আবহাওয়ার খামখেয়ালিপনায় ক্ষতির মুখে কোচবিহারের চাষিরা। জলের অভাবে ইতিমধ্যে মার খেয়েছে জেলার পাট চাষ। আবার ফলনের শুরুতে দীর্ঘ অনাবৃষ্টি, ধান কাটার সময় অতিবৃষ্টিতে ক্ষতিগ্রস্ত হন বোরো ধান চাষিরাও। জলের অভাবে পাটের বিকল্প হিসেবে ভুট্টা চাষকে বেছে নিয়েছেন অনেক কৃষক। টানা বৃষ্টিতে ভুট্টা শুকোতে গিয়ে হিমসিম খেতে হয়েছে তাদের।
গত কয়েক বছর ধরেই পাট চাষে অনীহা ক্রমশ বাড়ছে জেলার চাষিদের। গত বছর ৪২ হাজার হেক্টর জমিতে পাট চাষ হয়েছিল। এবারে তা কমে দাঁড়িয়েছে ৩৬ হাজার ৮৫০ হেক্টরে। জেলা কৃষি আধিকারিক অসিত পাত্র বলেন, “পাট পচানোর জন্য জল প্রয়োজন। চাষিরা তা পাচ্ছেন না, ফলে পাটের মান ভাল হচ্ছে না।” এর জেরে এক ধাক্কায় পাঁচ হাজার হেক্টরের বেশি চাষের এলাকা কমেছে কোচবিহারে।
কোচবিহারে প্রতি বছরই বোরো চাষের এলাকা বাড়ছে। গত বছর কোচবিহার জেলায় ৪১ হাজার হেক্টর জমিতে বোরো চাষ হয়। এ বারে সেই জমির পরিমাণ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৪৪ হাজার ৯৫০ হেক্টর। ফলনের শুরুতে অনাবৃষ্টি ও ধান কাটার সময় অতিবৃষ্টির জেরে উৎপাদনে ক্ষতির মুখে পড়তে হয়েছে বলে কৃষকদের অভিযোগ। অন্য বছরগুলিতে যেখানে বিঘা প্রতি ১৮ থেকে ২২ মন পর্যন্ত ধান পাওয়া গিয়েছে, সেখানে এ বারে বেশ কিছু এলাকায় ধানের উৎপাদন ১০ থেকে ১৫ মনের মধ্যে বলে দাবি চাষিদের। ঝাড়াইয়ের সময় বৃষ্টি হওয়ায় অনেক ধান নষ্ট হয়েছে বলে অভিযোগ।
গোসানিমারির কৃষক পুলিন বর্মন তিন বিঘা জমিতে বোরো ধান চাষ করেছিলেন। বিঘা প্রতি ১০ থেকে ১১ মন ধান হয়েছে। তিনি বলেন, “বৃষ্টি সময়মতো না হওয়ায় উৎপাদন কম হয়েছে।” আবার দিনহাটার কৃষক সাবু বর্মন বলেন, “ধান কাটার সময় বৃষ্টি শুরু হওয়ায়, ফসল শুকানো যায়নি। অনেক ধান নষ্ট হয়েছে।” তবে জেলার কৃষি আধিকারিক জানালেন, “নানা কারণে পাট চাষের পরিমাণ খানিকটা কমেছে। বোরো ধান চাষে বড়সড় কোনও সমস্যা না হলেও, চাষিদের ধান ঝাড়াইয়ের সময় শুকোতে একটু সমস্যা হয়েছিল। তবে বোরো ধান চাষের এলাকা বেড়েছে। হেক্টর প্রতি কেমন উৎপাদন হয়েছে তা খতিয়ে দেখার প্রক্রিয়াও শুরু হয়েছে।”
বোরো চাষে প্রচুর পরিমাণে জলের প্রয়োজন হয়। চাষের সময় বৃষ্টি না হলে জেনারেটর, পাম্পসেট দিয়ে জল দিতে হয়। ফলে উৎপাদন খরচও বেড়ে যায়। অনেক কৃষকই ব্যয় বহন করতে পারেন না বলে তাঁরা ক্ষতির মুখে পড়ে যান। পাট চাষের ক্ষেত্রেও সমস্যা অনেকটা একই ধরনের বলে কৃষি আধিকারিকরা জানিয়েছেন। জেলা কৃষি আধিকারিক বলেন, “পাট পচানোর জন্য অনেক জল প্রয়োজন। চাষিরা তা পাচ্ছেন না ফলে পাটের মান ভাল হচ্ছে না।” কৃষি দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, এই অবস্থায় পাটের জায়গা দখল করে নিচ্ছে ভুট্টা। গত বছর জেলায় ভুট্টা চাষ হয়েছিল ১০ হাজার হেক্টর জমিতে। এবারে ১১৮০০ হেক্টরে। বৃষ্টির কারণে সমস্যা হয়েছে ভুট্টা শুকাতেও। তাতে ক্ষতিও হচ্ছে।