কনকনে ঠান্ডায় উষ্ণ বর্ষবরণ পাহাড়-সমতলে

আলোর মালায় চেহারাই বদলে গিয়েছে শিলিগুড়ির। কলকাতার পার্ক স্ট্রিটের সঙ্গে যেন পাল্লা দিচ্ছে হিলকার্ট রোড। এয়ারভিউ মোড় থেকে হাসমি চক, যতদূর চোখ যায়, উত্‌সবের মেজাজ। নানা হোটেল, রেস্তোরাঁয় মাঝরাত পর্যন্ত গানবাজনার আসর। কোথাও আগুন জ্বালিয়ে হুল্লোড়। কোথাও আকাশে উড়ল আতসবাজি। কোথাও মধ্য রাতে ‘হ্যাপি নিউ ইয়ার’ লেখা বেলুন উড়িয়ে দেওয়া হল। পাহাড় থেকে সমতল, কনকনে ঠাণ্ডা বাতাস উপেক্ষা করে এভাবেই ২০১৫ সালকে বরণের দৃশ্য দেখা গেল বুধবার গভীর রাতে।

Advertisement

কিশোর সাহা

শিলিগুড়ি শেষ আপডেট: ০১ জানুয়ারি ২০১৫ ০২:১৭
Share:

আলোর মালায় চেহারাই বদলে গিয়েছে শিলিগুড়ির। কলকাতার পার্ক স্ট্রিটের সঙ্গে যেন পাল্লা দিচ্ছে হিলকার্ট রোড। এয়ারভিউ মোড় থেকে হাসমি চক, যতদূর চোখ যায়, উত্‌সবের মেজাজ। নানা হোটেল, রেস্তোরাঁয় মাঝরাত পর্যন্ত গানবাজনার আসর। কোথাও আগুন জ্বালিয়ে হুল্লোড়। কোথাও আকাশে উড়ল আতসবাজি। কোথাও মধ্য রাতে ‘হ্যাপি নিউ ইয়ার’ লেখা বেলুন উড়িয়ে দেওয়া হল। পাহাড় থেকে সমতল, কনকনে ঠাণ্ডা বাতাস উপেক্ষা করে এভাবেই ২০১৫ সালকে বরণের দৃশ্য দেখা গেল বুধবার গভীর রাতে।

Advertisement

ফি বছর পুজোয় হিলকার্ট রোডের চেহারা বদলে যায়। তা হলে বড়দিনের উত্‌সবের মরসুমে কেন ঝলমলে থাকবে না? শহরপ্রেমীদের কাছ থেকে বার্তা পেয়ে আসরে নেমে পড়েন উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী গৌতম দেব। বাহারি আলোয় সেজে ওঠে মূল রাস্তাটি। যা কি না মুগ্ধ করেছে দেশ-বিদেশের পর্যটকদের। ট্যুর অপারেটর সংগঠনের তরফে জানা গিয়েছে, একাধিক বিদেশি পর্যটকের দল বড়দিনের ছুটিতে পাহাড় ও ডুয়ার্সে থাকে। যাতায়াতের পথে শিলিগুড়িকে বড়দিন ও ‘নিউ ইয়ার’-এর জন্য রঙিণ ও ঝলমলে দেখে উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেছেন।

বড়দিন থেকে ‘নিউ ইয়ার’ বাহারি আলোয় সেজেছে উত্তরের অনেক জেলার চার্চ, দোকানপাটও। দার্জিলিং পাহাড় থেকে ডুয়ার্সের লাটাগুড়ি, সর্বত্রই উপচে পড়ছে ভিড়। দার্জিলিঙের এলগিন হোটেলের কথা ধরা যাক। ফি বছর দার্জিলিঙে বড়দিন কাটাবেন বলেন জার্মানি, ইংল্যান্ড, অষ্ট্রেলিয়ার একদল পর্যটক ওই হোটেলে ওঠেন। তাঁরা বড়দিন থেকে টানা সান্দাকফু, ফালুট ঘুরে বর্ষশেষের হোটেলে আয়োজিত জমাটি অনুষ্ঠানে অংশ নেন। এলগিন হোটেলের ম্যানেজিং ডিরেক্টর ডায়মন্ড ওবেরয় বললেন, “নতুন বছর সব সময়েই আমাদের হোটেলে বর্ণময় অনুষ্ঠান হয়ে থাকে। যে অতিথিরা বর্ষশেষে থাকেন, তাঁরা যাতে জমজমাট ভাবে নতুন বছরটা শুরু করতে পারেন, সে জন্য আয়োজনে ত্রুটি থাকে না। এমনও অনেকে রয়েছেন, যাঁরা বড়দিন থেকে টানা ৩ জানুয়ারি পর্যন্ত দার্জিলিঙে থাকার জন্যই ফি বছর আসেন।” এবার এলগিনের তরফে কালিম্পঙের গাঁধী আশ্রমের খুদেদের দিয়ে অনুষ্ঠান করানো হবে। হোটেল কর্তৃপক্ষ জানান, ওই হোটেলে ২৫টি রুম। সবই ৩ জানুয়ারি পর্যন্ত ‘বুকড’।

Advertisement

লাডেন লা রোডের আনন্দ প্যালেসের ম্যানেজারও শীতের মরসুমে ঠাসাঠাসি ভিড় থাকায় খুশি। তিনি বলেন, “আমাদের ৬০টি ঘরের সবই ভর্তি। জানুয়ারির ৪ তারিখ পর্যন্ত। আমরা সে ভাবে কোনও অনুষ্ঠানের আয়োজন করিনি। অতিথিরা নিজেদের মতো কাটাবেন। তবে নতুন বর্ষশেষের মেনু তালিকায় অভিনব কিছু খাবার সংযোজন করেছেন হোটেল কর্তৃপক্ষ। দার্জিলিংয়ের এতিহ্যমন্ডিত জিমখানা ক্লাবে বর্ষবরণের অনুষ্ঠান বরাবরই ভিন্ন মাত্রার। এবারও সেখানে অবশ্য টিকিট কেটে খাবার-পানীয় নিতেও উপচে পড়েছে ভিড়। ক্লাবের সহকারী সচিব সতীশ গুরুঙ্গের বক্তব্য, “মাঝরাত পর্যন্ত ডিজে-র আসর। গানবাজনার মধ্যে দিয়ে নতুন বছরকে স্বাগত জানানো হয়েছে।”

বালুরঘাট থেকে রায়গঞ্জ, মালদহ, সর্বত্রই মাঝরাতে উচ্ছ্বাসের সুর শোনা গিয়েছে। কোথাও ক্লাবে, কোথাও রিসর্টে, কোথাও হোটেলে নানা অনুষ্ঠান। ডুয়ার্সের নানা রিসর্টে জঙ্গল ঘেরা এলাকায় ‘ক্যাম্প ফায়ার’ ঘিরে গোল হয়ে বসে বর্ষবরণের আয়োজনও ছিল অনেক জায়গায়। শিলিগুড়িতে উত্তরায়ণ ক্লাব থেকে শুরু করে রেস্তোরাঁয় গভীর রাতেও নাচগানের দৃশ্য চোখে পড়েছে।

সন্ধ্যা থেকে প্রায় রাত ২ টো পর্যন্ত নানা অনুষ্ঠান। ফলে, পুলিশের তরফে বাড়তি সতর্ক ছিল সর্বত্রই। বিশেষত, মদ্যপ অবস্থায় দুরন্ত গতিতে ছুটে চলা বাইক রুখতে প্রতিটি জেলায় পুলিশ বিশেষ নজরদারির ব্যবস্থা করেছিল। রাজ্য পুলিশের উত্তরবঙ্গের আইজি জাভেদ শামিম বর্ষবরণের অনুষ্ঠান উপলক্ষ্যে রাতভর রাস্তায় বাড়তি পুলিশ পাহারার নির্দেশ জারি করেছিলেন।

সহ প্রতিবেদন: রেজা প্রধান
নববর্ষের উদ্‌যাপনে আলোয় সেজেছে হিলকার্ট রোড। ছবি: বিশ্বরূপ বসাক।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন