উন্নয়নের জন্য সর্বদলীয় প্রতিনিধিরা দিল্লি যাবেন

কেন্দ্রে নরেন্দ্র মোদীর নেতৃত্বাধীন সরকার গঠনের পরে দিল্লি যাওয়ার প্রসঙ্গ বরাবরই এড়িয়ে গিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। কিন্তু উত্তরবঙ্গ সফরের তৃতীয় দিন, বৃহস্পতিবার ডুয়ার্সের মাদারিহাটে উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন পর্ষদের বৈঠকের পরে মুখ্যমন্ত্রী জানিয়ে দিলেন, শীঘ্রই রাজ্য থেকে নানা দলের প্রতিনিধিদের নিয়ে দিল্লিতে যাবে একটি দল। ওই দলের মূল দাবি অবশ্যই উত্তরবঙ্গ কেন্দ্রিক।

Advertisement

নিলয় দাস ও সব্যসাচী ঘোষ

মাদারিহাট শেষ আপডেট: ০৬ জুন ২০১৪ ০১:২৭
Share:

বৈঠকের পরে কংগ্রেস বিধায়ক দেবপ্রসাদ রায়ের সঙ্গে মুখ্যমন্ত্রী। মাদারিহাটে সন্দীপ পালের তোলা ছবি।

কেন্দ্রে নরেন্দ্র মোদীর নেতৃত্বাধীন সরকার গঠনের পরে দিল্লি যাওয়ার প্রসঙ্গ বরাবরই এড়িয়ে গিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। কিন্তু উত্তরবঙ্গ সফরের তৃতীয় দিন, বৃহস্পতিবার ডুয়ার্সের মাদারিহাটে উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন পর্ষদের বৈঠকের পরে মুখ্যমন্ত্রী জানিয়ে দিলেন, শীঘ্রই রাজ্য থেকে নানা দলের প্রতিনিধিদের নিয়ে দিল্লিতে যাবে একটি দল। ওই দলের মূল দাবি অবশ্যই উত্তরবঙ্গ কেন্দ্রিক।

Advertisement

মুখ্যমন্ত্রী বলেছেন, “উত্তরবঙ্গ নদী ভাঙন, বন্যা নিয়ন্ত্রণ, নদী দূষণ রোধে হাজার-হাজার কোটি টাকা খরচ করা রাজ্যের পক্ষে সম্ভব নয়। কেন্দ্রকেই বিষয়টি দেখতে হবে। সে জন্য বৈঠকে সর্বসম্মত ভাবে ঠিক হয়েছে, রাজনীতির ঊর্ধ্বে উঠে সব দলের প্রতিনিধিরা যৌথ ভাবে উত্তরবঙ্গর নানা সমস্যার স্থায়ী সমাধানের জন্য ‘মাস্টার প্ল্যান’-এর দাবি জানাতে দিল্লিতে যাবেন।” সেই সঙ্গে ব্রহ্মপুত্র নদী কমিশনে পশ্চিমবঙ্গের প্রতিনিধি না-রাখায় ক্ষোভ প্রকাশ করেন মুখ্যমন্ত্রী। দিল্লিতে গিয়ে যৌথ প্রতিনিধি দল সেই দাবিও জানাবে। দিল্লিতে প্রতিনিধি দল পাঠানোর সিদ্ধান্ত নিলেও নতুন সরকার নিয়ে এখনই কোনও মন্তব্যে নারাজ মুখ্যমন্ত্রী। তিনি বলেন, “সবে তো দিল্লিতে সরকার গঠিত হল। তাদের সম্পর্কে এখনও কিছু বলার সময় আসেনি।”

মুখ্যমন্ত্রী জানান, সেচমন্ত্রী রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায় ও উত্তরবঙ্গ উন্নয়নমন্ত্রী গৌতম দেব এই প্রতিনিধি দলের নেতৃত্বে থাকবেন। সব মিলিয়ে ১১ সদস্যের দল যাবে। তাতে বামেদের তরফে দিনহাটার ফরওয়ার্ড ব্লক বিধায়ক উদয়ন গুহ, কংগ্রেসের আলিপুরদুয়ারের বিধায়ক দেবপ্রসাদ রায়ও থাকার ব্যাপারে রাজি হয়েছেন। উদয়নবাবু বলেন, “রাজ্যের স্বার্থে বিশেষ করে উত্তরবঙ্গের জন্য দিল্লির দরবার করব না কেন? এখানে দল দেখার কোনও প্রশ্ন নেই।” আলিপুরদুয়ারের কংগ্রেস বিধায়ক দেবপ্রসাদবাবু জানান, নদী ভাঙনের সমস্যা সমাধানের জন্য কেন্দ্রীয় সরকারের কাছে যাওয়ার ব্যাপারে দলীয় রাজনীতির ঊর্ধ্বে উঠতে হবে।

Advertisement

এই দিন দুপুরে মাদারিহাট পর্যটক আবাসে মুখ্যমন্ত্রী প্রথমে আদিবাসী উপদেষ্টা পর্ষদের বৈঠক করেন। ওই বৈঠকের পরে মুখ্যমন্ত্রী আদিবাসীদের জন্য একগুচ্ছ প্রকল্পের সিদ্ধান্ত হয়েছে বলে ঘোষণা করেন। তা হল, সাঁওতালি ভাষায় জমি আইনের নিয়মাবলির অনুবাদ করে ফেলা হয়েছে। শীঘ্রই রাজ্যের ওয়েবসাইটে দেওয়া হবে। রাজ্যের ১৯ জেলাতেই আদিবাসী ভবন তৈরি হবে। কলকাতায় গড়ে উঠবে রাজ্য আদিবাসী ভবন। ৬ মাস পরে জঙ্গলমহলে পর্ষদের বৈঠক হবে বলে জানান মুখ্যমন্ত্রী। তবে বন্ধ চা বাগানের বিষয়ে মুখ্যমন্ত্রী জানিয়ে দেন, বিষয়টি বেসরকারি মালিকদের ব্যাপার। তা নিয়ে শ্রম দফতরই পদক্ষেপ করবে।

এর পরে সেখানে উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন পর্ষদের বৈঠক হয়। ওই বৈঠকে মুখ্যমন্ত্রী উত্তরবঙ্গের সামগ্রিক উন্নয়নে নানা দলের প্রতিনিধিদের রাজনীতির ঊর্ধ্বে ওঠার আহ্বান জানান। ঘটনাচক্রে, পর্ষদের সদস্যদের মধ্যে সিপিএমের কোনও প্রতিনিধি নেই। সাধারণত, নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিরা পর্ষদের সদস্য-সদস্যা হন। উত্তরবঙ্গে সিপিএমের একাধিক বিধায়ক থাকলেও কেউই পর্ষদের সদস্য-সদস্যা হিসেবে রাজ্যের তরফে মনোনীত হননি। বামেদের তরফে দিনহাটার ফরওয়ার্ড ব্লক বিধায়ককে সদস্য মনোনীত করেছে রাজ্য সরকার। এ দিকে, বক্সা পাহাড়ের ডুকপা সম্প্রদায়ের গ্রামে প্রাথমিক স্কুলে শিক্ষক না-থাকার কথা শুনে মুখ্যমন্ত্রী স্থানীয় কাউকে নিয়োগের পরামর্শ দেন।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন