গৌতম দেবের সঙ্গে কথা বলছেন পুষ্পদেবী। ছবি: বিশ্বরূপ বসাক।
বয়স ৮২ বছর। চোখে ভাল দেখতে পান না। হাঁটতে পারেন, তবে কেউ ধরে না নিয়ে গেলে রাস্তা চিনতে পারেন না। তিনি পুষ্প চক্রবর্তী। নিহত কংগ্রেস নেতা উদয় চক্রবর্তীর মা। উদয়বাবু খুন হওয়ার পরে দু-দশকেরও বেশি সময় কেটেছে। বাম জমানায় ছেলের হত্যাকারীদের শাস্তির দাবিতে বিস্তর ছোটাছুটি করেছেন। লাভ হয়নি কোনও। সোমবার ছেলের হত্যাকারীর শাস্তির আশায় উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী গৌতম দেবের কাছে গিয়ে কান্নায় ভেঙে পড়লেন। এদিন সকালে খালপাড়া এলাকায় একটি প্রকল্পের কাজ দেখতে গিয়েছিলেন উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী গৌতম দেব। তাঁকে সামনে পেয়ে পুষ্পদেবী প্রথমে ফুলের তোড়া দেন। এর পরেই ভেঙে পড়েন পুষ্প দেবী। তিনি মন্ত্রীর হাত ধরে বলেন, “বাবা আমি বেশিদিন বাঁচব না। মরার আগে অন্তত ছেলের খুনির সাজা দেখে যেতে পারব তো?” তখনই ফের তদন্ত শুরুর আশ্বাস দেন মন্ত্রী। তিনি বলেন, “কংগ্রেসের কয়েকজন মামলা চালু করতে বাধা দিচ্ছে। তবে আমরা উদয়দার খুনিকে ধরবই। আপনাকে কথা দিচ্ছি।”
কালীপুজোর পরেই উদয় চক্রবর্তী হত্যাকাণ্ডের মামলা নতুন করে চালু করার হবে বলে জানালেন উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী গৌতম দেব। মন্ত্রী বলেন, “আমরা বহুদিন ধরেই বাম আমলের কয়েকটি খুনের মামলা ফের চালু করার ব্যপারে কথা বলেছিলাম। এর মধ্যে একটি টোকন সাহা খুনের মামলা ইতিমধ্যেই চালু হয়ে গিয়েছে। বাকি রয়েছে উদয় চক্রবর্তী, দিবাকর মণ্ডল ও সনু প্যাটেল খুনের মামলা। কালীপুজোর পরেই তা চালু হবে। উদয়বাবুর মা আমাকে অনুরোধ করেছেন। আমি ওঁকে সব রকম সাহায্যের আশ্বাস দিয়েছি।”
তবে মন্ত্রীর অভিযোগ উড়িয়ে দিয়েছেন কংগ্রেসের দার্জিলিং জেলা সভাপতি শঙ্কর মালাকার। তিনি বলেন, “যখন উদয়বাবু খুন হন, তখন গৌতম দেব কংগ্রেসের জেলা যুব সভাপতি ছিলেন। সেইসময় কত লড়াই করেছিলেন, তা উনি ভালভাবেই জানেন। সরকার, পুলিশ ওঁদের হাতে। ফলে কংগ্রেস কেন কেউই পুলিশের মামলা করায় বাধা দিতে পারে না। এই অভিযোগ হাস্যকর।”
পুষ্পদেবী অবশ্য মন্ত্রীর কাছে নিজের দাবি জানানোর পাশাপাশি কংগ্রেস নেতাদের প্রতিও ক্ষোভ জানিয়েছেন। তিনি বলেন, “উদয় বেঁচে থাকতে অনেকে আসতেন। তাঁর মৃতদেহ বাড়ির উঠোন থেকে বের করে নিয়ে যাওয়ার পর আর কেউ আসেন না।” বৃদ্ধা পুষ্পদেবী আর উদয়বাবুর বোন কমলা দুজনেই হতাশায় ভেঙে পড়েছেন। যেখানে থাকেন, সেখানে ৮-১০টি ঘর রয়েছে বাড়ির বাইরের দিকে। সেই ভাড়াতে কোনও রকমে সংসার চলে।
১৯৯৪ সালের ২৪ মে খুন হন কংগ্রেস নেতা উদয় চক্রবর্তী। পরদিন শিলিগুড়ি পুরসভার নির্বাচন ছিল। উদয়বাবু সাত নম্বর ওয়ার্ডে কংগ্রেসের টিকিটে প্রার্থী হয়েছিলেন। আগের রাতে তাঁকে কুপিয়ে খুন করে দুষ্কৃতীরা। তাঁর দাদা তপনবাবু কয়েকজনের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করেন। মামলা রুজু হয়। মামলার এক অন্যতম অভিযুক্ত ইতিমধ্যেই খুন হয়েছেন।
এ দিন বর্ধমান রোডে কারবালা কবরস্থান, ঝঙ্কার মোড়ের মাজার সহ বর্ধমান রোডের দুপাশের চার ও ছয় নম্বর ওয়ার্ডের কাজের প্রকল্প ও সম্ভাবনা খতিয়ে দেখতে যান গৌতমবাবু