মনোনয়ন পত্র জমা দিতে যাওয়ার আগে মালদহ দক্ষিণের তৃণমূল প্রার্থী মোয়াজ্জেম হোসেন। নিজস্ব চিত্র।
গনি খান চৌধুরীর ‘পথ’ অনুসরণ করেই মনোনয়ন জমা দিলেন দক্ষিণ মালদহের তৃণমূল প্রার্থী। বুধবার সকাল ১১টা নাগাদ বিলাসবহুল গাড়ি চেপে পীর-না-পীর দরগায় পৌঁছন তৃণমূল প্রার্থী মোয়াজ্জেম হোসেন। সেখানে ফুল চড়িয়ে মনস্কামনা কালীমন্দিরে গিয়ে পুজো দেন। পুরোহিতের তুলে দেওয়া ফুল নিয়ে মনোনয়ন দিতে জেলাশাসকের দফতরের পৌঁছন তিনি। বরাবরই মনোনয়ন জমা দেওয়ার আগে পীর-না-পীর দরগা এবং মনস্কামনা কালী মন্দিরে গিয়ে প্রার্থনা করতেন কংগ্রেস নেতা গনি খান চৌধুরী। মঙ্গলবার নিজের মনোনয়ন দেওয়ার আগে একই পথ অনুসরণ করলেন এক সময়ে গনি খানের ছায়া সঙ্গী হিসেবে পরিচিত বর্তমান তৃণমূলের প্রার্থী। এ দিনই মনোনয়ন জমা দিয়েছেন উত্তর এবং দক্ষিণ মালদহের দুই সিপিএম প্রার্থী খগেন মুর্মু ও হাসনাত খানও।
এ দিন সকালেই কলকাতা থেকে গৌড় এক্সপ্রেসে কলকাতা থেকে ফরাক্কায় পৌঁছেছেন তৃণমূল প্রার্থী। সেখান থেকে তাঁর গ্রামের বাড়ি বৈষ্ণবনগরের ভগবানপুরে গিয়েছিলেন তিনি। গ্রামের মসজিদে ‘নাফিল নমাজ’ সেরে ধবধবে সাদা পাঞ্জাবি-পাজামা, নীল-সাদা স্নিকার্স পরে সোজা চলে আসেন মালদহের সদরঘাটে জেলা সভানেত্রী সাবিত্রী মিত্রর বাড়ি। সেখান থেকে দরগা এবং মন্দিরে প্রার্থনা করে জেলাশাসকের দফতরে যান। মনোনয়ন জমা দেওয়ার পরেও গনিখানের কথা শোনা গিয়েছে তৃণমূল প্রার্থীর মুখে। তিনি বলেন, “আমি বরকতদার (গনি খান চৌধুরী) শেষ বয়সের ছায়াসঙ্গী ছিলাম। বরকতদা যে ভাবে মনোনয়ন জমা দিতেন, সেই পথই অনুসরণ করেছি। আমার বিশ্বাস, বরকতদাকে মালদহের মানুষ কোনওদিন ফেরায়নি। আমাকেও মালদহের মানুষ ফেরাবে না।”
তৃণমূল প্রার্থীর গনিখানের পথ অনুসরণ করার ঘটনাকে কটাক্ষ করেছেন জেলা কংগ্রেস সভানেত্রী মৌসম বেনজির নূর। তাঁর মন্তব্য, “গনি খানের নাম ব্যবহার করে ভোটে জিততে চাইছে তৃণমূল। বাসিন্দারা সবই বোঝেন, তাঁদের বোকা বানানো যাবে না।” সাবিত্রী দেবীর পাল্টা কটাক্ষ, “গনি খান শুধু একটি পরিবারের সম্পত্তি নয়, তিনি সারা জেলাবাসীর গর্ব এবং আর্দশ।”
তৃণমূল প্রার্থীর মনোনয়ন পেশের সময়ে জেলাশাসকের দফতরে রাজ্যের দুই মন্ত্রীও উপস্থিত ছিলেন। সমাজকল্যাণ মন্ত্রী সাবিত্রীদেবী এবং পর্যটনমন্ত্রী কৃষ্ণেন্দু চৌধুরী সহ দলের জেলা নেতা দুলাল সরকার, তাঁর স্ত্রী চৈতালি সরকারও উপস্থিত ছিলেন। মনোনয়নের সময়ে এক সঙ্গে ৫ জনের বেশি জেলাশাসকের দফতরের নিদিষ্ট ঘরে ঢুকে পড়ায় বির্তকও তৈরি হয়। তবে কৃষ্ণেন্দুবাবু নিজেই সে সময় ঘর থেকে বেরিয়ে গিয়ে বিতর্ক ধামাচাপা দেয়। জেলাশাসক শরদ দ্বিবেদী বলেন, “৫ জনের বেশি এক সঙ্গে ঢুকে পড়ায় একজনকে ঘর থেকে বের হয়ে যেতে বলেছিলাম। তবে তা নিয়ে কোনও সমস্যা হয়নি।”
মালদহের দুই কেন্দ্রে সিপিএমের দুই প্রার্থী হাসনাত খান এবং খগেন মুর্মুকে সঙ্গে নিয়ে দলের জেলা সম্পাদক অম্বর মিত্র জেলা পার্টি অফিস থেকে জেলাশাসকের দফতরে যান। মনোনয়ন জমা দেওয়ার পরে অম্বরবাবু বলেন, “আমাদেরই জয় হবে।” এদিনই মনোনয়ন জমা দিয়েছেন দক্ষিণ মালদহের বহুজন সমাজবাদী পার্টির নিখিলচন্দ্র মণ্ডল এবং পিডিএসের নাসমূল হক। উত্তর মালদহে এসইউসিআইয়ের প্রার্থী গৌতম সরকার, ঝাড়খন্ড দেশম পার্টির এমা নূয়েল হেমব্রম মনোনয়ন জমা দিয়েছেন।