করলার জলেই দিশা দমকলের

একের পর এক দমকলের গাড়ির জল ফুরিয়ে গিয়েছিল। কাছেপিঠে কোনও জলাধার ছিল না। বৃহস্পতিবার মাঝরাতে তখন ক্রমেই ভয়াল আকার নিচ্ছে আগুন। তা নেভানোর কাজ কী ভাবে হবে তা নিয়ে রীতিমতো আতঙ্কিত হয়ে পড়েন দমকলকর্মীরা। কিন্তু, শহরের বুক চিরে যাওয়া নদী করলাই বাঁচিয়ে দিল দিনবাজারকে।

Advertisement

বিশ্বজ্যোতি ভট্টাচার্য

শেষ আপডেট: ০৯ মে ২০১৫ ০৩:০৯
Share:

ধোঁয়ার রেশ ছিল আলো ফোটার পরেও। ছবি: সন্দীপ পাল।

একের পর এক দমকলের গাড়ির জল ফুরিয়ে গিয়েছিল। কাছেপিঠে কোনও জলাধার ছিল না। বৃহস্পতিবার মাঝরাতে তখন ক্রমেই ভয়াল আকার নিচ্ছে আগুন। তা নেভানোর কাজ কী ভাবে হবে তা নিয়ে রীতিমতো আতঙ্কিত হয়ে পড়েন দমকলকর্মীরা। কিন্তু, শহরের বুক চিরে যাওয়া নদী করলাই বাঁচিয়ে দিল দিনবাজারকে।

Advertisement

বৃহস্পতিবার দুঃস্বপ্নের রাতের ঘোর কাটেনি শুক্রবার দুপুরেও। দিনবাজারের কাছে করলা সেতুর উপরে দাঁড়ানো ইঞ্জিনের পাশে কর্মরত রাতজাগা এক দমকল কর্মী জানান, চোখের সামনে দাউদাউ আগুন দেখেও গাড়ি নিয়ে দৌড়ে বেড়াতে হয়েছে। ইঞ্জিনের সংখ্যা বাড়তে জলের সামান্য সমস্যা দেখা দেয়। দুশ্চিন্তায় পড়লেও শেষ পর্যন্ত সমস্যা হয়নি। কারণ, করলা নদী। তবে ঘিঞ্জি বাজারে ঢোকার রাস্তা না পেয়ে দিশেহারা হতে হয় দমকলকে। ইঞ্জিন দাঁড়াবে যে, সেই যো নেই। যে যার মতো ফুটপাত রাস্তা দখল করে দোকান বাড়িয়েছে। অনেক কসরতের পরে পাইপ ফেলে জল টেনে নিয়ে যেতে হয়েছে। জলপাইগুড়ি দমকলের অফিসার প্লাবন মোদক বলেন, “১২টি ইঞ্জিন ঢোকার রাস্তা খুঁজে পায়নি। দিশেহারা পরিস্থিতি। তবু করলা ছিল তাই রক্ষা!”

পানায় ভরা করলাই শেষমেশ আগুন থেকে রক্ষা করল বাকি বাজারকে। নদী থেকে শুক্রবার বেলা ১১টা পর্যন্ত পাম্প চালিয়ে জল তুলেছে দমকলের একাধিক ইঞ্জিন। যদিও বৃহস্পতিবার রাতভর পুরসভা নিজস্ব পাম্প হাউস চালু রাখার ব্যবস্থা করে। দিনবাজারে জলের ট্যাঙ্ক পাঠানোর ব্যবস্থা করা হয়। কিন্তু ওই জলে কি দমকলের চাহিদা মেটেনি। সমাজ ও নদী বাঁচাও কমিটির আহ্বায়ক সঞ্জীব চট্টোপাধ্যায় বলেন, “শহরবাসী আবার একবার টের পেল করলার গুরুত্ব।”

Advertisement

কেন আরও একবার? উত্তরবঙ্গ বিশ্ব বিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগের প্রাক্তন প্রধান আনন্দগোপাল ঘোষ বলেন, “এটাই প্রথম অগ্নিকাণ্ড নয়। জলপাইগুড়ি শহর জুড়ে এক সময় কাঠের বাড়ি ছিল। মাঝে মাঝেই অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা লেগেই ছিল। করলার জলে সেই আগুন নেভানো হয়েছে।” গবেষক উমেশ শর্মা জানান, নদীপথে যোগাযোগের সুবিধার জন্য ১৮৭৮ সালে বৈকুণ্ঠপুরের রানি জগদীশ্বরী দিনবাজার তৈরি করেন। ১৮৮৫ সালে পুরসভা বাজার অধিগ্রহণ করে। বৃহস্পতিবার রাতে অগ্নিকাণ্ডে যে টিনশেড বাজার ভস্মীভূত হয়েছে সেটা তৈরি করেন ফণীন্দ্রদেব রায়কত। ১৮৯৩ সালে ওই বাজার পুড়ে ছাই হয়। এর পরে করলা দিয়ে অনেক জল বয়েছে। শহরের আদল পাল্টেছে। কিন্তু পাল্টায়নি দিনবাজার।

শুক্রবার প্রশাসনের তরফে পুড়ে যাওয়া বাজার নতুন করে তৈরির আশ্বাস দেওয়া হয়। ব্যবসায়ীদের বলা হয়েছে তাঁরা কী চান সেটা যেন পুরসভাকে জানানো হয়। আজ, শনিবার দিনবাজারের ব্যবসায়ীরা আলোচনায় বসবেন। আনন্দচন্দ্র কলেজের অর্থনীতি বিভাগের প্রধান সুদীপ চক্রবর্তীর পরামর্শ, “দিনবাজার জলপাইগুড়ি শহরের অর্থনৈতিক প্রাণকেন্দ্র। পুরনো পরিকাঠামোর বিপজ্জনক অবস্থা হয়েছে। পুরো বাজার ঢেলে সাজানো জরুরি। অন্তত সেই প্রস্তাব নেওয়া হোক।” তিনি করলার নাব্যতা ফেরানোর দাবিতে সরব। সুদীপবাবুর সঙ্গে একমত দিনবাজার চেম্বার অব কমার্সের সাধারণ সম্পাদক সাধন বসু এবং দিনবাজার ব্যবসায়ী কল্যাণ সমিতির সম্পাদক দেবু চৌধুরীও। সাধনবাবু বলেন, “ব্যবসা এবং কর্মসংস্থানের সুযোগ বাড়াতে মাস্টার প্ল্যান তৈরি করে দিনবাজারকে ঢেলে সাজানো জরুরি। পুরসভা এবং প্রশাসনের কাছে ওই দাবি রাখা হবে। করলা নদীকে প্রাণবন্ত করে তোলার ব্যবস্থাও নেওয়া দরকার।”

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement
Advertisement