ইচ্ছুক কর্মীদের স্বেচ্ছাবসর দেবে নিগম

রাজ্য সরকার ‘না করে’ দেওয়ায় নিগমের অব্যবহৃত সম্পত্তি থেকে আয় করেই ইচ্ছুক কর্মীদের স্বেচ্ছাবসর দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিল উত্তরবঙ্গ রাষ্ট্রীয় পরিবহণ নিগম (এনবিএসটিসি) কর্তৃপক্ষ। সোমবার দুপুরে শিলিগুড়ির উত্তরকন্যায় এনবিএসটিসি-র বোর্ড মিটিঙে ওই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

শিলিগুড়ি শেষ আপডেট: ০৩ মার্চ ২০১৫ ০২:১৩
Share:

রাজ্য সরকার ‘না করে’ দেওয়ায় নিগমের অব্যবহৃত সম্পত্তি থেকে আয় করেই ইচ্ছুক কর্মীদের স্বেচ্ছাবসর দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিল উত্তরবঙ্গ রাষ্ট্রীয় পরিবহণ নিগম (এনবিএসটিসি) কর্তৃপক্ষ। সোমবার দুপুরে শিলিগুড়ির উত্তরকন্যায় এনবিএসটিসি-র বোর্ড মিটিঙে ওই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। নিগম সূত্রের খবর, গত ১১ জানুয়ারি সংস্থার বোর্ড মিটিঙে স্বেচ্ছাবসরের সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত হয়। দ্বিতীয় দফায় সংস্থার স্বেচ্ছাবসেরের জন্য প্রয়োজন প্রায় ৫০ কোটি টাকা। বিষয়টি নিয়ে রাজ্য সরকার এবং পরিবহণ দফতরের দ্বারস্থ হয় নিগম কর্তৃপক্ষ। কিন্তু রাজ্য সরকার আর টাকা দেওয়া যাবে না বলায় এদিনের নিজস্ব তহবিল গড়ার সিদ্ধান্তটি নেওয়া হয়।

Advertisement

নিগমের চেয়ারম্যান তথা উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী গৌতম দেব বলেন, “প্রথম দফায় স্বেচ্ছাবসের টাকা রাজ্য সরকার দিয়েছে। কিন্তু দ্বিতীয় দফায় সরকার এই বাবদ আর টাকা দিতে পারছে না। নিজেদের আয় থেকেই আমাদের টাকা আয় করে স্বেচ্ছাবসর প্রকল্প চালাতে হবে।” চেয়ারম্যান জানান, সংস্থার সমস্ত ডিভিশন মিলিয়ে প্রচুর সম্পত্তি রয়েছে। সেগুলি কীভাবে বাণিজ্যিকভাবে ব্যবহার করা যায়, তা নিয়ে সমীক্ষা শুরু হচ্ছে। এর মাধ্যমেই তহবিল গড়া হবে।

সংস্থা সূত্রের খবর, প্রথম দফায় স্বেচ্ছাবসর প্রকল্পে ৫৮৯ জন আবেদন করেছিলেন। সেখানে ৫৬৭ জনের আবেদন মঞ্জুর করা হয়। এরজন্য সরকারের প্রায় সাড়ে ৮৬ কোটি টাকা খরচ হয়েছে। দ্বিতীয় দফায় ইচ্ছুক ১২৩৪ জন আবেদন করেন। তা থেকে ৩৫০ জনকে চিহ্নিত করা হয়েছে। এরজন্য ৫০ কোটি টাকার প্রয়োজন। শারীরিকভাবে অক্ষম এবং কাজের সুযোগ কম এমন কর্মীদের ওই তালিকায় মূলত রাখা হচ্ছে। এবার সংস্থার অব্যবহৃত জমি, ডিপোর অংশ, দফতরের অংশ বাণিজ্যিকভাবে ব্যবহার করে তহবিল গড়ার কথা ঠিক হয়েছে। মূলত দফতর, বাজার, পার্কিং লট, মোবাইল টাওয়ার, এটিএম, হোর্ডিং, পেট্রোল পাম্পের মত সংস্থাকে লিজে দেওয়া যায় কি না তা দেখা হচ্ছে।

Advertisement

জহরলাল নেহেরু আর্বান রিনিউয়াল মিশনের আওতাভুক্ত ১৪০টি বাসের বিমা করানোর কথা আগেই সরকারি শর্ত অনুসারে ঠিক হয়েছিল। এদিনের বৈঠকে প্রথমবার চালক ও কন্ডাক্টরদের বিমা করানোর সিদ্ধান্ত হয়েছে। নিগমের অফিসারেরা জানান, ১২৫৮ জন চালক এবং ১৪৬০ জন কন্ডাক্টরের বিমার জন্য বছরে ১৩ লক্ষ টাকা খরচ হবে। টেন্ডারের মাধ্যমে তা কোনও রাষ্ট্রায়ত্ব বিমা সংস্থার হাতে দায়িত্ব দেওয়া হচ্ছে। চুক্তির ভিত্তিতে নিয়োগ করা কর্মীদের কেউ কর্তব্যরত অবস্থায় মারা গেলে এককালীন সাহায্য হিসাবে ছয়মাসের বেতন, মৃতের পরিবারের হাতে দেওয়া হবে। আর শ্রমিক এবং নিরাপত্তারক্ষীদের বেতন মাসে ৪০০ টাকা করে বাড়ানোর সিদ্ধান্তও হয়েছে। সেই সঙ্গে পুরানো নির্মাণ কাজ এবং বাসের রক্ষণাবেক্ষণের বকেয়া মেটানোর প্রক্রিয়া শুরু করতে বলা হয়েছে।

চেয়ারম্যান জানান, দুই দফায় আরও ৮৮টি নতুন বাস রাস্তায় নামছে। এরমধ্যে ২৮টি আর্বান রিনিউয়াল মিশনের আওতাভুক্ত। এদিনই সকালে বোর্ড মিটিঙের আগে শিলিগুড়ি এবং জলপাইগুড়ির বিভিন্ন রুটের আরও ২৩টি বাসের উদ্বোধন হয়েছে। শিলিগুড়িকে কেন্দ্র করে কলকাতাগামী তিনটি বিশেষ ভলভো বাসও নামানো হচ্ছে। এ ছাড়া পুরানো বাস কমিয়ে নতুন বাস বাড়ানোয় তেল এবং রক্ষনাবেক্ষণ খরচ কমছে। গত মাসে সংস্থা ৮ কোটি ৯০ লক্ষ টাকা আয় করেছে। এটা বাড়িয়ে আগামী আর্থিক বছরের জন্য মাসে ১০ কোটি টাকা লক্ষ্যমাত্রা ঠিক হয়েছে।

নিগমের অফিসারেরা জানান, আগামী বছর আয় ১২০ কোটি টাকার মত ধরা হচ্ছে। গতবার যা ৭২ কোটি টাকার মত ছিল। বেতন ছাড়া তেল এবং অন্যান্য সব মিলিয়ে বছরে খরচ হয় ১৩৪ কোটি টাকা। আর মাসে বেতন বাবদ লাগে ৬ কোটি ৭৭ লক্ষ টাকা। এর জন্য বছরে প্রায় ৬০ কোটি টাকা ভুর্তকি দেয় রাজ্য সরকার। এবার বাস বাড়িয়ে, কর্মীদের স্বেচ্ছাবসর দিয়ে আয় বাড়ানোর চেষ্টা করা হচ্ছে। তবে চলতি বছরের বরাদ্দ শেষ হওয়ায় চলতি মাস থেকে বেতন নিয়ে অনিশ্চয়তা দেখা দেয়। পরে অর্থ দফতরে ৫ কোটি ২০ লক্ষ টাকা দেওয়ায় এ মাসের সমস্যা মেটে। ফেব্রুয়ারি এবং মার্চ মাসের বেতনও কীভাবে মেটানো হবে তা নিয়ে এখনও অনিশ্চয়তা রয়েছে।

যদিও চেয়ারম্যান জানান, অর্থমন্ত্রী, অর্থ দফতরের সঙ্গে যোগাযোগ রেখে চলেছি। দুই মাসের বেতন সমস্যা মেটানো হবে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন