সহায়ক মূল্যে ধান কেনার কেন্দ্রগুলিতে ফড়েদের দৌরাত্ম্য বাড়ছে, এমনই অভিযোগ উঠেছে কোচবিহারে। কৃষকদের একাংশের দাবি, সকাল থেকেই ফড়েরা ভিড় করেন কেন্দ্রের সামনে। তাঁদের ধানই সহায়ক মূল্য দিয়ে কিনে নেওয়া হয়। কৃষকদের অনেকেই দিনভর দাঁড়িয়ে থেকে ফিরে যেতে বাধ্য হন বলেও অভিযোগ উঠেছে।
শেষপর্যন্ত ফড়েদের কাছেই তাঁরা কম দামে ধান বিক্রি করে দেন বলে দাবি করেছেন অনেকে। জেলার শীতলখুচিতে ওই অভিযোগ নিয়ে শাসক দলের কৃষক সংগঠনের পক্ষ থেকে আন্দোলনের হুমকি দেওয়া হয়েছে। শাসক দলের আরেকটি অংশ অবশ্য ওই অভিযোগ মানতে নারাজ। কোচবিহার জেলা খাদ্য সরবরাহ আধিকারিক মানিক সরকার বলেন, “কৃষকরা যাতে কোনও ভাবেই বঞ্চিত না হন, সেভাবে নির্দেশ দেওয়া রয়েছে। ফড়েদের নিয়ন্ত্রণে আমরা বিশেষ ব্যবস্থা নিয়েছি। কিষাণ ক্রেডিট কার্ড, ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট এবং জমির কাগজপত্র দেখে ধান কেনা হচ্ছে। তার পরেও এমন অভিযোগ উঠছে কেন তা খতিয়ে দেখে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
শীতলখুচির তৃণমূল বিধায়ক হিতেন বর্মন অবশ্য বিষয়টি স্বীকার করেছেন। তিনি বলেন, “কৃষকদের কেউ ওই কেন্দ্র থেকে ঘুরে গিয়েছে বলে শুনিনি। তবে ধান বিক্রির টাকা চেকে দেওয়া হয়। সেটা ক্লিয়ার হতে কিছুদিন সময় লাগছে। সে জন্য অনেক কৃষক ফড়েদের কাছে কম দামে ধান বিক্রি করছেন বলে শুনেছি। সেই সুযোগ নিয়ে ফড়েরা সরকারি মূল্যে ধান বিক্রি করছেন।”
প্রশাসন সূত্রের খবর, কোচবিহার জেলায় শীতলখুচির কিষাণ মান্ডি এবং গুমানীর হাটের কিষাণ মান্ডিতে সহায়ক মূল্যে ধান কেনা শুরু করা হয়েছে। জানুয়ারির দ্বিতীয় সপ্তাহ থেকে সরকারি সহায়ক মূল্য ১৩৬০ টাকায় ওই ধান কেনা শুরু হয়। শুধু শীতলখুচিতেই এখন পর্যন্ত প্রায় তিরিশ হাজার কুইন্টাল ধান কেনা হয়েছে। প্রতিদিন এক হাজার কুইন্টালের উপরে ধান কেনা হচ্ছে। এই অবস্থায় গত কয়েকদিন ধরেই শীতলখুচিতে ফড়েদের দৌরাত্ম্যের অভিযোগ উঠতে শুরু করে। কৃষকদের একটি অংশের দাবি, ফড়েদের দাপটে তাঁরা স্থানীয় বাজারগুলিতে এক হাজার টাকা থেকে এগারোশ টাকা কুইন্টাল দরে ধান বিক্রি করতে বাধ্য হচ্ছেন। ওই অভিযোগ ওঠার পর গ্রাম পঞ্চায়েত প্রধান ও পঞ্চায়েত সদস্যদের সহযোগিতায় কৃষকদের চিহ্নিত করে ধান কেনা শুরু হয়। কিষাণ মান্ডির কর্মীরা জানান, প্রধানরা কৃষকদের চিহ্নিত করে একটি স্লিপ দিচ্ছেন। সেটি দেখার পর বাকি কাগজপত্র দেখে ধান কেনা হচ্ছে। ওই স্লিপও ফড়েদের হাতে চলে যাচ্ছে বলে অভিযোগ।
সিতাইয়ের বিডিও সুধাংশু পাইক বলেন, “কৃষক চিহ্নিতকরণ নিয়ে একটি সমস্যা আমাকে জানানো হয়েছিল। সেক্ষেত্রে সব খতিয়ে দেখে ধান কিনতে বলা হয়েছে। কোনও কৃষক যাতে ফিরে না যান, তা দেখতে বলা হয়েছে।”
প্রশাসনের একটি সূত্রে দাবি করা হয়েছে, স্বাভাবিক ভাবে ফড়ে ও কৃষকদের আলাদা করা খুব কষ্টকর। গ্রামে অনেক কৃষক রয়েছেন যারা ফড়ে। তারা স্বাভাবিক ভাবেই জমির কাগজ, ব্যাংক অ্যাকাউন্ট এবং কিষাণ ক্রেডিট কার্ড নিয়েও হাজির হচ্ছেন কিষাণ মান্ডিতে প্রধানের দেওয়া স্লিপও থাকছে তাঁদের হাতে। সেক্ষেত্রে তাঁদের ধান না নিয়ে উপায় কী?
শাসক দল তৃণমূলের কৃষক সংগঠনের শীতলখুচি ব্লক সভাপতি সাহের আলি মিয়াঁ বলেন, “সরকারি মূল্য কৃষকদের হাতে পৌঁছচ্ছে না। কৃষকরা সেই বঞ্চিত থাকছেন। অনেক প্রধানের ইস্যু করা স্লিপ বাইরে কিনতে পাওয়া যাচ্ছে। ওই সুযোগ নিচ্ছে ফড়েরা। একজন অনেক ধান বিক্রি করছেন। এটা বন্ধ করতে হবে। না হলে আন্দোলন করব।”
লালবাজারের এক কৃষক মজরুল হক বলেন, “আমি এ বারে ৭০ মন ধান উত্পাদন করেছি। কিষাণ মান্ডিতে নিয়ে গিয়েও বিক্রি করতে পারিনি। এখন স্থানীয় বাজার ভরসা। ওই অভিযোগ অবশ্য ঠিক নয় বলে দাবি করেছেন শাসকদলেরই শীতলখুচি গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রধান উপেন বর্মন।
তিনি বলেন, “মিথ্যে অভিযোগ করা হচ্ছে। সমস্ত কৃষক ধান বিক্রি করতে পাচ্ছে। সেখানে আমি নিজে অনেকটা সময় সেখানে থাকছি। ফড়েদের দৌরাত্ম্য নেই। ওই মান্ডির ধান কেনার দায়িত্বে থাকা সরকারি কর্মী মলয়প্রসাদ গুহ বলেন, “সমস্ত কৃষকের কাছ থেকে আমরা ধান কিনছি। গ্রাম পঞ্চায়েত প্রধানরা কৃষক চিহ্নিত করছেন। প্রয়োজনীয় কাগজ দেখা হচ্ছে। তার পরেও এমন অভিযোগ ঠিক নয়।”