দুর্যোগ চলছেই, সব্জিতে ১০ কোটির ক্ষতির শঙ্কা

গ্রীষ্মের শুরুতে ছিল একটানা অনাবৃষ্টি। খরার ভ্রুকুটিতে শুকনো জমিতে ছড়ানো বীজ থেকে চারা গজায়নি। অবশেষে আকাশে জলভরা মেঘের দেখা মিললেও স্বস্তি ফিরল না। রবিবার এক রাতের ঝড় ও শিলাবৃষ্টির তাণ্ডবে জলপাইগুড়ি জেলার কৃষি বলয়ের বিস্তীর্ণ এলাকা ধ্বংসস্তূপের চেহারা নিয়েছে।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

জলপাইগুড়ি শেষ আপডেট: ১৫ মে ২০১৪ ০১:৫১
Share:

ঝড়ে এমনই হাল হয়েছে পাটখেতের। নিজস্ব চিত্র।

গ্রীষ্মের শুরুতে ছিল একটানা অনাবৃষ্টি। খরার ভ্রুকুটিতে শুকনো জমিতে ছড়ানো বীজ থেকে চারা গজায়নি। অবশেষে আকাশে জলভরা মেঘের দেখা মিললেও স্বস্তি ফিরল না। রবিবার এক রাতের ঝড় ও শিলাবৃষ্টির তাণ্ডবে জলপাইগুড়ি জেলার কৃষি বলয়ের বিস্তীর্ণ এলাকা ধ্বংসস্তূপের চেহারা নিয়েছে। কৃষি দফতরের হিসেবে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে প্রায় সাড়ে ন’কোটি টাকা। মঙ্গলবার বিকেলে ফের ঝড় ও শিলাবৃষ্টি হয় ময়নাগুড়ির বিভিন্ন গ্রামে। কৃষি কর্তাদের আশঙ্কা, ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ ১০ কোটি ছাড়িয়ে যেতে পারে।

Advertisement

কৃষি দফতরের অতিরিক্ত অধিকর্তা সুজিত পাল বলেন, “রবিবার রাতের ঝড়ের ক্ষয়ক্ষতির হিসেব বুধবার দফতরের শীর্ষ কর্তাদের কাছে পাঠানো হয়েছে। এর পরেও ঝড়ে কিছু এলাকায় ক্ষতি হয়েছে সেটা হিসেব করে দেখা হচ্ছে।”

কৃষি দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, গত রবিবার রাতের ঝড় শিলাবৃষ্টিতে জেলার ময়নাগুড়ি, ধূপগুড়ি, নাগরাকাটা, কুমারগ্রাম, আলিপুরদুয়ার-২ ও কালচিনির মতো ছয়টি ব্লকের ফসল মারাত্মক ভাবে ক্ষতি হয়েছে। সাড়ে ৯ হাজার হেক্টর জমির পাট, বোরো ধান, মাচার সবজি, লঙ্কা, ভুট্টা, পান পুরোপুরি নষ্ট হয়েছে। আর্থিক হিসেবে ক্ষতির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৯ কোটি ৩৬ লক্ষ টাকা।

Advertisement

কৃষি দফতরের কর্তারা জানান, সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হয়েছে জেলার সব্জি বলয় হিসেবে পরিচিত ময়নাগুড়ি ও ধূপগুড়ি ব্লকে। ময়নাগুড়ি ব্লকের পাঁচটি গ্রাম পঞ্চায়েতের ১৬টি মৌজা জুড়ে ঝড়ের তাণ্ডব চলে। ৬৭০ হেক্টর জমির পাট ও সব্জির ক্ষতি হয়েছে। টাকার অঙ্কে ওই ব্লকে ক্ষতির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ২ কোটি ৮৯ লক্ষ টাকা। ধূপগুড়ি ব্লকের ১২টি গ্রাম পঞ্চায়েতের ৩০টি মৌজা ঝড় ও শিলাবৃষ্টিতে লণ্ডভণ্ড হয়েছে। ওই ব্লকে টাকার অঙ্কে ক্ষতির পরিমাণ ২ কোটি ১৭ লক্ষ টাকা। এ ছাড়াও কুমারগ্রামে ১ কোটি ১১ লক্ষ টাকা, কালচিনিতে ১ কোটি ৭০ লক্ষ টাকা, আলিপুরদুয়ার-২ ব্লকে ১ কোটি ৬২ লক্ষ টাকা ও নাগরাকাটায় ১০ লক্ষ টাকার ফসল নষ্ট হয়েছে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। জলপাইগুড়ি মহকুমা কৃষি আধিকারিক হরিশ্চন্দ্র রায় বলেন, “পরিস্থিতি অত্যন্ত উদ্বেগজনক। প্রতিদিন ঝড় বৃষ্টি হচ্ছে। মঙ্গলবারও ময়নাগুড়ির বিস্তীর্ণ এলাকার পাটখেত শিলাবৃষ্টিতে নষ্ট হয়েছে। শেষ পর্যন্ত পাটের আবাদ কী দাঁড়াবে সেটাই চিন্তার।”

কৃষি দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, ২০১৩ সালে জলপাইগুড়ি জেলায় ৩১ হাজার ৭৮৬ হেক্টর জমিতে পাট চাষ হয়। এ বার অনাবৃষ্টির জন্য ২০ শতাংশ জমিতে পাটের বীজ গজায়নি। যে জমিতে চারা উঠেছে, তার ১৫ শতাংশ শুকিয়ে লাল হয়েছে। ওই পরিস্থিতিতে পাটের এলাকাও কমেছে। শুধুমাত্র জলপাইগুড়ি মহকুমায় চলতি বছরে প্রায় ৬ হেক্টর পাট চাষের এলাকা কমেছে। ২০১৩ সালে এখানে ২৫ হাজার ৪০০ হেক্টর জমিতে পাট চাষ হয়। এ বার হয়েছে ১৯ হাজার ৬০০ হেক্টর জমিতে। কিন্তু যতটুকু জমিতে পাট দাঁড়িয়েছে সেটাও শিলাবৃষ্টিতে নষ্ট হতে দেখে কৃষি কর্তাদের মাথায় হাত পড়েছে। শুধু পাট নয় শসা, ঝিঙে, পটল, স্কোয়াশ, কুমড়োর মতো মাচার ফসল নষ্ট হয়েছে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন