ভোটের কাজে সেনা জওয়ানদের নিয়ে যাওয়ার ‘ইলেকশন স্পেশ্যাল’ ট্রেনে আগুন লেগে পুড়ে যাওয়া কামরাটি।
ভোটের কাজে সেনা জওয়ানদের নিয়ে যাওয়ার বিশেষ ট্রেনে আগুন লেগে ভস্মীভূত হল একটি কামরা। শুক্রবার সন্ধ্যায় আমবাড়ি-ফালাকাটা স্টেশন লাগোয়া এলাকায় ট্রেনের একটি কামরায় আগুন লেগে যায়।
রেল সূত্রের খবর, ট্রেনটি ডিমাপুর থেকে জম্মু যাচ্ছিল। সন্ধ্যায় ট্রেনের ‘জিএস ০৯৪৫৯’ কামরায় আগুন লাগার ঘটনা টের পেয়েই চেন টেনে ট্রেন থামিয়ে দেন সেনা জওয়ানেরা। যে কামরায় আগুন লেগেছিল, সেটি ট্রেনের মাঝামাঝি ছিল। দাউদাউ করে কামরাটি জ্বলতে থাকায় আমবাড়ি এলাকায় আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। নিউ জলপাইগুড়ি স্টেশন থেকে আগুন নেভানোর জন্য দু’টি ইঞ্জিন ঘটনাস্থলে পাঠানো হয়। পাঠানো হয় উদ্ধার এবং চিকিত্সার বিশেষ ইঞ্জিনও। আগুন নিয়ন্ত্রণে আসতে অন্তত ঘণ্টাখানেক লেগে যায় বলে জানা গিয়েছে। রেল সূত্রে জানানো হয়েছে, কোনও হতাহতের খবর নেই। তবে সেনা জওয়ানদের বেশ কিছু বন্দুক-সহ অস্ত্র পুড়ে গিয়েছে বলে জানা গিয়েছে। এই ঘটনায় অসম এবং নিউ জলপাইগুড়ি রুটে ট্রেন চলাচল অন্তত ঘণ্টা তিনেক বন্ধ ছিল। কলকাতাগামী পদাতিক এবং সরাইঘাট এক্সপ্রেসও রানিনগর এবং বেলাকোবা স্টেশনে দীর্ঘক্ষণ দাঁড় করিয়ে রাখা হয়।
নিউ জলপাইগুড়ির স্টেশন ম্যানেজার (গেজেটেড) অজিতেশ দাস বলেন, “আগুনে একটি কামরা পুরো ভস্মীভূত হয়েছে। তবে হতাহতের কোনও খবর নেই। কী কারণে আগুন লাগল খতিয়ে দেখা হচ্ছে। কামরায় কোনও দাহ্য বস্তু ছিল কি না, তা-ও দেখা হচ্ছে।” ক্ষতিগ্রস্ত কামরা থেকে একটি দগ্ধ গ্যাস সিলিন্ডারও উদ্ধার হয়েছে।
প্রাথমিক তদন্তে জানা গিয়েছে, যে কামরায় আগুন লেগেছে, সেটিতে একটি গ্যাস সিলিন্ডারও মিলেছে বলে জানানো হয়েছে। কামরায় গ্যাস সিলিন্ডার কেন রাখা হয়েছিল, তা জওয়ানদের থেকে জানতে চাওয়া হবে বলে রেল জানিয়েছে। ওই কামরার জওয়ানদের খাবারদাবার সবই রেলের তরফেই সরবরাহ করা হচ্ছিল। তার পরেও কেন সিলিন্ডার রাখার প্রয়োজন হল তা নিয়েই ধন্দে পড়েছেন রেলের আধিকারিকেরা।
ঝাড়খণ্ড, কাশ্মীর-সহ বিভিন্ন রাজ্যে ভোটের জন্য দেশের নানা এলাকা থেকে সেনা বাহিনী এবং আধা সেনা জওয়ানদের নিয়ে যাওয়ার কাজ শুরু হয়েছে। সেই কাজে রেলের বিভিন্ন ডিভিশন থেকেই বিশেষ নির্বাচনী ট্রেন চালানো হচ্ছে। নাগাল্যান্ড থেকে কাশ্মীরের দিকে যাওয়া তেমনই একটি ট্রেনে শুক্রবার আগুন লেগে যায়। হতাহতের কোনও খবর না পাওয়া গেলেও সেনা জওয়ানদের বেশ কিছু বন্দুক এবং নথিপত্র পুড়ে গিয়েছে বলে জানা গিয়েছে।
আগুন নেভানোর জন্য শিলিগুড়ি থেকে দমকলের দু’টি ইঞ্জিন এবং জলপাইগুড়ি থেকে আরও দু’টি ইঞ্জিন নিয়ে যাওয়া হয়। আগুন নেভানোর পরে ক্ষতিগ্রস্ত কামরাটিকে বাদ দিয়ে নিউ জলপাইগুড়ি নিয়ে আসা হয়। ততক্ষণে অবশ্য রাত ১০টা পেরিয়ে গিয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত ট্রেনটি না সরানো পর্যন্ত নিউ জলপাইগুড়ি থেকে অসম লাইনে দু’দিকেই ট্রেন চলাচল বন্ধ রাখা হয়। নিউ জলপাইগুড়ি স্টেশনে আটকে পড়ে অসমগামী অবধ-অসম এক্সপ্রেস ও বামনহাট প্যাসেঞ্জার। বেলাকোবা স্টেশনে আটকে পড়ে সরাইঘাট এক্সপ্রেস। কলকাতাগামী পদাতিক এক্সপ্রেস দাঁড়িয়ে থাকে রানিনগরে। শিলিগুড়ির এসআরপি দেবাশিস সরকার বলেন, “কয়েক জন সামান্য জখম হয়েছেন বলে জানতে পেরেছি। বিস্তারিত খোঁজ নিচ্ছি। গ্যাস সিলিন্ডার থেকে আগুন লেগেছে বলে শুনেছি।’’
ছবি: বিশ্বরূপ বসাক।