জয়গাঁতে পুলিশি টহল দেখা গিয়েছে সোমবারেও। —নিজস্ব চিত্র।
দিনের পর দিন অপরাধমূলক ঘটনা ঘটলেও পুলিশ তা রুখতে উদ্যোগী হয়নি বলে অভিযোগে ফুঁসছেন সীমান্ত শহর জায়গাঁর বাসিন্দারা। সাধারণ বাসিন্দারা তো বটেই, ব্যবসায়ীরাও ক্ষুব্ধ। তাঁদের বক্তব্য, আতঙ্কের মধ্যে থাকতে হচ্ছে। শনিবার এক ঠিকাদারকে খুনের পরে সেই ক্ষোভেরই বহিঃপ্রকাশ হয়েছে বলে ব্যবসায়ী ও বাসিন্দাদের অনেকেরই দাবি। পুলিশ জানিয়েছে, ওই দিনের হামলায় জড়িত সন্দেহে ৪ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তবে ওই ঠিকাদারকে খুনের ঘটনায় অভিযুক্তদের কাউকে পুলিশ এখনও ধরতে পারেনি। তাতেও ক্ষোভ জমছে।
তবে উত্তেজিত হয়ে পুলিশের জিপে ভাঙচুর, আগুন ধরিয়ে দেওয়া কিংবা বোতল ছুড়ে মারার ঘটনা ঠিক হয়নি বলে মানছেন স্থানীয় বাসিন্দাদের অনেকেই। তবে একটা ব্যাপারে এলাকার মানুষজন ও ব্যবসায়ীরা প্রায় সকলেই একমত, পুলিশ দুষ্কৃতী রুখতে সক্রিয় থাকলে এমন ক্ষোভ জমত না। সেই সঙ্গে পুলিশের একাংশ নানা বেআইনি লেনদেনে যুক্ত কি না, তা নিয়েও তদন্তের দাবি উঠেছে জায়গাঁয়।
সোমবার রাজ্য পুলিশের উত্তরবঙ্গের আইজি জাভেদ শামিম জয়গাঁয় গিয়ে পরিস্থিতি খতিয়ে দেখেন। পরে আইজি বলেন, “পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। ব্যবসায়িক কোনও কারণে খুনের ঘটনা ঘটেনি বলে প্রাথমিক ভাবে জানা গিয়েছে। তদন্ত ঠিক পথেই এগোচ্ছে। শীঘ্রই খুনের কিনারা হবে।”
স্থানীয় বাসিন্দারা অবশ্য জানিয়েছেন, এলাকায় দুষ্কৃতীদের তাণ্ডব নতুন কিছু নয়। ঝর্নাবস্তি লাগোয়া কিছুটা এলাকা সন্ধ্যা নামলেই দুষ্কৃতীদের দখলে চলে যায়। মদ, জুয়া, মাদকের কারবার জাঁকিয়ে চলে। ছিনতাইকারীদের দৌরাত্ম্য বেড়ে যায় বলে অভিযোগ। গত কয়েক মাসে একাধিকবার ওই এলাকায় রাতে পথচারীদের থেকে ব্যাগ ছিনতাইয়ের অভিযোগও উঠেছে। কিন্তু পুলিশ বিষয়টিকে গুরত্ব দিতে চায়নি বলেও অভিযোগ।
গোর্খা জনমুক্তি মোর্চার ডুয়ার্স শাখার সদস্য সুরেশ ঠাকুরি বলেন, “জয়গাঁ এলাকায় মাঝে মধ্যেই ছিনতাই ও অপরাধমূলক ঘটনা ঘটছে। বিষয়টি নিয়ে দু’সপ্তাহ আগে জয়গাঁ থানায় স্মারকলিপি দেওয়া হয়েছে। তবু পুলিশ পদক্ষেপ করেনি। কিছুদিন আগে রাতে ভুটানের এক নাগরিককে ধারাল অস্ত্র দেখিয়ে সমস্ত কিছু ছিনতাই করা হয়েছে।” জয়গাঁ-২ গ্রামপঞ্চায়েতের তৃণমূলের প্রধান পাশাং ডেকি শেরপা বলেন, “অস্ত্র দেখিয়ে ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটছে। বাসিন্দারা বিষয়টি পুলিশকে জানালেও কোনও লাভ হয়নি।”
জয়গাঁ মার্চেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক রামাশঙ্কর গুপ্তাও ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন পুলিশের ভূমিকায়। তিনি বলেন, “জয়গাঁয় পথবাতি থাকলেও তা জ্বলে না। সন্ধ্যা নামলেই রাস্তায় অন্ধকার নেমে আসে। জয়গায়ঁ অপরাধ মূলক ঘটনা বাড়ছে। কিছু হলেই বাসিন্দারা বন্ধ ডাকছেন। দোকান বন্ধ করে দিচ্ছেন। এতে ব্যবসায়ীরা চরম অসুবিধেয় পড়েছেন। আমরা সংগঠনের জরুরি সভা ডাকছি। বিষয়টি নিয়ে পুলিশকে সক্রিয় হতে ফের অনুরোধ করব।”
জয়গাঁ উন্নয়ন পর্যদের চেয়ারম্যান তথা কালচিনির বিধায়ক উইলসন চম্প্রমারি জানান, পথবাতির বিলের সমস্যা রয়েছে। সেজন্য বিজ্ঞাপনদাতা সংস্থার সঙ্গে কথা চলছে বলে তিনি জানিয়েছেন। তাঁর কথায়, “জয়গাঁ শহরে বিভিন্ন জায়গায় বিজ্ঞাপন নেওয়া হবে। সেই টাকা থেকে বিদুতের বিল মেটানোর চেষ্টা হবে।” আদিবাসী বিকাশ পরিষদের হাসিমারা-জয়গাঁ আঞ্চলিক কমিটির সম্পাদক রঘু মিঞ্জ জানান, অবিলম্বে দক্ষ অফিসার ও বাড়তি পুলিশ ফোর্স মোতায়েন করে জয়গাঁর হাল ফেরানো দরকার। তৃণমূলের আলিপুরদুয়ারের জেলা সভাপতি সৌরভ চক্রবর্তী বলেন, “আলিপুরদুয়ার নতুন জেলা হয়েছে। জয়গাঁ শহরে পর্যাপ্ত পুলিশ মোতায়নের জন্য ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে বলা হয়েছে।” আলিপুরদুয়ারের সাংসদ দশরথ তিরকে জানান, জয়গাঁর সমস্যা নিয়ে আগামী দিনে জয়গাঁ উন্নয়ন পর্ষদের কর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করব।