টিএমসিপির কনভেনশনে শঙ্কুদেব পণ্ডা ও গৌতম দেব। বৃহস্পতিবার শিলিগুড়িতে। ছবি: বিশ্বরূপ বসাক।
বিরোধী দলকে কলেজে রাজনীতি করার সুযোগ দেওয়ার জন্য তৃণমূল ছাত্র পরিষদ সদস্যদের নির্দেশ দিলেন মন্ত্রী গৌতম দেব। তার ঠিক পরেই সেই মঞ্চ থেকেই বিরোধী দলের গতিবিধি আটকাতে কলেজে ৫ ঘণ্টা ‘নজরদারির’ নির্দেশ দিলেন ছাত্র সংগঠনটির রাজ্য সভাপতি শঙ্কুদেব পণ্ডা। মন্ত্রী এবং নেতার দুই নির্দেশের কোনটা মানবেন, তা নিয়ে দিনের শেষে ধন্দে শাসক দলের ছাত্র সংগঠনের নেতা-কর্মীরা।
বৃহস্পতিবার শিলিগুড়ির মিত্র সম্মিলনীর হলে টিএমসিপি-র উত্তরবঙ্গ কনভেনশন হয়েছে। জলপাইগুড়ি, কোচবিহার এবং শিলিগুড়ির টিএমসিপি নেতা এবং কর্মীদের সেখানে ডাকা হয়েছিল। সেখানে গৌতমবাবু ছাত্র-ছাত্রীদের কলেজে ‘গণতান্ত্রিক পরিবেশ’ বজায় রাখার কথা বলেন। নিজের দলের ছাত্র সংগঠনের নেতা-সমর্থকদের উদ্দেশ্যে গৌতমবাবুর বার্তা, প্রতিটা কলেজে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে ছাত্র সংসদের দখল নিতে হবে। তাঁর কথায়, “বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে জিতে আখেরে লাভ হয় না। তাতে যদি দু-একটা কলেজে আমরা হেরেও যাই, তাতে ক্ষতি নেই।” তাঁর বক্তব্য, সেক্ষেত্রে সেই কলেজের ছাত্র-ছাত্রীদের সঙ্গে কথা বলে, তাঁদের সমস্যার কথা বুঝে পরের বার ভোটে জিততে হবে। এরপরেই মন্ত্রীর সংযোজন, ‘‘ফাঁকা মাঠে গোল দিয়ে লাভ নেই।” মন্ত্রীর কথা শুনে হাততালিও শোনা যায় ভিড়ে ঠাসা হলে।
৬ মাস আগে ১৫ জানুয়ারি শিলিগুড়ির মহিলা কলেজে টিএমসিপির হাতে আক্রান্ত হয়েছিল এসএফআই নেত্রী ইন্দ্রাণী সরকার। কলেজের ছাত্রী সংসদ নির্বাচনে মনোনয়ন পত্র তোলার সময়ে তাঁর উপর হামলা হয় বলে অভিযোগ। সে ঘটনা নিয়ে শিলিগুড়িতে বড় মিছিলও করেছিল সিপিএম। ভোটে অবশ্য এসএফআই প্রার্থী হিসেবে জিতেছিলেন ইন্দ্রাণী। বৃহস্পতিবার শিলিগুড়ির মিত্র সম্মিলনী হলে তৃণমূল ছাত্র পরিষদের রাজ্য সভাপতি শঙ্কুদেব পণ্ডার উপস্থিতিতে টিএমসিপিতে যোগ দেন ইন্দ্রাণী। ছিলেন উত্তরবঙ্গ উন্নয়নমন্ত্রী গৌতম দেবও। যদিও, এসএফআই-এর দাবি দল বিরোধী কাজের অভিযোগে দু’মাস আগেই ইন্দ্রাণীকে বহিষ্কার করা হয়। বৃহস্পতিবারের ছবিটি তুলেছেন বিশ্বরূপ বসাক।
এরপরেই বক্তৃতায় শঙ্কুদেব বলেন, “কয়েকদিন আগে কাগজে দেখলাম কলেজ ক্যাম্পাসে রাজনীতি করা যাবে না। কিন্তু ছাত্রছাত্রীদের সর্তক থাকতে হবে। ক্লাস শুরুর ২ ঘণ্টা আগে এবং ক্লাস শেষের ৩ ঘণ্টা পরে প্রতিটি কলেজে নজরদারি করুন।” তাঁর কথায়, আরএসএস কলেজে ঢুকতে চাইছে। এটা আটকাতে হবে। তেমন কিছু দেখলেই তিনি স্থানীয় নেতাদের সরাসরি তা রাজ্য নেতৃত্বকে জানাতে বলেছেন।
কেন আরএসএস-এর কথা উঠছে, সভায় তা-ও ব্যাখ্যা করেছেন শঙ্কুদেব। তিনি জানান, কিছুদিন আগে বিজেপি-র সাংসদ বাবুল সুপ্রিয় ছাত্র রাজনীতি নিয়ে যে মন্তব্য করেছেন, তা আসলে আরএসএস-এর চিন্তাভাবনা। শঙ্কুদেব বলেন, “আরএসএস আসলে কলেজে ঢুকতে চায়। এটাই বন্ধ করতে হবে।” বিরোধী দল প্রসঙ্গে কংগ্রেস ও সিপিএমের ছাত্র সংগঠনের প্রসঙ্গও এনেছেন শঙ্কুদেব। তাঁর কথায়, “ওদের মারবেন না। ওরা আগেই রাজনৈতিক ভাবে মরে গিয়েছে।”
বিজেপি-র দার্জিলিং জেলা সভাপতি রথীন বসু দাবি করেছেন, তৃণমূল ছাত্র পরিষদ নেতার এমন নির্দেশে কলেজে বিশৃঙ্খল পরিবেশ তৈরি হবে। তাঁর কথায়, বিজেপি-র কোনও ছাত্র সংগঠন নেই, তবে তৃণমূল নেতারা যে ভাবে ক্রমাগত প্ররোচনা দিয়ে চলছেন, তাতেই বোঝা যাচ্ছে তাঁরা ভয় পেয়েছেন। অখিল ভারতীয় বিদ্যার্থী পরিষদের শিলিগুড়ির সমতলের সাংগঠনিক সম্পাদক অনুপ ভাদানি দাবি করেন, “সারা রাজ্যের ছাত্র সংগঠনের সদস্যরাই বিদ্যার্থী পরিষদে যোগ দিতে চাইছেন। সে কারণেই তৃণমূল হিংসাত্মক পরিবেশ তৈরি করতে চাইছে।”