জামুনিতে এখানেই জিটিএ-র উদ্যোগে তৈরি হচ্ছে ওয়াটার পার্ক। সেখানেই জমি দখলের অভিযোগ উঠেছে। ছবি: রবিন রাই।
জমি মালিককে ক্ষতিপূরণ না-দিয়ে প্রায় ৪০ বিঘা এলাকায় ‘ওয়াটার পার্ক’-এর কাজ শুরু করে বিপাকে পড়েছে গোর্খাল্যান্ড টেরিটোরিয়াল অ্যাডমিনিস্ট্রেশন (জিটিএ)। দার্জিলিং শহরের উপকণ্ঠে জামুনিতে ওই ওয়াটার পার্কের কাজ শুরু হয়েছে ২০১২ সালে। সম্প্রতি জমির মালিকদের তরফে অভিযোগ পেয়ে তদন্ত করে ওই এলাকায় ১৪৪ ধারা জারি করেন দার্জিলিঙের জেলাশাসক পুনীত যাদব। মঙ্গলবার জেলাশাসকের পক্ষ থেকে ওই বিজ্ঞপ্তি জারি হওয়ায় ওয়াটার পার্কের কাজ থমকে গিয়েছে। ঘটনাচক্রে, জমির মালিকরা এখন সকলেই তৃণমূলের সমর্থক। তৃণমূলের পাহাড় শাখাও জবরদস্তি জমি দখলের বিরোধিতা করতে আসরে নেমে পড়েছে। ফলে, ওয়াটার পার্কের কাজ কবে, কী ভাবে চালু হবে তা নিয়ে অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে।
দার্জিলিঙের জেলাশাসক বলেছেন, “জমি মালিকদের অভিযোগ পেয়ে তদন্ত করানো হয়েছে। কারণ, আইনে রয়েছে সরকারি কিংবা বেসরকারি কোনও প্রকল্পের জন্য জবরদস্তি জমি অধিগ্রহণ করা যায় না। সে জন্য ওই জমিতে দুমাসের জন্য ১৪৪ ধারা জারি হয়েছে। ওই সময় পেরোলে পরিস্থিতি ফের খতিয়ে দেখে পদক্ষেপ করা হবে।”
ক্ষতিপূরণ না দিয়ে জোর করে জমি নিয়ে প্রকল্পের কাজ শুরু হওয়ার বিষয়টি সামনে আসায় চরম অস্বস্তিতে পড়েছেন জিটিএ-তে ক্ষমতাসীন গোর্খা জনমুক্তি মোর্চার নেতারাও। দল সূত্রের খবর, গা-জোয়ারি করে জমি নেওয়ার ফলে যে বিপাকে পড়তে হবে সেই ব্যাপারে আগেই বিমল গুরুঙ্গকে সতর্ক করেছিলেন দলের নেতাদের একাংশ। কিন্তু, পরে আলোচনা করে সব ঠিক করে নেওয়া হবে বিমল গুরুঙ্গের ঘনিষ্ঠ নেতারা সেই আপত্তি উড়িয়ে দিয়েছিলেন। ওই সময়ে রাজ্যের শাসক দল তৃণমূলের সঙ্গে মোর্চার সুসম্পর্ক ছিল। লোকসভা ভোটের মুখে সেই সম্পর্ক তিক্ত হয়ে যায়। মোর্চার একাধিক নেতার অনুমান, তৃণমূলের সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন হওয়ার কারণেই এতদিন বাদে ওয়ার্টার পার্কের জমির বিষয়টিকে সামনে রাখা হচ্ছে। ওই পার্কটি যেকানে হচ্ছে, সেই জামুনি এলাকার জিটিএ কাউন্সিলর তথা মোর্চা নেতা কাজিমান লোহাগুণ বলেন, “জমির মালিকদের সঙ্গে আলোচনা করেই কাজ শুরু হয়। তখনই ঠিক হয়, বাজার দর অনুযায়ী সকলকে টাকা দেওয়া হবে। সে জন্য সমীক্ষাও চলছে। এতদিন বাদে সেখানে ১৪৪ ধারা জারি করা হল। সকলেই ব্যাপারটা বুঝতে পারছেন। আিনি প্রক্রিয়া নিয়ে কিছু বলার নেই। এটা বলতে পারি, সমীক্ষা শেষ হলে জমির মালিকদের প্রাপ্য টাকা দেওয়া হবে।”
জামুনি এলাকার বাসিন্দা মণিলাল তামাঙ্গদের প্রায় ৫ বিঘা জমি ওই ওয়াটার পার্কের মধ্যে রয়েছে। যেখানে সুইমিং পুল সহ প্রকল্পের সিংহভাগ কাজকর্ম প্রায় সম্পূর্ণ। মণিবাবুর মতো আরও ৯ জনের জমি রয়েছে সেখানে। ওই জমিতে চাষবাদ করে সংসার চালাতেন সকলে। পার্কের জন্য জিটিএ জমি নেওয়ার প্রস্তাব দেওয়ায় সকলে বাজার দরে ক্ষতিপূরণ চান। মণিবাবু বলেন, “২০১২ সাল থেকে আশ্বাস শুনছি, আলোচনা করে ক্ষতিপূরণ দেওয়া হবে। আজও টাকা পাইনি। কষ্টেসৃষ্টে দিন চলছে। সে জন্য জেলাশাসকের দ্বারস্থ হয়েছি। টাকা না পেলে যে কী হবে জানি না।” মণি তামাঙ্গের পাশে দাঁড়িয়ে তৃণমূলের পাঙান শাখার আহ্বায়ক বিন্নি শর্মা বলেছেন, “জোর করে জমি নেওয়া যাবে না। এটা আমাদের নেত্রী সব সময় বলে তাকেন। কাজেই আমরা ওই পরিবারগুলির অধিকার আদায়ের জন্য লড়ব।”
জিটিএ-এর পর্যটন বিভাগের দায়িত্বে রয়েছেন যিনি, সেই দাওয়া লেপচা ভোট প্রক্রিয়া চুকলে বিষয়টি নিয়ে স্পষ্ট করে কিছু মন্তব্য করবেন বলে জানিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘‘যত দূর জানি জিটিএ-এর পক্ষ থেকে চিঠি চালাচালি হচ্ছে। লোকসভা ভোট বিধি বলবৎ রয়েছে। সে জন্য বিশদে কিছু বলতে পারব না। ভোটের পরে বলব।”