পুলিশকর্মীকে পিটিয়ে গ্রেফতার সিটি অটোর চালক মদন সরকারকে ১৪ দিন জেল হেফাজতের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এ দিন তাকে শিলিগুড়ি বিশেষ আদালতে তোলা হলে বিচারক এই নির্দেশ দেন। ৩ মে ফের তাকে আদালতে হাজির হওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। শনিবার দুপুরে ওই অটো চালক ট্রাফিক আইন না মানায় তার গাড়ির নথি দেখতে চান ট্রাফিক পুলিশের এএসআই উত্তম বৈশ্য। নথি খতিয়ে দেখার সময়ে তাঁকে পিছন থেকে লোহার রড দিয়ে এলোপাথারি মারে অভিযুক্ত মদন। বাসিন্দাদের সহযোগিতায় চালককে ধরে ফেলা হয়। পরে শিলিগুড়ি থানার পুলিশ এসে তাকে গ্রেফতার করে।
এই ঘটনায় অবশেষে সিটি অটো চালকদের বিরুদ্ধে কড়া ব্যবস্থা নেওয়ার কথা ভাবছে পুলিশ। আগেও বহুবার যাত্রীদের কাছ থেকে অভিযোগ পেয়েও গা করেনি পুলিশ। এ বার পুলিশ কর্মীর উপরে আক্রমণ হওয়ায় অটো চালকদের শায়েস্তা করতে চায় পুলিশ। এ কাজে তাঁরা শহরবাসীর সাহায্য চান। শীঘ্রই শহরবাসীকে এ বিষয়ে এগিয়ে আসার জন্য আবেদন জানানো হবে। এ জন্য অনলাইনে অভিযোগ নেওয়ার ব্যবস্থা চালু হচ্ছে বলে জানানো হয়েছে। শহরবাসীর অভিযোগের ভিত্তিতে দ্রুত তা খতিয়ে দেখে ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে শিলিগুড়ি পুলিশ কমিশনার জগমোহন জানিয়েছেন। তিনি বলেন, “এই কাজে, সব সময়ের জন্য শিলিগুড়ি পুলিশের ওয়েবসাইটে নজরদারি করার জন্য এক জনকে নিয়োগ করা হবে।” শুধু অনলাইন নয়, প্রতিটি ট্রাফিক পুলিশ কার্যালয়ে ও শিলিগুড়ি পুলিশ কমিশনারেটে সরাসরি কমিশনারকেও অভিযোগ জানাতে পারেন শহরবাসী। থানাগুলোয় কেউ অভিযোগ জানাতে এলে যাতে ফিরে না যান, সে বিষয়ে সতর্ক করা হচ্ছে প্রতিটি থানার আইসি, ওসিদের। খুব দ্রুত এই ব্যবস্থা কার্যকর করতে উদ্যোগ নেবেন কমিশনার। শিলিগুড়ির ট্রাফিক এসিপি বিশ্বনাথ হালদার বলেছেন, “অটো চালকদের বিরুদ্ধে অভিযোগ রয়েছে। সেগুলি খতিয়ে দেখে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
এই উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়েছেন সিটি অটো চালক ও মালিকদের সংগঠনগুলি। সিটি অটো ওনার্স অ্যান্ড ড্রাইভার ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশন সম্পাদক উজ্জ্বল ঘোষ বলেন, “এটি পুলিশের ভাল উদ্যোগ। কিন্তু পুলিশের সদিচ্ছার অভাবে কোনও পদক্ষেপ কার্যকর করা যায়নি। এ বার তা করা হলে ভাল।” অন্য একটি সংগঠন সিটি অটো অপারেটর্স ওয়েলফেয়ার সোসাইটির সম্পাদক নির্মল সরকার জানান, শনিবার যে ঘটনা ঘটেছে, তাকে সংগঠন কোনওভাবেই বরদাস্ত করবে না। এ কাজ যারা করছেন তাঁদের বিরুদ্ধে পুলিশ ব্যবস্থা নিতে চাইলে সঠিক পদক্ষেপই করবেন।”
শিলিগুড়িতে সিটি অটো চালকদের বিরুদ্ধে অভিযোগ দীর্ঘদিনের। গত বছর জুলাই মাসে শহরের সেবক রোডে সন্ধ্যায় এক কিশোরীর শ্লীলতাহানির অভিযোগ ওঠে এক মদ্যপ অটো চালকের বিরুদ্ধে। তার আগে কোর্ট মোড়ে এক মহিলাকে খুচরো না থাকায় অশালীন মন্তব্য করে গ্রেফতার হন এক চালক। গত বছর নভেম্বর মাসে ভাড়া বেশি নেওয়ার প্রতিবাদ জানানোয় এক বৃদ্ধকে মারধরের অভিযোগও ওঠে এক চালকের বিরুদ্ধে। এছাড়া রুট না মেনে অটো চালানো, রুট ভেঙে যাত্রী বহন, অতিরিক্ত যাত্রী বহন, নিয়ম না মেনে অটোর সামনে যাত্রী বসানো, খুচরো নিয়ে যাত্রীদের সঙ্গে অমানবিক আচরণ ও মারামারিতে জড়িয়ে পড়া সহ প্রতিদিন একাধিক অভিযোগ জমা পড়ে শিলিগুড়ি ও সংলগ্ন প্রতিটি থানায়। এতদিন মাঝে মধ্যে অভিযান চালানো ছাড়া আর কোনও কাজ হয়নি বলে পুলিশেরই একাংশ স্বীকার করেছেন। তবে এবার অন্তত কাজ হবে বলে মনে করছেন তাঁরা।