কোলের শিশুকে ছুড়ে ফেলে বধূকে গণধর্ষণ

এক তরুণীকে তাঁর স্বামীর বন্ধুরাই গণধর্ষণ করেছে বলে অভিযোগ উঠল মালদহের চাঁচল থানার মালাহার এলাকায়। ওই মহিলা বেশ কয়েক মাস ধরে স্বামীর সঙ্গে থাকেন না। পাঁচ মাসের অসুস্থ মেয়েকে ডাক্তার দেখিয়ে ফেরার সময়ে স্বামীর এক বন্ধু তাঁকে কিছুটা পথ এগিয়ে দেওয়ার জন্য তাঁর মোটরবাইকে উঠতে বলেন।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

চাঁচল শেষ আপডেট: ১৬ জানুয়ারি ২০১৫ ০২:৩৭
Share:

এক তরুণীকে তাঁর স্বামীর বন্ধুরাই গণধর্ষণ করেছে বলে অভিযোগ উঠল মালদহের চাঁচল থানার মালাহার এলাকায়।

Advertisement

ওই মহিলা বেশ কয়েক মাস ধরে স্বামীর সঙ্গে থাকেন না। পাঁচ মাসের অসুস্থ মেয়েকে ডাক্তার দেখিয়ে ফেরার সময়ে স্বামীর এক বন্ধু তাঁকে কিছুটা পথ এগিয়ে দেওয়ার জন্য তাঁর মোটরবাইকে উঠতে বলেন। সেই তরুণী মেয়েকে কোলে নিয়ে সেই মোটরবাইকে উঠলে তাঁর স্বামীর বন্ধু একটি নির্জন জায়গায় নিয়ে গিয়ে ধর্ষণ করেন বলে অভিযোগ। স্বামীর আরও এক বন্ধু ও এক অচেনা ব্যক্তিও সে সময়ে তাঁকে ধর্ষণ করে বলে ওই মহিলা দাবি করেছেন। তাঁর শিশুকন্যার চিৎকারেই এলাকায় লোকজন চলে আসায় অভিযুক্তেরা পালায় বলে ওই মহিলা জানিয়েছেন।

বুধবার অসুস্থ শিশুকন্যাকে নিয়ে সামসিতে চিকিৎসকের কাছে গিয়েছিলেন ওই তরুণী। পরে কালভার্টের নীচ থেকে গ্রামবাসীরাই তরুণীকে উদ্ধার করেন। বৃহস্পতিবার দুপুরে তরুণীর অভিযোগ পেয়ে পুলিশ ঘটনার তদন্তে নেমেছে। তাঁর ডাক্তারি পরীক্ষাও করা হয়েছে। চাঁচলের এসডিপিও কৌস্তভদীপ্ত আচার্য বলেন, “অসুস্থ শিশুকন্যাকে ডাক্তার দেখিয়ে বাড়ি ফেরার সময় স্বামী পরিত্যক্তা তরুণীকে তিন জন ধর্ষণ করে বলে অভিযোগ। পুলিশ ঘটনার তদন্ত শুরু করেছে। অভিযোগ পেয়েই এলাকায় পুলিশ পাঠানো হয়েছে। অভিযুক্তদের খোঁজে তল্লাশি চলছে।”

Advertisement

পুলিশ সূত্রে জানা যায়, গাজলের ময়না এলাকার ওই তরুণী দু’বছর আগে হরিশ্চন্দ্রপুরের দ্বেগুনের বাসিন্দা এক রাজমিস্ত্রিকে বিয়ে করেন। সেই ব্যক্তির প্রথম পক্ষের স্ত্রী ছিল। বাড়ির অমতে ভিন্ন ধর্মে ওই বিয়ে করায় পরিবারের লোকেরা তাঁর সঙ্গে সম্পর্ক রাখতেন না। নয় মাসের অন্তঃসত্ত্বা অবস্থায় তরুণীকে ফেলে তাঁর স্বামী বাড়ি ছেড়ে চলে যান। বাপের বাড়িতে আশ্রয়ের জন্য গেলেও সেখানে তাঁর ঠাঁই হয়নি। এর পর মালাহার এলাকার এক মহিলা হাতুড়ে ওই তরুণীকে আশ্রয় দেন। তারপর থেকে সেখানেই থাকতেন তরুণী। আশ্রয়দাতা মহিলাকে তিনি মাসি বলে ডাকতেন।

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, শিশুকন্যাকে নিয়ে বুধবার বিকেলের ট্রেনে মালাহার থেকে সামসিতে আসেন তরুণী। চিকিৎসক দেখাতে দেরি হওয়ায় ফেরার ট্রেন পাননি তিনি। এরপর তার সঙ্গে দেখা হয় স্বামীর বন্ধু মানারুল ইসলামের। মানারুল পেশায় মাছ ব্যবসায়ী। বাড়ি পৌঁছে দেওয়ার কথা বলায় তার বাইকে উঠে পড়েন তরুণী। কিন্তু মালাহার ঢোকার আগে তিনঘরিয়া এলাকায় একটি নির্জন কালভার্টের কাছে বাইক নিয়ে দাঁড়িয়ে পড়ে মানারুল। ওই সময় তরুণী সেখানে পরিচিত মনি শেখ সহ আরও একজনকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখেন। তরুণী কিছু বুঝে ওঠার আগেই কোল থেকে শিশুকন্যাকে কেড়ে নিয়ে কালভার্টের উপরে ছুড়ে ফেলা হয় বলে অভিযোগ। তারপর অস্ত্র দেখিয়ে তাকে কালভার্টের তলায় টেনে নিয়ে তাকে ধর্ষণ করা হয় বলে অভিযোগ। ঘটনার সময় নির্জন রাস্তায় শিশুর চিৎকার শুনে বাসিন্দাদের আসতে দেখে তরুণীকে ফেলে পালিয়ে যায় অভিযুক্তরা।

পুলিশ জানায়, অভিযুক্তদের মধ্যে মানারুল ছাড়াও মনি শেখ নামে আরও একজনকে চিনতে পারলেও তৃতীয় জনকে ওই মহিলা চিনতে পারেনি। দু’জনের বাড়িই বিজলি এলাকায়। তৃতীয় জনের নাম জানতে না পারলেও তার বাড়ি কোথায় তা অবশ্য পুলিশ জানতে পেরেছে। এদিন চাঁচল থানায় ওই তরুণী বলেন, “স্বামীর বন্ধু হওয়ায় মানারুলকে চিনতাম। ওষুধ নিয়ে স্টেশনে এসে দেখি ট্রেন চলে গিয়েছে। পরিচিত হওয়ায় মানারুলের বাইকে উঠেছিলাম। কিন্তু বন্ধুদের ডেকে নিয়ে ও যে এমন সর্বনাশ করবে ভাবিনি।” এদিকে ডাক্তারি পরীক্ষার পর তরুণীকে নিয়ে তদন্ত শুরু করে পুলিশ। ওই সময় আচমকাই অভিযোগ তুলে নেওয়ার কথা বলেন তরুণীর আশ্রয়দাত্রী। যদিও পুলিশ তাঁর কথায় গুরুত্ব দেয়নি। আশ্রয়দাত্রীর অবশ্য দাবি, “অভিযুক্তরা ভালো নয়। বাড়িতে আমারও মেয়ে রয়েছে। তাই ভয়েও অভিযোগ তুলে নেওয়ার কথা বলি।” ওই তরুণীকে প্রয়োজনে হোমে রাখার বন্দোবস্ত করা হবে পুলিশ সূত্রে জানানো হয়েছে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন