ছাত্রী-খুনের তদন্তে ঢিলেমি, অভিযোগ পুলিশের বিরুদ্ধে

সালিশি সভা থেকে নিয়ে গিয়ে দশম শ্রেণির এক ছাত্রীকে গণধর্ষণ ও খুনের মতো গুরুতর অভিযোগের পরেও তদন্তে তত্‌পরতা দেখাল না পুলিশ। সোমবারের ওই মর্মান্তিক ঘটনার পরদিনই ছাত্রীর বাবা ধূপগুড়ি থানায় অভিযোগ দায়ের করেন মোট ১৩জনের বিরুদ্ধে। পুলিশ বুধবার গ্রেফতার করেছে কেবল ১৫ বছরের এক কিশোরকে। বিরোধীদের একাংশের দাবি, মূল অভিযুক্তদের মধ্যে তৃণমূলের এক কাউন্সিলর-সহ নেতা-কর্মীরা রয়েছেন বলেই পুলিশ তদন্তে ঢিলে দিয়েছে।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

জলপাইগুড়ি ও ধূপগুড়ি শেষ আপডেট: ০৪ সেপ্টেম্বর ২০১৪ ০২:৫২
Share:

সালিশি সভা থেকে নিয়ে গিয়ে দশম শ্রেণির এক ছাত্রীকে গণধর্ষণ ও খুনের মতো গুরুতর অভিযোগের পরেও তদন্তে তত্‌পরতা দেখাল না পুলিশ। সোমবারের ওই মর্মান্তিক ঘটনার পরদিনই ছাত্রীর বাবা ধূপগুড়ি থানায় অভিযোগ দায়ের করেন মোট ১৩জনের বিরুদ্ধে। পুলিশ বুধবার গ্রেফতার করেছে কেবল ১৫ বছরের এক কিশোরকে। বিরোধীদের একাংশের দাবি, মূল অভিযুক্তদের মধ্যে তৃণমূলের এক কাউন্সিলর-সহ নেতা-কর্মীরা রয়েছেন বলেই পুলিশ তদন্তে ঢিলে দিয়েছে।

Advertisement

পুলিশের ভূমিকায় স্থানীয় বাসিন্দারাও ক্ষুব্ধ। তাঁদের অভিযোগ, ধূপগুড়ি থানা ক্রমাগত রেল পুলিশের উপর তদন্তভার চাপাতে চাইছে। ওই ছাত্রীর বাবা থানাতেই অভিযোগ দায়ের করেন। পুলিশের একাংশের বক্তব্য, বিধি অনুযায়ী অভিযোগ পেয়ে মামলা দায়ের করা উচিত ছিল ধূপগুড়ি থানারই। কিন্তু, ধূপগুড়ি থানা অভিযোগ নথিভুক্ত করলেও নির্দিষ্ট কোনও ধারায় মামলা দায়ের করেনি। যে হেতু ছাত্রীর দেহটি রেল লাইনে মিলেছে, তাই অভিযোগপত্র ময়নাগুড়ি জিআরপি-তে পাঠিয়ে দিয়েছে।

পক্ষান্তরে, রেল পুলিশের অফিসারদের একাংশের যুক্তি, দেহটি লাইনে মিললেও সালিশি সভার গোলমাল, পরে বাড়ি বা সভাস্থলের আশেপাশের এলাকা থেকে নিখোঁজ হওয়ার ঘটনা ধূপগুড়ি থানার এলাকায় ঘটেছে। তাই ধূপগুড়ি থানা অভিযোগ পেয়ে মামলা রুজু করে তার পর জিআরপি-এর সাহায্য চাইতে পারত।

Advertisement

ঘটনার গুরুত্বের প্রেক্ষিতে পুলিশের নিষ্ক্রিয়তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে সরকারি মহলেও। সোমবার রাতে ধূপগুড়ি থানার পুর এলাকার ৯ নম্বর ওয়ার্ডের তৃণমূল কাউন্সিলার নমিতা রায়ের স্বামী-সহ এলাকার তিন তৃণমূল নেতা সালিশি সভায় এক জনকে মারধর করেন বলে অভিযোগ। মৃত ছাত্রীর বাবা এলাকার বাসিন্দা অনিল বর্মনের থেকে পাওয়ার টিলার ভাড়া করেছিলেন। তিনি পুরো ভাড়া মেটাননি বলে অভিযোগ পেয়ে সালিশি সভা বসে। মৃত ছাত্রীর বাবাকে চার হাজার টাকা জরিমানা করা হয়, দিতে না চাইলে মারধর করা হয় বলে অভিযোগ।

ওই ছাত্রী ঘটনার প্রতিবাদ করলে তাকেও নানা ভাবে হেনস্থা করা হয় বলে অভিযোগ। সালিশি সভার কেউ কেউ ‘থুতু চাটানো’ হবে বলেও ছাত্রীকে হুমকি দেয় বলে পরিবারের তরফে দাবি করা হয়েছে। মঙ্গলবার ভোরে বাড়ি কিছু দূরের রেললাইন থেকে ছাত্রীর দেহ উদ্ধার হয়। বাড়ির লোকজন ধূপগুড়ি থানায় অভিযোগ জানালেও পুলিশ তা নিতে গড়িমসি করে। পরে তা স্রেফ নথিভুক্ত করে রেল পুলিশের কাছে পাঠিয়ে দেয়।

যে হেতু সালিশি সভায় মারধরের অভিযোগে এলাকার তৃণমূলের নেতা-কর্মীদের নাম রয়েছে, তাই ধূপগুড়ি থানা মামলা রুজু করেনি বলে অভিযোগ করেছেন সিপিএম, বিজেপি সহ বিরোধী দলের নেতা-কর্মীরা। জলপাইগুড়ির পুলিশ সুপার কুণাল অগ্রবাল অবশ্য বলেন, “দেহটি রেল লাইনে মিলেছে। তাই অভিযোগ নথিভুক্ত করেই রেল পুলিশকে পাঠানো হয়েছে। পরে একজনকে গ্রেফতার করে জিআরপির হাতে তুলে দেওয়া হয়েছে। তিনজনকে জিজ্ঞাসাবাদ চলছে।”

মৃতা ছাত্রীর মায়ের অভিযোগ, “পুলিশ তো তদন্তই করছে না। কাউন্সিলরের স্বামী সকলের সামনে দিয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছে।” বুধবার ৯ নম্বর ওয়ার্ডের তৃণমূল কাউন্সিলর নমিতা রায়ের স্বামীকে বাড়িতে মেলেনি। কাউন্সিলরের দাবি, “সালিশি সভা তো হয়েই থাকে। সে দিনের সভায় কোনও গোলমাল হয়নি। আমার স্বামীকে ফাঁসানোর চেষ্টা হচ্ছে।” জেলা তৃণমূল সভাপতি সৌরভ চক্রবর্তী এ দিন দাবি করেছেন, “আমাদের ধারণা, মেয়েটি আত্মঘাতী হয়েছে। তবে তদন্তে যে নাম উঠে আসবে তার বিরুদ্ধেই পুলিশ ব্যবস্থা নিক।” সৌরভবাবুর বক্তব্য, রেল পুলিশ এবং জেলা পুলিশ দুটোই রাজ্য সরকারের অধীন। তাই তদন্তে কোনও সমস্যা হবে না।

রাজ্যপালের কাছে বামেরা

জলপাইগুড়ির ধূপগুড়ি এবং পূর্ব মেদিনীপুরের সুনিয়াতে ধর্ষণ ও খুনের দু’টি ঘটনার প্রেক্ষিতে রাজ্যপাল কেশরীনাথ ত্রিপাঠীর দ্বারস্থ হয়েছে বামেরা। রাজভবনে বুধবার প্রথমে বামপন্থী বিভিন্ন মহিলা সংগঠন এবং তার পরে বাম পরিষদীয় দলের তরফে রাজ্যের ক্রমবর্ধমান নারী নির্যাতনের ঘটনা নিয়ে অভিযোগ করা হয়। তাঁদের দাবি, রাজ্য পুলিশের ডিজি এবং মুখ্যসচিবের কাছ থেকে ঘটনার রিপোর্ট নেওয়ার কথা বলেছেন রাজ্যপাল। প্রয়োজনে তিনি মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলবেন বলেও জানিয়েছেন। ত্রিপাঠী দায়িত্ব নেওয়ার পরে এই প্রথম তাঁর কাছে দরবার করতে গেলেন বাম বিধায়ক ও নেত্রীরা। রাজ্যপালের আশ্বাসে তাঁরা আপাতত সন্তুষ্ট। রাজ্যপালের সঙ্গে দেখা করে বেরিয়ে সিপিএমের গণতান্ত্রিক মহিলা সমিতির সর্বভারতীয় সভানেত্রী মালিনী ভট্টাচার্য বলেন, “প্রতিদিন এই ধরনের ঘটনা ঘটছে। সমাজবিরোধীরা দাপিয়ে বেড়াচ্ছে আর মহিলারা সন্ত্রস্ত হয়ে পড়ছেন। এখনই প্রশাসনিক ব্যবস্থা না নেওয়া হলে পুলিশের উপরে ভরসা একেবারেই হারিয়ে যাবে।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন