শিলিগুড়ি পুরসভায় ফিরহাদ হাকিম ও গৌতম দেব। মঙ্গলবার তোলা নিজস্ব চিত্র।
কার্নিভাল কমিটিকে পুরসভার তরফে ২০ লক্ষ টাকা ঋণ দেওয়ার ব্যাপারে খোঁজখবর নিলেন পুরমন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম। মঙ্গলবার শিলিগুড়ি পুরসভায় গিয়ে পুর কমিশনার, পুরসভার সচিব, ফিনান্স অফিসার, এগজিকিউটিভ ইঞ্জিনিয়র-সহ অন্য আধিকারিকদের নিয়ে বৈঠক করেন। তবে প্রশাসক বোর্ডের সদস্যদের কেউ ছিলেন না। নিয়ম ভেঙে প্রশাসক বোর্ড শিলিগুড়ি কার্নিভাল কমিটিকে শিল্পীদের অগ্রিম টাকা দেওয়ার জন্য ঋণ হিসাবে ওই টাকা অনুমোদন করে বলে অভিযোগ। তা নিয়ে সরব হয়েছেন বিরোধীরা।
এ দিন বৈঠক শেষে পুরমন্ত্রী বলেন, “কার্নিভাল কমিটিকে পুরসভার তরফে কোনও টাকা দেওয়া হয়নি। শিল্পীদের অগ্রিম দিতে ঋণ হিসাবে যে টাকা খরচ করা হয়েছে শিলিগুড়ি কার্নিভাল কমিটি তা ফিরিয়ে দিয়েছে।” পুর আইন অনুসারে বাজেটে উল্লেখ থাকলে এবং বরাদ্দ থাকলে কোনও সংস্থা বা আয়োজকদের মেলা বা প্রদর্শনী করতে পুরসভা আর্থিক সহায়তা করতে পারে। কিন্তু ঋণ হিসাবে কোনও টাকা দিতে পারে না। প্রাক্তন পুরমন্ত্রী অশোক ভট্টাচার্য বলেন, “মানুষ বোকা নয় তা বোঝা উচিত। ঋণ হিসাবে যে টাকা কার্নিভাল কমিটিকে দেওয়া হয়েছে প্রশাসক বোর্ডের সভায় তা অনুমোদন হয়েছে। তার নথি রয়েছে। পুরসভার তহবিল থেকে নিয়ম ভেঙে টাকা নেওয়া অপরাধ।”
পুরসভার সাধারণ তহবিল ভেঙে ঋণ হিসাবে ওই টাকা কী ভাবে প্রশাসক বোর্ড অনুমোদন করেছে তা নিয়ে বিরোধী বামেরা ছাড়াও কংগ্রেস এবং বিজেপি’র তরফে আলাদা ভাবে প্রশ্ন তুলেছেন। তাঁদের অভিযোগ, পুর এলাকার গরিব বাসিন্দারা বিধাবা ভাতা, প্রতিবন্ধী ভাতার টাকা পাচ্ছেন না। পুরসভার বিদ্যুৎ বিল বকেয়া রয়েছে, সাফাই পরিষেবার ভাড়া গাড়ির মালিকেরা টাকা পাচ্ছেন না। অথচ উৎসব করতে টাকা ঋণ দেওয়া হচ্ছে। কার্নিভাল পরিস্থিতির মধ্যে পুরসভার ৩৮ নম্বর ওয়ার্ডে দুই দিন ধরে পানীয় জল পরিষেবা ব্যাহত হয়ে পড়েছে। অথচ তা গুরুত্ব দিয়ে দেখা হচ্ছে না। পুরমন্ত্রী জানিয়েছেন, পুরসভার আর্থিক সমস্যার সঙ্গে কার্নিভালের যোগ নেই। বিভিন্ন স্পনসররা টাকা দিয়েছে। তা দিয়েই কার্নিভাল হচ্ছে। তিনি বলেন, ‘‘পুরবোর্ড থাকুক আর না থাকুক। পুর পরিষেবা পেতে নাগরিকদের যাতে কোনও সমস্যা না হয়। তা দেখা রাজ্য সরকারের কর্তব্য। তা গুরুত্ব দিয়ে দেখা হচ্ছে।”
প্রাক্তন পুরমন্ত্রী জানান, পুরসভা কোনও দফতর নয়। এটি জনপ্রতিনিধি দ্বারা চালিত স্বশাসিত একটি সংস্থা। নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি দ্বারা পরিচালিত পুরবোর্ড দরকার। সেটা তাঁরা করছেন না। পুরমন্ত্রী ববি হাকিম জানান, পুর নির্বাচনের জন্য নির্বাচিত কমিশনকে রাজ্য সরকারের তরফে চিঠি পাঠানো হয়েছে। তখন নির্বাচন হবে তা কমিশনের ব্যাপার।
বিজেপি’র জেলা সভাপতি রথীন বসু বলেন, “ইতিমধ্যেই তথ্য জানার অধিকার আইনে পুর কর্তৃপক্ষকে চিঠি দিয়ে কী হিসাবে কার্নিভাল করতে ঋণ দেওয়া হয়েছে জানতে চেয়েছি। উত্তরের জন্য অপেক্ষা করছি। নিয়ম ভেঙে ওই অনৈতিক কাজের জন্য আমরা জবাবদিহি চাইব।” প্রাক্তন মেয়র তা কংগ্রেস নেত্রী গঙ্গোত্রী দত্ত বলেন, “কোথাও নিয়ম মানা হচ্ছে না। সব ক্ষেত্রে অনিয়ম চলছে। কার্নিভাল কমিটিকে ঋণ দেওয়ার ক্ষেত্রেও তাই।”