ক্রমেই কমছে প্রতিবাদের ঝাঁঝ

মদন মিত্র গ্রেফতার হওয়ার খবরে প্রথম দিন তেতে উঠেছিল কমবেশি উত্তরবঙ্গের সাত জেলাই। দ্বিতীয় দিনও বিক্ষোভ প্রতিবাদে সামিল হয়েছিলেন দলের কর্মী সমর্থকরা। কিন্তু রবিবার থেকেই যেন তাতে ভাঁটার টান। আর সোমবার দলের নির্দেশে কর্মীরা পথে নামলেও মোটেই সেই ভিড় নজর টানেনি। দল সূত্রে খবর, নেতার গ্রেফতারির পরে একেই বিরোধী পক্ষ-সহ সাধারণ মানুষের প্রশ্নের উত্তর দিতে দিতে জেরবার কর্মী-সমর্থকেরা।

Advertisement

নিজস্ব প্রতিবেদন

শেষ আপডেট: ১৬ ডিসেম্বর ২০১৪ ০২:৫৮
Share:

তেমন ভিড় হল না মন্ত্রী মদন মিত্রের গ্রেফতারির প্রতিবাদে টিএমসিপির কর্মসূচিতে। সোমবার মালদহে। নিজস্ব চিত্র।

মদন মিত্র গ্রেফতার হওয়ার খবরে প্রথম দিন তেতে উঠেছিল কমবেশি উত্তরবঙ্গের সাত জেলাই। দ্বিতীয় দিনও বিক্ষোভ প্রতিবাদে সামিল হয়েছিলেন দলের কর্মী সমর্থকরা। কিন্তু রবিবার থেকেই যেন তাতে ভাঁটার টান। আর সোমবার দলের নির্দেশে কর্মীরা পথে নামলেও মোটেই সেই ভিড় নজর টানেনি।

Advertisement

দল সূত্রে খবর, নেতার গ্রেফতারির পরে একেই বিরোধী পক্ষ-সহ সাধারণ মানুষের প্রশ্নের উত্তর দিতে দিতে জেরবার কর্মী-সমর্থকেরা। তার উপরে পথে নেমে সাধারণ মানুষের হয়রানির কারণ হলে ক্ষোভ আরও বাড়বে। সে কারণেই একাংশ কর্মী দলীয় কর্মসূচি থেকে নিজেদের সরিয়ে রেখেছেন। কোনও কর্মসূচির জেরেই যাতে সাধারণ মানুষের হয়রানি না হয় সে বার্তাও দিয়েছেন দলের শীর্ষ নেতৃত্ব।

শিলিগুড়িতে এদিন ক্রীড়া ও পরিবহণ মন্ত্রীর ব্যাপারে অবশ্য দলের নেতা-কর্মীদের কোনও আগ্রহ দেখা যায়নি। বরং, সবাই ঢাকঢোল পিটিয়ে শিলিগুড়ি কার্নিভ্যালের মিছিলে যোগ দেন। সেখানে হুডখোলা জিপে দাঁড়িয়ে উত্তরবঙ্গ উন্নয়নমন্ত্রী গৌতম দেব ও পুরমন্ত্রী ফিরহাদ হাকিমকে হাসিমুখে জনতার উদ্দেশ্যে হাত নাড়তে দেখা যায়। মদন মিত্রের গ্রেফতারের প্রতিবাদে শিলিগুড়িতে কোনও মিছিল করা হয়নি এদিন।

Advertisement

কোচবিহারের ছবিটাও অনেকাংশেই এরকম। সোমবার মাথাভাঙা, তুফানগঞ্জ মহকুমায় তৃণমূলের পক্ষ থেকে মিছিল করা হয়। দেওয়ানহাটেও প্রতিবাদ মিছিল হয়। তবে ভিড়ের গ্রাফ অনেকটাই নিম্নমুখী। মাথাভাঙা শহরে হাতে গোনা কয়েকজনকে নিয়ে মিছিল করে তৃণমূল। তুফানগঞ্জের মিছিলও ছিল ছোট। যদিও তৃণমূলের কোচবিহার জেলা সভাপতি রবীন্দ্রনাথ ঘোষ তা স্বীকার করতে চাননি। তাঁর বক্তব্য, “আমাদের সরকারকে ছোট করার জন্য বিজেপি চক্রান্ত করেছে। মানুষ ওই চক্রান্তের প্রতিবাদে স্বতঃস্ফূর্ত ভাবে পথে নামছে। দিন যত যাবে আন্দোলন তত বাড়বে।”

যদিও দলের মধ্যেই অনেকে অন্য কথা বলছেন। এ দিন কোচবিহার সদরের দেওয়ানহাটে মিছিল করে তৃণমূল ছাত্র পরিষদ। দেওয়ানহাটে বাজারে তাঁরা একটি পথসভাও করেন। এখানেই জেলা তৃণমূলের এক নেতা বলেন, “দিল্লিতে সিপিএমের হাতে নেত্রী অপমানিত হওয়ার পর সবাই স্বতঃস্ফূর্ত ভাবে রাস্তায় নেমেছিল। কর্মী-সমর্থকদের ঢল নেমেছিল। এই ঘটনার পর অনেক ডাকাডাকি করে সবাইকে আনতে হচ্ছে কেউই বেশিক্ষণ থাকতে চাইছে না।”

ফরওয়ার্ড ব্লকের কোচবিহার জেলা সম্পাদক উদয়ন গুহ বলেন, “যত দিন যাবে তৃণমূলের থেকে সবাই সরে যাবে।” বিজেপির কোচবিহার জেলা সাধারণ সম্পাদক নিখিল রঞ্জন দে বলেন, “জোর করে ভয় দেখিয়ে মিটিং মিছিল করানো হচ্ছে।”

শনিবার বিকেলে আলিপুরদুয়ার শহরে মিছিল করে টাউন ব্লক তৃণমূল কংগ্রেস। রবিবার বিকেলেও আলিপুরদুয়ার জংশনে একই দাবিতে মিছিল হয়। সেখানেও লোকসংখ্যা ছিল আগের দিনের চেয়ে কম। একই ছবি দেখা গিয়েছে মালদহেও। এ দিন মালদহের রথবাড়িতেও টিএমসিপির উদ্যোগে মদন মিত্রের গ্রেফতারির প্রতিবাদ জানানো হয়। বিক্ষোভকারীরা প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী ও বিজেপির সর্বভারতীয় সভাপতি অমিত শাহের কুশপুতুলও দাহ করেন। তবে সেই কর্মসূচিতেও হাজিরা ছিল নগণ্য।

নেত্রীর নির্দেশ যাই হোক না কেন, সারদা কাণ্ডে মদন মিত্র গ্রেফতারের ঘটনায় পথে নেমে প্রতিবাদে অংশ নিতে চাইছেন না তৃণমূলের অনেক কর্মী। তাদের বক্তব্য, “বিষয়টি নিয়ে এলাকার মানুষ প্রশ্ন করছেন। আমরা উত্তর দিতে পারছি না। দলের কড়া নির্দেশ না থাকলেও মিছিলে যাওয়ার প্রশ্ন নেই।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন