দলত্যাগীদের অনাস্থা রুখতে অস্ত্র অনাস্থাই

অনাস্থা এড়াতে হাতিয়ার করা হল সেই অনাস্থাকেই। পঞ্চায়েত সমিতির ক্ষমতাসীন সিপিএম বোর্ডের ৮ সদস্যের পাশাপাশি বিরোধী কংগ্রেসেরও চার সদস্য দল ছেড়ে নিজেদের ‘নির্দল’ বলে দাবি করেছেন। ওই ১২ সদস্যের সঙ্গে যোগ দিয়েছেন সমিতির বহিষ্কৃত এক কংগ্রেস সদস্যও।

Advertisement

বাপি মজুমদার

চাঁচল শেষ আপডেট: ২২ নভেম্বর ২০১৪ ০২:৪০
Share:

অনাস্থা এড়াতে হাতিয়ার করা হল সেই অনাস্থাকেই। পঞ্চায়েত সমিতির ক্ষমতাসীন সিপিএম বোর্ডের ৮ সদস্যের পাশাপাশি বিরোধী কংগ্রেসেরও চার সদস্য দল ছেড়ে নিজেদের ‘নির্দল’ বলে দাবি করেছেন। ওই ১২ সদস্যের সঙ্গে যোগ দিয়েছেন সমিতির বহিষ্কৃত এক কংগ্রেস সদস্যও। ওই ১৩ সদস্য কলকাতায় গিয়ে তৃণমূলে যোগ দিয়েছেন বলে দাবি করেছেন। দু’এক দিনের মধ্যেই তাদের সিপিএম সভাপতির বিরুদ্ধে অনাস্থা প্রস্তাব পেশ করার কথা ছিল। কিন্তু, কলকাতা থেকে ওই সদস্যরা ফেরার আগেই অনাস্থা এড়িয়ে তৃণমূলের বোর্ড দখল আটকাতে হাতিয়ার করা হল অনাস্থাকেই।

Advertisement

মালদহের চাঁচল-১ পঞ্চায়েত সমিতির ঘটনা। বৃহস্পতিবার বিকালে ক্ষমতাসীন বোর্ড ও বিরোধী কংগ্রেসের বাকি ৯ সদস্য মহকুমাশাসকের কাছে জোট বেঁধে আগেভাগেই সভাপতির বিরুদ্ধে অনাস্থা পেশ করায় রাজনৈতিক মহলে আলোড়ন পড়েছে। নিজেদের ঘর সামলাতেই অনাস্থাকে হাতিয়ার করা হয়েছে বলে সিপিএম ও কংগ্রেস উভয় পক্ষেই দাবি করা হয়েছে।

সিপিএমের চাঁচল জোনাল কমিটির সম্পাদক হামেদুর রহমান বলেন, “তৃণমূল অনৈতিকভাবে টাকা ও চাকরির প্রলোভন দেখিয়ে অন্যদের ঘর ভাঙছে। কিন্তু, আমাদের তো দলটাকে বাঁচাতে হবে। তাই ভেবেচিন্তেই যা সিদ্ধান্ত নেওয়ার নেওয়া হয়েছে। একই কথা বলেন ব্লক কংগ্রেস সভাপতি ইন্দ্রনারায়ণ মজুমদারও। চাঁচল-১ ব্লক তৃণমূল সভাপতি মজিবর রহমান অবশ্য অভিযোগ ভিত্তিহীন বলে দাবি করে বলেন, “চাঁচল-১ পঞ্চায়েত সমিতির ১৩ সদস্য তৃণমূলে যোগ দিয়েছেন সেটাই আমরা জানি না।”

Advertisement

পঞ্চায়েত সমিতি সূত্রে জানা যায়, গত নির্বাচনে সমিতির ২৪টি আসনের মধ্যে সিপিএম ১৪টি, কংগ্রেস ৯টি ও বিজেপি একটি আসন পায়। সভাপতি হন সিপিএমের রুবি সাহা। এদের মধ্যে বোর্ডের ৮ সিপিএম ও ৪ কংগ্রেস সদস্য দিন দুয়েক আগে দল ছেড়ে নির্দল হন। সিপিএমের দলত্যাগীদের মধ্যে বোর্ডের ৬ কর্মাধ্যক্ষও রয়েছেন। কিন্তু দলত্যাগী ১৩ সদস্য অনাস্থা প্রস্তাব পেশ করার আগেই কেন বাকি ৯ সদস্য অনাস্থা পেশ করলেন।

বিশেষ করে তাদের সংখ্যাগরিষ্ঠতা নেই তা জেনেও। প্রশাসন ও সমিতি সূত্রের খবর, মোট সদস্য সংখ্যার এক তৃতীয়াংশ হলেই অনাস্থা পেশ করা যায়। তবে অনাস্থাকারীদের সংখ্যাগরিষ্ঠতা না থাকায় সব খতিয়ে দেখে সন্তুষ্ট না হলে তা বাতিল করে দিতে পারে প্রশাসন। আবার প্রশাসন সভা ডাকার অনুমতি দিলেও তলবি সভায় সংখ্যাগরিষ্ঠতা না দেখাতে পারলে অনাস্থা ভেস্তে যাবে। যদি তেমন হয়, তা হলে পঞ্চায়েতের বর্তমান নিয়ম অনুযায়ী দুটি ক্ষেত্রেই আগামী ৬ মাস আর অনাস্থা ডাকা যাবে না।

তবে অন্য সমস্যাও রয়েছে। যদি সভা হয়, সে ক্ষেত্রে দলত্যাগী ১৩ সদস্য সভায় হাজির হয়ে সভাপতিকে অপসারণ করে দিতে পারেন। সে ক্ষেত্রে কংগ্রেস ও সিপিএমের যুক্তি, তেমন হলে দলত্যাগী কয়েকজনকে ফের বুঝিয়ে দলে ফেরানোর সময় পাওয়া যাবে। সময় পাওয়া যাবে ত্রুটি খুঁজে আইন-আদালতের দ্বারস্থ হয়ে অনাস্থা রুখে দেওয়ারও।

সমিতির সভাপতি রুবি সাহা কোনও মন্তব্য করতে চাননি। দলত্যাগী এক সিপিএম সদস্য তথা পূর্ত কর্মাধক্ষ মঞ্জুর আলম বলেন, “অনাস্থা ভেস্তে দিতেই চক্রান্ত করে এসব করা হয়েছে। এখন আমরা তৃণমূলে। দল যা বলবে সে ভাবেই চলব।” চাঁচলের মহকুমাশাসক পোন্নমবলম এস বলেন, “চাঁচল-১ পঞ্চায়েত সমিতিতে সভাপতির বিরুদ্ধে অনাস্থা পেশ হয়েছে। পঞ্চায়েত আইন মেনেই পরবর্তী পদক্ষেপ করা হবে।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন