গারুচিরা পর্যটন কেন্দ্র। —নিজস্ব চিত্র।
পাশেই ভুটান পাহাড়। তিন দিক ঘিরে থাকা জঙ্গল। প্রকৃতির কোলে পর্যটকদের ঘুম ভাঙত নানান পাখির ডাকে। ডুয়ার্সে যে সমস্ত পর্যটন কেন্দ্র রয়েছে তার মধ্যে গারুচিরার আকর্ষণ ছিল অন্যরকম। গারুচিরার প্রকৃতি উপভোগের জন্য তিনটি সুসজ্জিত ছোট কটেজ যাওয়ার অন্তত কয়েকমাস আগে বুক রতে হত পর্যটকদের। ভ্রমণপিপাসুদের আনাগোনা বেড়ে চলায় লাগোয়া গ্রামগুলির বাসিন্দারাও উপার্জনের বিকল্প রাস্তা খুঁজে পেতে থাকেন। তবে আজ আর গারুচিরায় পর্যটকরা আর আসেন না। ভুটানের ঝরনা থেকে পাইপ লাইনে বয়ে আনা জল সরবরাহ বন্ধ হয়ে যাওয়ায় গত দুই বছর ধরে গারুচিরা কটেজ তিনটি বন্ধ করে রেখেছে বন দফতর। জলের সংস্থান না হওয়া পর্যন্ত কোনও পর্যটককে ঘর দেওয়া হবে না বলে বন কর্তারা জানিয়ে দিয়েছেন। তাতেই মুখ থুবড়ে পড়েছে গারুচিরা ভিলেজ ট্যুরিজম। পর্যটন কেন্দ্রের সবুজ ঘাস আগাছায় ভরে গিয়েছে। আড়াই বছর আগে বৃষ্টির জল সংরক্ষণ করে যে জলাশয় তৈরি করে সেখানে রঙিন মাছ চাষের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছিল,সেই জলাশয়ে ব্যাঙাচিরা বাসা বেঁধেছে।
বীরপাড়া-মাদারিহাট ব্লকের গারুচিরা বন বস্তিতে পঞ্চাশ টি পরিবারের বাস। প্রত্যন্ত ওই গ্রামে এখনও পৌঁছায়নি ন্যূনতম সরকারি পরিষেবা। জীবিকার সংস্থান নেই। তাই প্রতিদিন ভুটানের পাথর খাদানে গিয়ে দিন মজুরি করে যা উপার্জন হয় তা দিয়ে বহু কষ্টে সংসার চালাতে হয় গ্রামবাসীকে। বাসিন্দাদের একাংশ একসময় গ্রাম লাগোয়া বান্দাপানি জঙ্গলের গাছ কাটার কাজে নামেন। জঙ্গল ধ্বংস হচ্ছে দেখে সে সময় বাসিন্দাদের বিকল্প কর্মসংস্থানের রাস্তা খুঁজতে শুরু করেন বন দফতরের কর্তারা। ২০০৮ সালে স্থানীয় চার বাসিন্দার দেওয়া ছয় বিঘা জমির উপর বন দফতর তিনটি কটেজ তৈরি করে। পর্যটকদের থেকে আদায় করা অর্থের এক চতুর্থাংশ টাকা গ্রামবাসীরা পেতেন। স্বনির্ভর গোষ্ঠীর সঙ্গে যুক্ত বাসিন্দারা পর্যটকদের খাবার তৈরি করে যে উপার্জন করতেন তা দিয়ে হেসে খেলে চলে যেত বেশ কয়েকজনের সংসার। রঙিন মাছ চাষের মাধ্যমেও গ্রামবাসীদের অর্থনৈতিক অবস্থা চাঙ্গা করার চেষ্টা করেছিলেন বনদফতরের কর্তারা।
কিন্তু বাধ সাধল পানীয় জল। ভুটানের তিনধরিয়া পাহাড়ের ঝর্ণা থেকে গারুচিরার পর্যটকদের জন্য পাইপ লাইনের মাধ্যমে পানীয় জল বয়ে আনা হত। ২০১২ সাল থেকে জল মেলা বন্ধ হয়ে যাওয়ায় পর্যটকদের জন্য বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে গারুচিরার আবাস গুলি। বন বস্তির বাসিন্দারা জানান, বহু বার বন দফতরের কর্তাদের কাছে জলের বন্দোবস্ত করে ফের পর্যটন কেন্দ্র টি চালু করার জন্য আবেদন নিবেদন করা হলেও সাড়া মেলেনি কোনও। তাই এলাকা জুড়ে তৈরি হয়েছে ক্ষোভ। গ্রামের বাসিন্দা টম ছেত্রীর কথায়,“ এখন ঘর গুলি দেখলে মন খারাপ হয়ে যায়। পর্যটকরা এলে তো গ্রামবাসীদেরই লাভ। এ গুলিকে আঁকড়েই আমরা ঘুরে দাঁড়াবার স্বপ্ন দেখেছিলাম। ”
বাসিন্দাদের অভিযোগ, মুখ্যমন্ত্রী বারবার উত্তরবঙ্গে পর্যটন শিল্প গড়ে তোলার ঘোষণা করেছেন। কিন্তু বাম আমলে তৈরি হওয়া ওই পর্যটন কেন্দ্রটি সামান্য জলের অভাবে বন্ধ থাকলেও কারও কোনও হেলদোল নেই। প্রয়োজনে আন্দোলন করা হবে বলেও গারুচিরার বাসিন্দারা হুমকি দিয়েছেন।এই সমস্যার বিষয়ে দলগাঁও-এর রেঞ্জ অফিসার রাজীব দে বলেন, “জল বয়ে আনার জন্য ওখানে পাইপলাইন বসালে হাতি তা ভেঙে ফেলে। আর ভুটান থেকে বয়ে আনা যে জল বস্তিবাসীরা পেয়ে থাকেন তা পর্যটন কেন্দ্রে সরবরাহ করা হলে সেখানে জলকষ্ট দেখা দিতে পারে। মাটি থেকে সাতশো ফুট গভীরে জলস্থর রয়েছে। সেই জল তোলাও ব্যয় সাপেক্ষ ব্যাপার। একা বন দফতরের কাছে এই পরিমাণ অর্থ না থাকায় জেলা প্রশাসনকে সেই কাজে সাহায্যের জন্য আবেদন করা হয়েছে।”
জলপাইগুড়ির ডিএফও বিদ্যুৎ সরকার বিষয়টি খোঁজ নেবেন বলে জানিয়েছেন।