মোটরবাইকের বদলে গাঁজা। গাঁজার বদলে পিস্তল।
শিলিগুড়ি লাগোয়া এলাকায় এমনই এক চক্র জাঁকিয়ে বসেছে বলে সন্দেহ পুলিশের। পুলিশ জেনেছে, শহর ও তার আশপাশে মোটরবাইক চুরি করে তার বিনিময়ে গাঁজা কিনছে দুষ্কৃতীরা। পরে তা বাইরে পাচার করে বিহার থেকে আমদানি করা হচ্ছে পিস্তল। শিলিগুড়ির পুলিশ কমিশনারেটের এডিসিপি ভোলানাথ পান্ডে বলেন, “সম্প্রতি কয়েকটি ঘটনায় এমন অভিযোগ পেয়েছি। বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে দেখা হচ্ছে।”
পুলিশ কর্তাদের পক্ষ থেকে বিষয়টি নিয়ে ইতিমধ্যেই কমিশনারেটের অধীনের পাঁচটি থানা ও জেলার অন্য থানাগুলিকেও সতর্ক করা হয়েছে। তবে শহর ও লাগোয়া এলাকায় বেআইনি পিস্তলের রমরমা নতুন কিছু নয় বলেও পুলিশের একাংশের দাবি।
পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, শহরে মোটরবাইক চুরির কয়েকটি চক্র রয়েছে। তার মধ্যে কয়েকটি চক্র মোটরবাইক চুরি করলেও শুধু টাকা রোজগারই তাদের উদ্দেশ্য নয়। চোরাই মোটরবাইক বিক্রি করে যে টাকা হাতে আসে তা দিয়ে উত্তর-পূর্ব ভারতের বিভিন্ন রাজ্য থেকে তারা গাঁজা কিনে আনে। অসম, মেঘালয়, মণিপুরে তৈরি গাঁজা কিনে বেশিরভাগই নেপাল হয়ে শিলিগুড়িতে নিয়ে আসা হচ্ছে। সেখান থেকে উত্তরবঙ্গের বিভিন্ন জায়গায় তা পাঠিয়ে দেওয়া হচ্ছে। এতে লাভের পরিমাণ আরও বেশি হয়ে হাতে আসে। সেই টাকা নিয়ে তারা বিহারে গিয়ে সেখান থেকে সস্তায় অত্যাধুনিক পিস্তল কিনে শিলিগুড়িতে চড়া দামে বিক্রি করে। এতে মোটরবাইক চুরির অর্থ প্রায় তিন-চার গুণ হয়ে ফিরে আসে। কয়েকটি ঘটনায় ধৃতদের জেরা করে এই তথ্য মিলেছে বলে পুলিশ জানিয়েছে।
নিউ জলপাইগুড়ি ফাঁড়ি এলাকাতেই মোটরবাইক চুরিতে ধৃতদের সংখ্যা সবচেয়ে বেশি। এই বিষয়ে গোপনে তদন্ত শুরু করেছে শিলগুড়ি পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগ। শিলিগুড়ির এসিপি (ডিডি) তপনআলো মিত্র বলেন, “বিষয়টি অত্যন্ত স্পর্শকাতর। আমরা দ্রুত এ ব্যপারে পদক্ষেপ করব।”
পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, শিলিগুড়িতে লাইসেন্সযুক্ত পিস্তলের সংখ্যা ১২টির বেশি নয়। এর মধ্যে অনেকে লাইসেন্স নবীকরণের জন্য আবেদন করেননি। বাকি সবই বেআইনি। পুলিশ সূত্রে খবর, এই পিস্তলের একটা বড় অংশ ব্যবহার হচ্ছে এনজেপি স্টেশন ও লাগোয়া এলাকায়। এ ছাড়া বাগরাকোটের লিচুবাগান, চাকুপট্টি, টিকিয়াপাড়া, খালপাড়া, বিদ্যাসাগর রোড, ডাঙ্গিপাড়া, চানাপট্টি, মহানন্দাপাড়া, গুরুঙ্গ বস্তি, চম্পাসারি, বাঘাযতীন কলোনি এলাকায় পিস্তল ঘুরছে অল্পবয়সী ছেলেদের হাতে। মাটিগাড়া থানার গোটা এলাকাতেই পিস্তল বাহিনীর দাপট। বিভিন্ন সময়ে এই এলাকায় গুলির লড়াইয়ে জড়িয়ে পড়েছে দুষ্কৃতীরা। বাগডোগরাতেও কয়েকটি গুলি চালানোর অভিযোগ হলেও কিনারা হয়নি। কয়েক মাস আগে তৃণমূলের এক কৃষক নেতাকে নিজের বাড়িতে গুলি করে খুন করে দুষ্কৃতীরা। বাগরাকোটে গুলি চালানোয় অভিযুক্তরা এখনও অধরা। পুলিশ জানিয়েছে, তদন্ত চলছে। যদিও শহরবাসীর বক্তব্য, এই উদ্যোগে ঘাটতি রয়েছে।