কার্নিভালের কাজ থেকে সরানো হল শিশুদের

শিলিগুড়ি কার্নিভালের অঙ্গ হিসেবে একটি বিনোদন পার্কে আয়োজিত ‘কিডস ও ফেস্টিভ্যালে’র তথা শিশু উৎসবে নিরাপত্তা এবং সাফাইয়ের কাজ শিশুদের দিয়ে করানো হচ্ছিল। সেই ঘটনা ছবি সহ সংবাদপত্রে প্রকাশ হতেই নড়েচড়ে বসতে বাধ্য হল পুরসভা ও শ্রম দফতর। সরকারি সূত্রের খবর, খবর পেয়েই উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী গৌতম দেব শিশুদের শ্রমিক হিসেবে ব্যবহার করা তখনই বন্ধ করার নির্দেশ দেন।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

শিলিগুড়ি শেষ আপডেট: ২০ ডিসেম্বর ২০১৪ ০১:৫০
Share:

কিডস ফেস্টিভ্যালে নিরাপত্তারক্ষীর কাজ থেকে ছোটদের সরিয়ে দিলেন কর্তৃপক্ষ। ছবি: বিশ্বরূপ বসাক।

শিলিগুড়ি কার্নিভালের অঙ্গ হিসেবে একটি বিনোদন পার্কে আয়োজিত ‘কিডস ও ফেস্টিভ্যালে’র তথা শিশু উৎসবে নিরাপত্তা এবং সাফাইয়ের কাজ শিশুদের দিয়ে করানো হচ্ছিল। সেই ঘটনা ছবি সহ সংবাদপত্রে প্রকাশ হতেই নড়েচড়ে বসতে বাধ্য হল পুরসভা ও শ্রম দফতর। সরকারি সূত্রের খবর, খবর পেয়েই উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী গৌতম দেব শিশুদের শ্রমিক হিসেবে ব্যবহার করা তখনই বন্ধ করার নির্দেশ দেন। রাতারাতি শিশুদের শ্রমিকদের সরিয়ে দেন বিনোদন পার্ক কর্তৃপক্ষ। ফলে, শুক্রবার সকালে তদন্তে নেমে শ্রম দফতর, চাইল্ড লাইন কিংবা চাইল্ড ওয়েলফেয়ার কমিটি একজন শিশুকেও খুঁজে পায়নি। বিনোদন পার্ক কর্তৃপক্ষ কিংবা নিরাপত্তা রক্ষী সরবরাহকারী সংস্থা, কারও বিরুদ্ধে শিশু শ্রম রোখার জন্য আইনে কেন মামলা রুজু করা হয়নি, তা নিয়েও শহরের নানা মহলে প্রশ্ন উঠেছে।

Advertisement

বিধি অনুযায়ী, কোনও সংস্থার বিরুদ্ধে শিশু শ্রমিকদের কাজে লাগানোর অভিযোগ উঠলে, প্রথমে সেই শিশুকে দ্রুত ‘উদ্ধার’ করে তার পরিচয় জানতে হয়। কথা বলতে হয় শিশুর পরিবারের সঙ্গেও। যদিও দাগাপুরের বিনোদন পার্কের ক্ষেত্রে তার কোনওটাই করতে পারেননি সরকারি কর্তারা। তাই তদন্তের গতিপ্রকৃতি নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন দার্জিলিঙের সাংসদ তথা লোকসভার ‘কমিটি অন প্রিভিলেজে’র চেয়ারম্যান সুরেন্দ্র সিংহ অহলুওয়ালিয়া। এ দিন তিনি দিল্লি থেকে বলেন, “তদন্ত যাতে ঠিকঠাক হয়, তার জন্য পদক্ষেপ করব।” তিনি নিজেও আরেকটি পৃথক অভিযোগ দায়ের করার ব্যবস্থা করবেন বলে জানিয়েছেন।

জেলা শিশু কল্যাণ সমিতির থেকে অভিযোগ পেয়ে শ্রম দফতরের অফিসারেরা শুক্রবার বিনোদন পার্কে গিয়েছিলেন। ততক্ষণে অবশ্য দুপুর হয়ে গিয়েছে। শ্রম দফতরের উত্তরবঙ্গের যুগ্ম কমিশনার মহম্মদ রিজওয়ান বলেন, “বিনোদন পার্কে গিয়ে খোঁজখবর শুরু হয়েছে। এ দিন অবশ্য শিশু শ্রমিক ব্যবহারের কোনও প্রমাণ মেলেনি। তবে অভিযোগের ভিত্তিতে পদক্ষেপ হবে।”

Advertisement

কয়েকটি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের দাবি, বিষয়টি জানাজানি হয়ে যাওয়ার পরেই কর্তৃপক্ষ শিশু শ্রমিকদের সরিয়ে দেবে সেটাই স্বাভাবিক। প্রমাণ জোগাড় করতে হলে, সকালে গিয়েই তল্লাশি চালাতে পারত শ্রম দফতর। যে নিরাপত্তা সংস্থা এবং সাফাই সংস্থা শিশুদের দিয়ে কাজ করিয়েছিল, তারাও শিশুদের নাম ঠিকানা জানেন না বলে দাবি করেছেন। নিরাপত্তা সংস্থার দায়িত্বে থাকা পবিত্রপ্রসাদ রায় বলেন, “খড়িবাড়ির একটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা আমাদের কাছে ওই শিশুদের পাঠিয়েছিল। ওরা নিজেরাই কাজ চেয়েছিল বলে জানানো হয়। তারা সকলেই বাড়ি ফিরে গিয়েছে। তবে তাদের ঠিকানা জানা নেই।” সাফাই সংস্থার দায়িত্বে থাকা রাজেশ চন্দ বলেন, “বাবা-মায়েদের সঙ্গে শিশুরা এসেছিল। অভিযোগ ওঠার পরেই তাদের সরিয়ে দেওয়া হয়েছে। তাদের নাম-ঠিকানা আমাদের কাছে নেই।”

অভিযোগ ওঠার ২৪ ঘণ্টার বেশি সময় গড়িয়ে গেলেও, কোনও তথ্য হাতে না আসায় তদন্তের ভবিষ্যত কী হবে, তা নিয়েই প্রশ্ন তুলেছে কয়েকটি স্বেচ্ছাসেবী এবং আদিবাসী সংগঠন। ডুয়ার্স জাগরণ মঞ্চের কর্ণধার ভিক্টর বসু বলেন, “কার্নিভালের সঙ্গে যে সরকারি বা বেসরকারি সংগঠন যুক্ত রয়েছে বলে শুনেছি, তাতে সরকারি তদন্ত যে শ্লথ হয়ে যাবে তাই স্বাভাবিক। বিষয়টি নিয়ে আমরা হস্তক্ষেপ করব।” আদিবাসী চা শ্রমিক সংগঠনের নেতা জন বার্লার অভিযোগ, “চা বাগান থেকে শিশু শ্রমিকদের নিয়ে আসা হয়েছিল বলে শুনেছি। চা বাগানগুলিতে অর্ধাহার, অনাহারের সুযোগে এমন তো হবেই। রাজ্য সরকারেরই এর সমাধান করা উচিত। তা না করে সরকারি অনুষ্ঠানেই যদি বাগানের শিশুদের কাজে লাগানো হয়, তবে তা দুর্ভাগ্যজনক। জাতীয় আদিবাসী কমিশনে অভিযোগ জানাব।”

এ দিন অবশ্য মন্ত্রী বলেন, “বৃহস্পতিবার ঘটনার খবর পেয়েই বিনোদন পার্ক কর্তৃপক্ষকে শিশু শ্রমিকদের সরিয়ে দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল।” মন্ত্রীর দাবি, বিনোদন পার্ক কর্তৃপক্ষের অনুরোধেই তাদের কার্নিভালে শরিক করা হয়েছিল। শিশু উৎসবের সঙ্গে দূরত্ব বজায় রাখতে শুক্রবারেও পুরসভা নিজের মতো যুক্তি খাড়া করেছেন।

শিলিগুড়ি পুর কমিশনার সোনম ওয়াংদি ভুটিয়ার এ দিনের বক্তব্য, “শিশু উৎসবের যাবতীয় আয়োজন বিনোদন পার্ক কর্তৃপক্ষ করেছেন। আমাদের অনুরোধ করায়, কার্নিভালের লোগো ব্যবহার করার অনুমতি দিয়ে তাদের নামও রাখা হয়েছিল। তবে যাই হোক, তাদের সর্তক করা হয়েছে।” যদিও বিনোদন পার্কের তরফে রামগোপাল জাজোদিয়া, অঙ্কুর অগ্রবালরা এ দিন বলেন, “কার্নিভালের তরফেই আমাদের অংশীদার হওয়ার অনুরোধ করা হয়েছিল। তবে শিশু শ্রমিকদের আমরা নিয়োগ করিনি। যে সংস্থা নিয়োগ করেছিল, তাদের সতর্ক করেছি।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন