চা নিলামে দেশে সবার সেরা শিলিগুড়ি

চা বিক্রিতে দেশের সব নিলাম কেন্দ্রকে ছাপিয়ে গেল শিলিগুড়ি। গত বছরে শিলিগুড়ি কেন্দ্র থেকে ১১৮ মিলিয়ন কেজি চা নিলামে বিক্রি হয়েছে। যার মূল্য ১৪৮৩ কোটি টাকা। যা কিনা শিলিগুড়ি নিলাম কেন্দ্রের মাইলফলক এবং দেশের মধ্যে রেকর্ড তৈরি করেছে বলে কর্তৃপক্ষের দাবি।

Advertisement

অনির্বাণ রায়

শিলিগুড়ি শেষ আপডেট: ১৩ মার্চ ২০১৫ ০২:৩৪
Share:

চা বিক্রিতে দেশের সব নিলাম কেন্দ্রকে ছাপিয়ে গেল শিলিগুড়ি। গত বছরে শিলিগুড়ি কেন্দ্র থেকে ১১৮ মিলিয়ন কেজি চা নিলামে বিক্রি হয়েছে। যার মূল্য ১৪৮৩ কোটি টাকা। যা কিনা শিলিগুড়ি নিলাম কেন্দ্রের মাইলফলক এবং দেশের মধ্যে রেকর্ড তৈরি করেছে বলে কর্তৃপক্ষের দাবি।

Advertisement

এই সাফল্যকে উদযাপন করতে বৃহস্পতিবার শিলিগুড়ি নিলাম কেন্দ্রে একটি আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়েছিল। আলোচনায় উপস্থিত ছিলেন উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী গৌতম দেব। নিলাম কেন্দ্র কর্তৃপক্ষের তরফে মন্ত্রীর কাছে কিছু সমস্যা এবং পরিকাঠামো উন্নতির বেশ কিছু সুপারিশও জানানো হয়েছে। কর্তৃপক্ষের দাবি, সরকারের তরফে পরিকাঠামোর সাহায্য পেলে আগামী ২০১৮ সালের মধ্যে এই কেন্দ্র থেকে ১৫০ মিলিয়ন কেজি চা পাতা বিক্রি সম্ভব। সরকারের তরফে কেন্দ্রকে সাহায্যের আশ্বাস দিয়েছেন মন্ত্রী।

নিলাম কেন্দ্র সূত্রে জানা গিয়েছে, ২০১৪ সালের জানুয়ারি থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত সিটিসি এবং ডাস্ট চা মিলিয়ে রেকর্ড তৈরি হয়েছে। যার মধ্যে সিটিসি চা বিক্রিও দেশের মধ্যে নজির গড়েছে বলে কর্তৃপক্ষের দাবি। গত বছরে শুধুমাত্র সিটিসি চা বিক্রি হয়েছে ১০৩ মিলিয়ন কেজির বেশি। দেশের ৭টি নিলাম কেন্দ্রের কোনটির বিক্রির পরিমাণ এর ধারে কাছে নেই বলে পরিসংখ্যানে দেখা গিয়েছে। ১৯৭৬ সালে প্রতিষ্ঠার পরে নিলাম কেন্দ্রেরও এটি রেকর্ড বলে জানানো হয়েছে। নিলাম কেন্দ্রের সম্পাদক পঙ্কজ দাস বলেন, “কলকাতা থেকে কোয়েম্বাটুর দেশের যত নিলাম কেন্দ্র রয়েছে তার মধ্যে আমাদের কেন্দ্র তেকেই গত বছরে সর্বাধিক চা বিক্রি হয়েছে। এটি কেন্দ্রের বড় সাফল্য। এই সাফল্যকে ধরে রাখতে কেন্দ্রের কিছু পরিকাঠামোগত উন্নতির প্রয়োজন। সে বিষয়ে মন্ত্রীকে জানানো হয়েছে।”

Advertisement

কলকাতা, গুয়াহাটি, জলপাইগুড়ি, কোচিন, কুন্নর, কোয়েম্বাটুর এবং শিলিগুড়ি মিলিয়ে চলতি বছরে ৫২১ মিলিয়ন কেজি চা পাতা বিক্রি হয়েছে। যার মধ্যে ২২ শতাংশই শিলিগুড়ি নিলাম কেন্দ্র থেকে বিক্রি হয়েছে। সূত্রের খবর দেশের ৬টি নিলাম কেন্দ্রে সিটিসি এবং ডাস্ট চা বিক্রি হয়। শুধুমাত্র কলকাতাতে এই দুই ধরণের চা ছাড়াও অর্থডক্স চা পাতাও বিক্রি হয়। ২০০৭ সাল থেকেই শিলিগুড়ি চা নিলাম কেন্দ্রের বিক্রি লাফিয়ে বাড়তে শুরু করে। ২০১৩ সালে কেন্দ্রের বিক্রির পরিমাণ ১০০ মিলিয়ন ছুঁয়ে ফেলে। তার পরের বছরই দেশের মধ্যে শীর্ষে পৌঁছে গিয়েছে এই কেন্দ্র। কর্তৃপক্ষের তরফে দাবি করা হয়েছে, চা পাতার গুণমান এবং ভাল দাম পাওয়ার কারণেই শিলিগুড়ি কেন্দ্রে চা পাতা আসার পরিমাণ এবং বিক্রি দুইই বেড়েছে। গত বছর শিলিগুড়ি কেন্দ্রের দড়পরতা দাম ছিল ১২৫ টাকা প্রতি কেজি।

১৯৭৬ সালে কেন্দ্র প্রতিষ্ঠার পরে প্রথম কয়েক বছর অস্থায়ী ভভনে নিমাল চলে। ১৯৭৯ সালে কেন্দ্রের স্থায়ী ভবনের শিলান্যাস হয়। গোনায় নিলাম কেন্দ্রে বিক্রেতার সংখ্যা ছিল মাত্র ১৬ জন। ১৩২ জন ক্রেতা এবং ৭ জন ব্রোকার ছিলেন। বর্তমানে এই কেন্দ্রে বিক্রেতা সদস্যের সংখ্যা পাঁচশো ছাড়িয়েছে, ক্রেতা সদস্যের সংখ্যাও পাঁচশো ছুঁইছুঁই। এই কেন্দ্রের বিক্রির সঙ্গহে অন্তত ৫০ হাজার চা শ্রমিক প্রতক্ষ্য ভাবে যুক্ত বলে জানানো হয়েছে।

এ দিনের আলোচনা সভায় সাফল্যের পাশাপাশি নিলাম কেন্দ্রের সমস্যা এবং সমাধানের বিষয়গুলিও তুলে ধরা হয়েছে। শিলিগুড়িতে টি পার্কের কাজ পুরোদমে চালু হলে, চা পাতা সংরক্ষণ করা সহ নানা পরিকাঠামো তৈরি হবে বলে দাবি করা হয়েছে। যার ফলে নিলাম কেন্দ্রে বিক্রির জন্য চা পাতা আসার পরিমাণও বাড়বে বলে কর্তৃপক্ষের আশা। কর্তৃপক্ষ সহ ক্রেতা বিক্রেতাদের আশ্বস্ত্য করে এ দিনের অনুষ্ঠানে উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী গৌতমবাবু বলেন, “এই সাফল্যকে বজায় রাখতে হবে। টি পার্কের বিষয়ে রাজ্যের অর্থমন্ত্রীর সঙ্গে আমার নিয়মিত আলোচনা হয়। খুব শিগগিরি খুশির খবর শোনাতে পারব। শিলিগুড়ি কেন্দ্রের পরিকাঠামো বাড়াতে রাজ্য সরকার যথাসাধ্য পদক্ষেপ করবে।”

গত বছরের রেকর্ড ছাপিয়ে, ১৫০ মিলিয়ন কেজি চা বিক্রির লক্ষ্য ছুঁতে এখন সরকারি আশ্বাস পূরণের দিকেই তাকিয়ে শিলিগুড়ির চা শিল্পের সঙ্গে যুক্ত সকলে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন