ইস্তফাপত্র পাঠালেন ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ

অনলাইনে ভর্তির বিরোধিতা ছাত্র পরিষদের

স্নাতক স্তরে অনলাইনের মাধ্যমে ভর্তি প্রক্রিয়া চালুর কথা ঘোষণা করেছিল রাজ্য সরকার। রাজ্য সরকার পরে জানিয়েছে, ইনলাইনের বদলে সাবেক হাতে হাতে ফর্ম জমা দিয়ে ভর্তির প্রক্রিয়াও চালু থাকবে। কিন্তু যে কলেজে আগের বছরই অনলাইনে ভর্তি হয়েছে, সেই রায়গঞ্জ ইউনিভার্সিটি কলেজে এ বার সাবেক পদ্ধতিতে ভর্তির দাবি করল ছাত্র পরিষদ।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

রায়গঞ্জ শেষ আপডেট: ০৪ জুন ২০১৪ ০১:১৯
Share:

স্নাতক স্তরে অনলাইনের মাধ্যমে ভর্তি প্রক্রিয়া চালুর কথা ঘোষণা করেছিল রাজ্য সরকার। রাজ্য সরকার পরে জানিয়েছে, ইনলাইনের বদলে সাবেক হাতে হাতে ফর্ম জমা দিয়ে ভর্তির প্রক্রিয়াও চালু থাকবে। কিন্তু যে কলেজে আগের বছরই অনলাইনে ভর্তি হয়েছে, সেই রায়গঞ্জ ইউনিভার্সিটি কলেজে এ বার সাবেক পদ্ধতিতে ভর্তির দাবি করল ছাত্র পরিষদ। তিন দিন ধরে তারা এই নিয়ে টানা আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছে। মঙ্গলবার কলেজে স্মারকলিপিও দেয় তারা। তারপরেই ওই কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ উত্তম রায় ই-মেলের মাধ্যমে উত্তরবঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য সোমনাথ ঘোষের কাছে এ দিনই তাঁর ইস্তফাপত্র পাঠিয়ে দিয়েছেন। তাঁর দাবি, “চাপ সহ্য করতে না পেরে অসুস্থ বোধ করছি।” সোমনাথবাবু জানিয়েছেন, ওই ইস্তফাপত্র খতিয়ে দেখে উপযুক্ত পদক্ষেপ করা হবে। তবে সেই সঙ্গেই উপাচার্যের বক্তব্য, “সব কলেজকেই সরকারি নির্দেশ মেনে আগামী ১০ জুনের মধ্যে ভর্তি প্রক্রিয়া শুরু করে ২৬ জুনের মধ্যে মেধা তালিকা প্রকাশ করতে হবে। গত বছর যদি রায়গঞ্জ ইউনিভার্সিটি কলেজ কর্তৃপক্ষ সুষ্ঠু ভাবে অনলাইনের মাধ্যমে ভর্তি প্রক্রিয়া শেষ করতে পারেন, তা হলে এবছর অনলাইনের মাধ্যমে ভর্তি প্রক্রিয়া শুরু করার ক্ষেত্রে অসুবিধা হওয়ার তো কথা নয়।”

Advertisement

স্থানীয় ছাত্র পরিষদ নেতৃত্বের দাবি, অনলাইনে ভর্তির প্রক্রিয়া ত্রুটিমুক্ত নয়। এই কলেজের ছাত্র সংসদ ছাত্র পরিষদের দখলেই। ছাত্র সংসদের সাধারণ সম্পাদক শুভাশিস সাহার দাবি, অনলাইনের মাধ্যমে ভর্তি প্রক্রিয়া চালু রাখার মতো প্রযুক্তিগত পরিকাঠামো কলেজ কর্তৃপক্ষ গড়তে পারেননি। তাঁর কথায়, কলেজের পরিকাঠামোগত সমস্যা ছাড়াও আরও অসুবিধা রয়েছে। যেমন, পড়ুয়াদের একাংশ কম্পিউটার শিক্ষা বা অনলাইন সম্পর্কে অবগত না থাকায় গত বছর ভর্তির সময়ে দালালদের খপ্পরে পড়েছিলেন। প্রযুক্তিগত ত্রুটির কারণে অনেকে বেশি নম্বর পেয়েও অনেকে ভর্তির সুযোগ পাননি। অনলাইনে যে কোনও পড়ুয়ার কোনও বিষয়ের নম্বর হেরফের করে স্বজনপোষণ করারও সুযোগ রয়েছে। অনলাইনে মেধা তালিকাও সবার পক্ষে দেখা সম্ভব হয় না। তিনি বলেন, “সেই কারণেই আমরা সাবেক পদ্ধতিতে হাতে হাতে ফর্ম জমা দিয়ে ভর্তির দাবি জানিয়েছি।” তাঁর দাবি, “উত্তমবাবুর উপর আমরা কোনও চাপ সৃষ্টি করিনি।”

কলেজ সূত্রের খবর, ভর্তি প্রক্রিয়া চূড়ান্ত করতে এদিন দুপুরে কলেজ কর্তৃপক্ষ বৈঠকে বসেন। ওই বৈঠকে ডাকা হয়েছিল কলেজের ছাত্র সংসদের সাধারণ সম্পাদক শুভাশিসবাবুকে। অভিযোগ, ওই বৈঠকে শুভাশিসবাবু ছাত্র পরিষদের কয়েকজন নেতাকে জোর করে ঢোকানোর চেষ্টা করলে কলেজ কর্তৃপক্ষের সঙ্গে তাঁর বচসা বেঁধে যায়। এরপরেই ছাত্র পরিষদের তরফে বৈঠক ভন্ডুল করে সাবেক পদ্ধতিতে ভর্তি প্রক্রিয়া শুরু করার দাবিতে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ উত্তমবাবুর কাছে স্মারকলিপি জমা দেওয়া হয়। কলেজে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ায় মোতায়েন করা হয় বিরাট পুলিশ বাহিনী। এরই মধ্যে স্মারকলিপি হাতে পেয়ে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ উত্তমবাবু দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি চেয়ে উপাচার্যের কাছে ইস্তফাপত্র পাঠান।

Advertisement

কলেজের টিচার্স কাউন্সিলের সম্পাদক তাপস মোহান্ত ও শিক্ষাকর্মী সমিতির সম্পাদক তপন নাগ জানান, গত ২১ মে থেকে কলেজের স্নাতক স্তরের তিনটি বর্ষের পড়ুয়াদের পরীক্ষা শুরু হয়েছে। যা চলবে আগামী ১১ জুলাই পর্যন্ত। তাঁদের বক্তব্য, “এই পরিস্থিতিতে শিক্ষক ও শিক্ষাকর্মীরা পরীক্ষা পরিচালন কাজে ব্যস্ত রয়েছেন। সেই কারণে তাঁদের পক্ষে সাবেক পদ্ধতির মাধ্যমে ভর্তি প্রক্রিয়া চালু রাখা সম্ভব হবে না।”

এদিন উত্তমবাবু উপাচার্যের কাছে ইস্তফাপত্র পাঠানোর পরে কলেজের বাংলার শিক্ষক মিলন রায়কে লিখিত ভাবে পরীক্ষার সেন্টার ইনচার্জের দায়িত্ব দিয়ে অনির্দিষ্টকালের জন্য কলেজে আসবেন না বলে জানিয়ে দিয়েছেন। সেই সঙ্গে পরবর্তী বিজ্ঞপ্তি জারি না হওয়া পর্যন্ত তিনি কলেজের সমস্ত রকম আর্থিক লেনদেন ও পরীক্ষা বাদে সাধারণ কাজ বন্ধ রাখার ব্যাপারেও একটি বিজ্ঞপ্তি জারি করেছেন। উত্তমবাবু বলেন, “গত বছর সুষ্ঠু ভাবে অনলাইনের মাধ্যমে স্নাতক স্তরে ভর্তি প্রক্রিয়া শেষ হয়। এ বছরও আমরা অনলাইনের মাধ্যমে ভর্তির প্রক্রিয়া শুরু করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম। কিন্তু ছাত্র সংসদ সাবেক পদ্ধতির মাধ্যমে ভর্তির দাবি করেছে। আমাদের পক্ষে সেই দাবি মানা সম্ভব নয়। চাপ সহ্য করতে না পেরে আমি অসুস্থ বোধ করছি। তাই দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি চেয়ে উপাচার্যের কাছে ইস্তফাপত্র পাঠালাম।”

এই বিষয়ে রায়গঞ্জের কংগ্রেস বিধায়ক মোহিত সেনগুপ্ত কোনও মন্তব্য করতে চাননি। তবে তৃণমূলের জেলা সভাপতি তথা রাজ্যের পরিষদীয় সচিব অমল আচার্য জানান, অনলাইনের মাধ্যমেই ভর্তি প্রক্রিয়া স্বচ্ছ ভাবে পরিচালিত হয়। সে জন্য রাজ্য সরকার বলেছে, পরিকাঠামো থাকলে যে কোনও কলেজ অনলাইনের মাধ্যমে ভর্তি নিতে পারে। তবে সার্বিক পরিকাঠামোর অভাবে রাজ্য সরকার সাবেক পদ্ধতির পক্ষেও মত দিয়েছে। তাঁর কথায়, “অনলাইনের মাধ্যমে ভর্তি প্রক্রিয়া শুরু হলে ছাত্র পরিষদ কলেজ কর্তৃপক্ষকে চাপ সৃষ্টি করে নিজেদের লোককে ভর্তি করতে পারবে না বলেই সাবেক পদ্ধতির মাধ্যমে ভর্তির দাবি তুলছে।” রায়গঞ্জের সিপিএম সাংসদ মহম্মদ সেলিম জানান, মেধার ভিত্তিতে স্বচ্ছ ভাবে ভর্তির স্বার্থে তিনিও অনলাইনের মাধ্যমে ভর্তির পক্ষে। তিনি বলেন, ভর্তি নিয়ে জটিলতায় গোটা রাজ্যের উচ্চমাধ্যমিক উত্তীর্ণ পড়ুয়া ও তাঁদের অভিভাবকেরা দুশ্চিন্তায় পড়েছেন। তিনি বলেন, “রাজ্য সরকার ও সমস্ত রাজনৈতিক দলের কাছে আমার অনুরোধ, স্নাতক স্তরে সুষ্ঠু ভাবে ভর্তি প্রক্রিয়া শেষ করতে সবাই এগিয়ে আসুন।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন