এসজেডিএ দুর্নীতি নিয়ে ফের সরব প্রাক্তন পুরমন্ত্রী

এসজেডিএ-এর আর্থিক দুর্নীতি মামলায় সংস্থার প্রাক্তন চেয়ারম্যানকে আড়াল করার চেষ্টা হচ্ছে বলে ফের অভিযোগ তুললেন প্রাক্তন পুরমন্ত্রী অশোক ভট্টাচার্য। শিলিগুড়ির তৃণমূল বিধায়ক রুদ্রনাথ ভট্টাচার্য চেয়ারম্যান থাকার সময়ে বেশ কিছু প্রকল্পের কাজ নিয়ে অনিয়মের অভিযোগ ওঠে।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

শিলিগুড়ি শেষ আপডেট: ৩১ জানুয়ারি ২০১৫ ০১:৩৭
Share:

এসজেডিএ-এর আর্থিক দুর্নীতি মামলায় সংস্থার প্রাক্তন চেয়ারম্যানকে আড়াল করার চেষ্টা হচ্ছে বলে ফের অভিযোগ তুললেন প্রাক্তন পুরমন্ত্রী অশোক ভট্টাচার্য। শিলিগুড়ির তৃণমূল বিধায়ক রুদ্রনাথ ভট্টাচার্য চেয়ারম্যান থাকার সময়ে বেশ কিছু প্রকল্পের কাজ নিয়ে অনিয়মের অভিযোগ ওঠে। এসজেডিএ-এর তরফে এ বিষয়ে ৮টি অভিযোগও দায়ের করা হয়। গত বুধবার মহানন্দা অ্যাকশন প্ল্যানের নিকাশি প্রকল্পে ফুলবাড়ি এবং নৌকাঘাটে দু’টি পাম্পিং স্টেশন তৈরিতে ৩ কোটিরও বেশি টাকা নয়ছয়ের অভিযোগ দায়ের করেছে এসজেডিএ কর্তৃপক্ষ। সংশ্লিষ্ট ঠিকাদারের বিরুদ্ধে অতিরিক্ত ক্ষমতাসম্পন্ন পাম্পসেট কিনে সরকারি টাকার নয়ছয়ের অভিযোগে শিলিগুড়ির প্রধাননগর থানায় মামলা দায়ের করে এসজেডিএ।

Advertisement

বিরোধীদের দাবি, পাম্পসেট কেনার পুরো প্রক্রিয়াই এসজেডিএ-এর তৎকালীন চেয়ারম্যান তথা শিলিগুড়ির তৃণমূল বিধায়ক রুদ্রনাথ ভট্টাচার্যের জানা ছিল। সে কারণে ওই মামলায় বিধায়কের নামেও অভিযোগ দায়ের করার দাবি তুলেছেন অশোকবাবুরা। সেই সঙ্গে জোড়াপানি নদী সংস্কার নিয়ে দায়ের করা পুরোনো মামলাতেও তৎকালীন চেয়ারম্যানের নাম ঢোকানোর দাবি তুলে, আগামী ৬ ফেব্রুয়ারি শিলিগুড়িতে আইন অমান্য আন্দোলনের কর্মসূচি ঘোষণা করেছে সিপিএম।

রাজনৈতিক কারণেই সিপিএমের তরফে ভিত্তিহীন অভিযোগ তোলা হয়েছে বলে পাল্টা দাবি করেছেন এসজেডিএ-এর বর্তমান চেয়ারম্যান তথা উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী গৌতম দেব। মন্ত্রীর কথায়, “এসজেডিএ নিজেই অভিযোগগুলি দায়ের করেছে এটা বিরোধীরা ভুলে যাচ্ছেন। যদি সত্যিকে আড়াল করার চেষ্টা হতো, তবে তো অভিযোগই দায়ের হতো না। আইন মেনেই প্রাথমিকভাবে যা প্রমাণ পাওয়া গিয়েছে, তার ভিত্তিতে অভিযোগ দায়ের হয়েছে। তদন্ত হলেই সব সামনে আসবে।”

Advertisement

কেন প্রাক্তন চেয়ারম্যানকে আড়াল করার চেষ্টার অভিযোগ করা হয়েছে, শুক্রবার সাংবাদিক বৈঠক করে তার যুক্তিও দিয়েছে সিপিএম। এ দিন শুক্রবার অনিল বিশ্বাস ভবনে প্রাক্তন পুরমন্ত্রী প্রকল্পের কিছু নথি নিয়ে সাংবাদিক বৈঠক করেন। মহানন্দা অ্যাকশন প্ল্যানের কাজকর্ম নিয়ে ২০১২ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে কেন্দ্রীয় নদী সংরক্ষণ অধিকরণের আধিকারিকরা শিলিগুড়িতে এসে বৈঠক করেছিলেন। গত ফেব্রুয়ারি মাসের ওই বৈঠকে পাম্পিং স্টেশন তৈরি নিয়ে এসজেডিএকে বারবার সর্তক করে দেওয়া হয়েছিল বলে দাবি করেছেন অশোকবাবু। পাম্পিং স্টেশন তৈরিতে ব্যবহৃত পাম্পসেট যাতে কোনভাবেই বেশি ক্ষমতাসম্পন্ন না হয় তা জানিয়ে দেওয়া হয়েছিল বলে দাবি। উপযুক্ত পাম্পসেট যাতে কেনা হয়, তার জন্য যথাযথ ভাবে টেন্ডার করার কথাও বৈঠকে জানানো হয়েছিল বলে দাবি। বৈঠকে তৎকালীন চেয়ারম্যান রুদ্রবাবু উপস্থিত ছিলেন এবং সে বিষয়ে সহমতও প্রকাশ করেছিলেন বলে বৈঠকের সিদ্ধান্তের প্রতিলিপিতে উল্লেখ্য রয়েছে বলে দাবি করা হয়েছে।

অশোকবাবুর অভিযোগ, “তৎকালীন চেয়ারম্যানের উপস্থিতিতে বৈঠকে কেন্দ্রীয় সরকারের আধিকারিকরা যে নির্দেশ দিয়েছিলেন, পাম্পসেট কেনার সময়ে তা মানা হয়নি। সেই বৈঠকের নথিতে চেয়ারম্যানের উপস্থিত থাকা এবং সহমত জানিয়েছিলেন বলে লেখা রয়েছে। তারপরেও টেন্ডার না করে জরুরি ভিত্তিতে পাম্পসেট কেনা হয়। চেয়ারম্যান জড়িত না থাকলে এই ঘটনা সম্ভব হতো না।” অশোকবাবুদের অভিযোগ, “চেয়ারম্যানকে আড়াল করার চেষ্টা চলছে। সুতরাং বর্তমান তদন্তে সত্যি প্রকাশ হওয়া সম্ভব নয়।”

অশোকবাবুদের অভিযোগ তোলা বৈঠক সম্পর্কে কোনও মন্তব্য না করে প্রাক্তন চেয়ারম্যান তথা বিধায়ক রুদ্রবাবু এ দিন বলেন, “সে সময়ে যা সিদ্ধান্ত বা পদক্ষেপ হয়েছিল তা তৎকালীন আধিকারিকরা বলতে পারবেন। কোনও অনিয়ম বা অনৈতিক কাজে আমি জড়িত নই। তবে গত ২০ বছরে অশোকবাবুদের আমলে যে দুর্নীতি তৈরি হয়েছে, তার তালিকাও তৈরি হচ্ছে। যথাসময়ে তা প্রকাশ হবে।” আর্থিক অনিয়মের ঘটনা সামনে আসার পরে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়কে দিয়ে বিভিন্ন প্রকল্প সমীক্ষা করায় এসজেডিএ কতৃর্পক্ষ। সেই সমীক্ষা রিপোর্ট এবং ২০১২-১৩ সালের অডিট রিপোর্টও প্রকাশ্যে আনার দাবি জানিয়েছেন বিরোধীরা।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন