে এসে নাজেহাল হচ্ছে। দু’দিন সময় দিয়েছি। পড়ুয়ারা বঞ্চিত হলে কলেজে তালা ঝুলিয়ে দেওয়া হবে।’’