বিজেপির বিক্ষোভ। কোচবিহারে তোলা নিজস্ব চিত্র।
সারদা কাণ্ড সহ স্থানীয় বিভিন্ন দাবি-দাওয়া নিয়ে উত্তরবঙ্গ জুড়ে শুক্রবার থানা ঘেরাও এবং মিছিল করল বিজেপি। সারদা কাণ্ড নিয়ে রাজ্য জুড়ে থানা ঘেরাও করার নির্দেশ দিয়েছিল বিজেপির শীর্ষ নেতৃত্ব। সেই মতো শিলিগুড়ি থেকে শামুকতলা, রায়গঞ্জ থেকে হলদিবাড়ি সর্বত্রই বিজেপি কর্মীদের বিক্ষোভ মিছিল, থানা ঘেরাও কর্মসূচি হয়েছে। সারদা কাণ্ডে জড়িত থাকার অভিযোগ তুলে মুখ্যমন্ত্রীর পদত্যাগ চেয়ে স্লোগান দিয়েছেন বিজেপি কর্মীরা। সেই সঙ্গে স্থানীয় দাবি-দাওয়াকেও সামিল করে সংশ্লিষ্ট জেলাগুলিতে নিজেদের সংগঠনও জোরদার করতে চাইছে বিজেপি।
এ দিন শিলিগুড়িতে আটটি থানা এবং একটি ফাঁড়ি ঘেরাও করে বিজেপির কর্মী-সমর্থকরা। দুপুর দেড়টা নাগাদ একই সঙ্গে সব থানায় ঘেরাও শুরু হয়। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় যখন রেলমন্ত্রী ছিলেন সে সময় অনৈতিক ভাবে সারদাকে বিভিন্ন সুবিধা ও বরাত পাাইয়ে দেওয়ার অভিযোগ তোলা হয়। সেই সঙ্গে বিজেপি কর্মীদের মারধর ও মিথ্যা মামলায় জড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে বলেও এ দিন দলের স্মারকলিপিতে উল্লেখ্য করা হয়। বিভিন্ন থানার দায়িত্বপ্রাপ্ত অফিসারদের মাধ্যমে রাজপ্যল কেশরিনাথ ত্রিপাঠির কাছে তাঁদের স্মারকলিপি পাঠানো হয়েছে বলে দলের তরফে জানানো হয়েছে। বিজেপির জেলা সভাপতি রথীন বসু অভিযোগ করে বলেন, “যে সরকারের মুখ্যমন্ত্রী দুর্নীতির অভিযোগে অভিযুক্ত হন, সেই সরকারের আর ক্ষমতায় থাকা উচিৎ নয়। সিবিআই তদন্তে মুখ্যমন্ত্রী ক্লিনচিট না পাওয়া পর্যন্ত মুখ্যমন্ত্রীর পদত্যাগ করে সরে দাঁড়ান।”
শিলিগুড়ি, প্রধাননগর, মাটিগাড়া, নকশালবাড়ি, ফাঁসিদেওয়া, বাগডোগরা, খড়িবাড়ি, ভক্তিনগর ও নিউ জলপাইগুড়ি ফাঁড়িতে স্মারকলিপি দেওয়া হয়েছে। সারদা কাণ্ডের সঙ্গে পুজোর মুখে চাঁদার জুলুম বন্ধ করার দাবি তুলে হলদিবাড়িতে থানা ঘেরাও করে বিজেপি। সেই সঙ্গে পুজো কমিটিগুলিকে অনুমতি দেওয়ার নিয়মের সরলীকরণের দাবিও জানায় তারা। ধুপগুড়ির স্কুলছাত্রীকে ধর্ষণ করে খুনের ঘটনায় জড়িতদের দ্রুত গ্রেফতারের দাবি তোলা হয়। সীমান্তবর্তীতে হলদিবাড়িতে গরু পাচার নিয়েও অভিযোগ তোলা হয় দলের তরফে। গরু পাচার বন্ধ না হলে ফের ঘেরাও আন্দোলনের হুমকিও দেওয়া হয়েছে।
সরাদার পরেই সন্ত্রাসের অভিযোগকে তুলে ধরেছে উত্তর দিনাজপুর জেলা বিজেপি। এ দিন সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত বিজেপির জেলা সাধারণ সম্পাদক শঙ্কর চক্রবর্তীর নেতৃত্বে কর্মী সমর্থকরা রায়গঞ্জের শিলিগুড়ি মোড় থেকে বিদ্রোহী মোড় হয়ে কসবা পর্যন্ত বিক্ষোভ মিছিল করেন। শহরের মোহনবাটি, এমজি রোড, সুপারমার্কেট সহ বিভিন্ন এলাকায় অবস্থান বিক্ষোভও করা হয় দলের তরফে। বিকেলে রায়গঞ্জ থানা ঘেরাও করে আইসির কাছে স্মারকলিপি দেন বিজেপি নেতা-কর্মীরা। তাদের অভিযোগ, জেলার নয়টি ব্লকে বিভিন্ন দল ছেড়ে বহু মানুষ প্রতিদিন বিজেপিতে যোগ দিচ্ছেন আর সে কারণেই ইটাহার, করণদিঘি ও চোপড়া ব্লকের বিভিন্ন গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকায় দলের কর্মী সমর্থকদের উপর তৃণমূল হামলা চালাচ্ছে। দলের কর্মীদের বাড়িতে চড়াও হয়ে তৃণমূলের কর্মী সমর্থকেরা মারধর করলেও, হুমকির ভয়ে আক্রন্তরা পুলিশে অভিযোগ জানানোর সাহস পাচ্ছেন না বলে দাবি করেছেন দলের জেলা সভাপতি। শঙ্করবাবু অভিযোগ করে বলেন, “গত দু’মাসে আমাদের ১০ জন কর্মী সমর্থককে তৃণমূলের দুষ্কৃতীরা মারধর করেছে। তৃণমূলের চাপে উল্টে পুলিশ তাঁদেরকেই মিথ্যা মামলায় ফাঁসানোর চেষ্টা করছে।”
জেলা তৃণমূল কংগ্রেস সভাপতি অমল আচার্য অবশ্য দাবি করেছেন, জেলায় বিজেপির কোনও জনসমর্থন নেই। সেটা বুঝতে পেরে সাধারণ মানুষকে বিভ্রান্ত করতে তৃণমূলের বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ তুলে রাস্তায় নেমেছে বিজেপি। অমলবাবু বলেন, “আগামী বিধানসভা নির্বাচনে মানুষই এ সব অভিযোগের উপযুক্ত জবাব দেবেন।” তৃণমূলের দাবি রাজনৈতিক স্বার্থ চরিতার্থ করতেই ভিত্তিহীন দাবি তোলা হয়েছে, সিবিআইকে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে ব্যবহার করছে বিজেপি।
এ দিন বিক্ষোভ হয়েছে কোচহিার কোতোয়ালি থানার বিরুদ্ধেও। বিজেপির কোচবিহার জেলা সাধারণ সম্পাদক নিখিল রঞ্জন দে আন্দোলনের নেতৃত্ব দেন। অন্যদিকে, সারদা কান্ডে জড়িতদের শাস্তি, উত্তরবঙ্গের অন্য সমস্ত অর্থলগ্নি সংস্থা নিয়ে সিবিআই তদন্ত দাবি সহ একাধিক দাবিতে কোচবিহারের ৫ মহকুমা শাসকের দফতরের সামনে অবস্থান বিক্ষোভ করল বামফ্রন্ট। শুক্রবার কোচবিহার সদর মহকুমা শাসক দফতরের সামনে ওই বিক্ষোভে সিপিএমের কোচবিহার জেলা সম্পাদক তারিণী রায়, দলের জেলা সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য মহানন্দ সাহা, ফরওয়ার্ড ব্লকের প্রাক্তন বিধায়ক দীপক সরকার ও দেবাশিস বণিক প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।