কাছেই শহর, তবু পরিষেবা নেই শিবমন্দিরে

শিবমন্দির এলাকার প্রায় মাঝখান দিয়ে চলে গিয়েছে ৩১ নম্বর জাতীয় সড়ক। সেই রাস্তার হাল মোটামুটি ঠিকই থাকে। কারণ, বাগডোগরা থেকে ভিভিআইপি, ভিআইপি-রা ওই রাস্তা দিয়েই শিলিগুড়ি, দার্জিলিং, সিকিম কিংবা উত্তর পূর্ব ভারতে যাতায়াত করে থাকেন।

Advertisement

কিশোর সাহা

দার্জিলিং শেষ আপডেট: ১০ সেপ্টেম্বর ২০১৪ ০২:২৯
Share:

শিবমন্দিরের অনেক রাস্তারই হাল এমন। বিশ্বরূপ বসাকের তোলা ছবি।

শিবমন্দির এলাকার প্রায় মাঝখান দিয়ে চলে গিয়েছে ৩১ নম্বর জাতীয় সড়ক। সেই রাস্তার হাল মোটামুটি ঠিকই থাকে। কারণ, বাগডোগরা থেকে ভিভিআইপি, ভিআইপি-রা ওই রাস্তা দিয়েই শিলিগুড়ি, দার্জিলিং, সিকিম কিংবা উত্তর পূর্ব ভারতে যাতায়াত করে থাকেন। কিন্তু, জাতীয় সড়কের দু’ধারে থাকা শিবমন্দিরের বিস্তীর্ণ এলাকার রাস্তাঘাট যেন অজ পাড়াগাঁয়ের মতো। কোথাও পাকা রাস্তা হলেও বেশির ভাগটাই ভাঙাচোরা। আবার কোথাও রাস্তা এখনও কাঁচা। নিকাশি নালা না-থাকায় সামান্য বৃষ্টিতে জল জমে পথে চলা দায়। বর্ষায় নিত্যযাত্রী ও পড়ুয়াদের যাতায়াত করতে চরম ভোগান্তি হয়। নরসিংহ বিদ্যাপীঠ, আঠারোখাই বালিকা বিদ্যালয়ের একাধিক শিক্ষাকর্মীর আক্ষেপ, এলাকার রাস্তাঘাট বেহাল হওয়ায় বর্ষায় পড়ুয়ারা চরম নাকাল হয়ে স্কুলে পৌঁছয়।

Advertisement

বাসিন্দারা প্রায় সকলেই একবাক্যে জানিয়েছেন, সবচেয়ে বিপজ্জনক হল জাতীয় সড়ক পারাপার করা। সারা দিন জাতীয় সড়ক পারাপার করতেই হয় বাসিন্দাদের। মাত্র দু’জন ট্রাফিক পুলিশ অফিসের সময়ে সেই পারাপার সামাল দিতে হিমশিম খান। কারণ, প্রতিনিয়ত জাতীয় সড়ক দিয়ে তীব্রগতিতে যানবাহন ছোটে। দুর্ঘটনাও ঘটে। বহু বছর ধরে বাসিন্দা চাইছেন, শিবমন্দির এলাকায় ‘উড়ালপুল’ কিংবা ‘ফুট-ওভার ব্রিজ’ হোক। তা নিয়ে নানা সময়ে নেতা-মন্ত্রীরা আশ্বাস দিলেও সেই কাজ এতটুকুও ওগোয়নি কেন সেটাই বাসিন্দারা বুঝতে পারেন না।

বস্তুত, গুরুত্বপূর্ণ জনপদ হওয়া সত্ত্বেও শিবমন্দির এলাকার অনেক সমস্যার সমাধান হয় না। যেমন, এখনও পরিস্রুত পানীয় জল বাড়ি-বাড়ি পৌঁছনোর সুষ্ঠু কোনও বন্দোবস্ত হয়নি। যে কয়েকটি হাতে গোনা স্ট্যান্ড পোস্ট রয়েছে, তার জল অনেক সময়েই খাওয়া যায় না বলে বাসিন্দারের অভিযোগ। অগত্যা, বাড়ির কুয়ো, সাব মার্সিবল পাম্প বসিয়ে জল তোলা ছাড়া উপায় নেই। অথচ কাছেই রয়েছে একাধিক নদী। যেখানে জল প্রকল্প গড়ে গোটা এলাকার পানীয় জলের চেহারাই পাল্টে দেওয়া যায়।

Advertisement

আরও একটি বড় সমস্যা হল, জঞ্জাল সাফাই। যখন জনবসতি ছিল হাতো গোনা, সেই সময়ে যে ভাবে জঞ্জাল সাফাই হতো, এখনও সেভাবেই হচ্ছে। মাঝেমধ্যে গ্রাম পঞ্চায়েতের তরফে নানা এলাকায় স্তূপীকৃত হয়ে থাকা জঞ্জাল তুলে নিয়ে ফেলা হচ্ছে নদীর ধারে। দীর্ঘদিন ধরে গ্রাম পঞ্চায়েতের বোর্ড অকেজো। প্রশাসকই কাজ চালাচ্ছেন। ফলে, সেই কাজও এখন নিয়মিত হচ্ছে না বলে অভিযোগ। ফলে, জাতীয় সড়কের দুধারে আবর্জনা জমছে। পাড়ায়-পাড়ায় জল-জঞ্জাল মিলেমিশে পরিস্থিতি অনেক এলাকায় অসহনীয় হয়ে উঠেছে বলে বাসিন্দাদের একাংশের অভিযোগ।

শিলিগুড়ির এত কাছে থেকেও কেন নাগরিক পরিষেবা পাচ্ছে না শিবমন্দির? শিলিগুড়ি মহকুমা প্রশাসনের নেতা-কর্তারা প্রায় সকলেই স্বীকার করেছেন, ওই এলাকাটি গ্রাম পঞ্চায়েতের এলাকায় থাকলে ঠিকঠাক নাগরিক পরিষেবা দেওয়া সম্ভব হবে না। কারণ, গ্রাম পঞ্চায়েতের পক্ষে ঘিঞ্জি এলাকার রাস্তাঘাট সারানো, পানীয় জল, জঞ্জাল সাফাইয়ের কাজ করানোর মতো অর্থ ব্যয় করা সম্ভব নয়। নাগরিক পরিষেবা কিছুটা ঠিকঠাক তখনই দেওয়া যেতে পারে, যখন এলাকা পুরসভার আওতায় থাকে।

তা হলে পুরসভা হয়নি কেন? প্রায় সাড়ে তিন দশক বাম জমানায় বামেদের দখলেই ছিল আঠারোখাইয়ের বিস্তীর্ণ এলাকা। এমনকী, শিবমন্দির এলাকার বাসিন্দা তথা শিক্ষিকা মণি থাপা ৫ বছর শিলিগুড়ি মহকুমা পরিষদের সিপিএম পরিচালিত বোর্ডের সভাধিপতি ছিলেন। তাঁর আমলে কেন শিবমন্দিরের সার্বিক উন্নতির চেষ্টা হয়নি? মণিদেবী বলেন, “আমরা চেষ্টা করিনি সেটা বলাটা বোধ হয় পুরোপুরি ঠিক হবে না। অনেক কাজই হয়েছে। অনেক বাকি রয়েছে। মনে রাখতে হবে, শিবমন্দির বড্ড দ্রুত বাড়ছে। হু হু করে জনবসতি বাড়ছে। সে জন্য নাগরিক পরিষেবার ঘাটতি হচ্ছে।” তাঁর দাবি, “আমাদের সময়ে তৎকালীন পুরমন্ত্রী অশোক ভট্টাচার্য আঠারোখাইয়ে পুরসভা হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়ার প্রক্রিয়া শুরু করান। সেই কাজ কেন থমকে রয়েছে সেটা এখন যাঁরা সরকারে রয়েছেন, তাঁদের দেখতে হবে।”

যদিও তৃণমূল জমানায় আঠারোখাইয়ে পুরসভার আওতায় আনার প্রক্রিয়া জোরদার হয়েছে বলে দাবি করেছেন অনেক নেতাই। তৃণমূল নেতা তথা উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী গৌতম দেব বলেন, “দুমদাম পুরসভা ঘোষণা করে দিয়ে হাততালি কুড়োনোর রাজনীতি আমরা করি না। সুষ্ঠু পরিকল্পনা করে আমরা এগোচ্ছি। শিবমন্দির সহ আঠারোখাইয়ের উন্নয়নের জন্য শিলিগুড়ি-জলপাইগুড়ি উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ বিশদে পরিকল্পনা করেছে। অনেক কাজও শুরু হয়েছে।”

(চলবে)

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন