ধর্ষণের চেষ্টায় অভিযুক্ত তৃণমূল নেতার হুমকি

ধর্ষণের চেষ্টায় অভিযুক্তকে পুলিশের হাত থেকে ছিনিয়ে নিয়েছিলেন তৃণমূল কর্মীরা। পরদিনই সশস্ত্র অবস্থায় এসে ভরা বাজারে অভিযোগকারিণীর স্বামীকে মারধর, হুমকির অভিযোগ উঠল সেই ‘পলাতক’ অভিযুক্তের বিরুদ্ধে। ছ’মাস ধরে ফেরার ছিল ধর্ষণের চেষ্টায় অভিযুক্ত কোচবিহারের শীতলখুচির পঞ্চারহাটের বাসিন্দা প্রকাশ বর্মন। তাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগ করেছিলেন হোটেল ব্যবসায়ী এক মহিলা। বাসিন্দাদের ক্ষোভ, স্থানীয় শালবাড়ি পঞ্চায়েতের তৃণমূলের কার্যকরী সভাপতি উত্তম বর্মনের ভাই হওয়ার ‘সুবাদেই’ তাকে ছুঁতে সাহস পায়নি পুলিশ।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কোচবিহার শেষ আপডেট: ২০ নভেম্বর ২০১৪ ০৩:০৭
Share:

ধর্ষণের চেষ্টায় অভিযুক্তকে পুলিশের হাত থেকে ছিনিয়ে নিয়েছিলেন তৃণমূল কর্মীরা। পরদিনই সশস্ত্র অবস্থায় এসে ভরা বাজারে অভিযোগকারিণীর স্বামীকে মারধর, হুমকির অভিযোগ উঠল সেই ‘পলাতক’ অভিযুক্তের বিরুদ্ধে।

Advertisement

ছ’মাস ধরে ফেরার ছিল ধর্ষণের চেষ্টায় অভিযুক্ত কোচবিহারের শীতলখুচির পঞ্চারহাটের বাসিন্দা প্রকাশ বর্মন। তাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগ করেছিলেন হোটেল ব্যবসায়ী এক মহিলা। বাসিন্দাদের ক্ষোভ, স্থানীয় শালবাড়ি পঞ্চায়েতের তৃণমূলের কার্যকরী সভাপতি উত্তম বর্মনের ভাই হওয়ার ‘সুবাদেই’ তাকে ছুঁতে সাহস পায়নি পুলিশ। মঙ্গলবার তাকে দেখে বাজারে টহলরত পুলিশদের ডেকে ধরিয়ে দেন অভিযোগকারিণী নিজেই। ঘটনাচক্রে, সেই সময় মাথাভাঙায় অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের সভায় যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন এলাকার তৃণমূল নেতা-কর্মীরা। অভিযোগ, প্রকাশের গ্রেফতারির খবর পেয়েই দাদা উত্তমের নেতৃত্বে তাঁরা পুলিশের উপরে চড়াও হন। মারধর করেন পুলিশকর্মীদের, ভাঙচুর করা হয় জিপ। প্রকাশকে কার্যত ছিনিয়ে নিয়ে যাওয়া হয় বলে অভিযোগ। মঙ্গলবার রাতে পুলিশ কারও খোঁজ পায়নি।

বুধবারই ফের দলবল নিয়ে প্রকাশ এলাকায় হাজির হয়, জানিয়েছেন শাসক দলেরই গ্রাম পঞ্চায়েত সদস্য ছকমল মিঁয়া। তাঁর অভিযোগ, “সকাল ৮টা নাগাদ প্রকাশ-সহ ২৫জনের একটি দল সশস্ত্র অবস্থায় বাজারে ঢুকে শাসিয়ে যায়। যারা আক্রান্ত মহিলার পাশে দাঁড়িয়েছে তাঁদের দেখে নেওয়ার হুমকি দেয় ওরা।”

Advertisement

ছকমল বলেন, “ওই মহিলার পক্ষ নেওয়ায় আমাদের এক কর্মীকে ছুরি দেখিয়ে ভয় দেখানো হয়। কথা না শুনলে বাজারে থাকতে দেওয়া হবে না বলেও শাসানো হয়। দলীয় নেতৃত্বকে সব জানিয়েছি।”

অভিযোগকারিণী জানান, এ দিন সকালে তাঁর স্বামী বাড়ি থেকে বেরিয়ে তাঁদের হোটেলের দিকে যাচ্ছিলেন। সেই সময় রাস্তায় প্রকাশ তাঁকে আটকে মারধর করে। তিনি বলেন, “কাচের বোতল ভেঙে আমার স্বামীকে মারার চেষ্টা হয়। অভিযোগ তুলে নেওয়ার জন্য আমাদের উপর চাপ তৈরি করা হচ্ছে। পুলিশকে সব জানিয়েছি।”

শীতলখুচি থানা থেকে ওই এলাকায় যেতে ঘণ্টা দেড়েক সময় লাগে। এই ঘটনার পরেও পুলিশের কেউ কেন সেখানে যায়নি তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন বাসিন্দারা। তবে মঙ্গলবারের হামলার ঘটনায় পুলিশ প্রকাশ ও উত্তম-সহ ১৪ জন তৃণমূল নেতা-কর্মীর নামে অভিযোগ দায়ের করেছে। তবে রাত পর্যন্ত ধরা যায়নি কাউকেই। ‘পলাতক’ হলেও কীভাবে এলাকায় এসে হুমকি দিচ্ছে অভিযুক্তেরা? জেলা পুলিশ সুপার রাজেশ যাদব বলেন, “অভিযুক্তরা পালিয়ে যাওয়ায় তাঁদের ধরা যায়নি। তল্লাশি চলছে। অভিযোগকারিণীর যাতে কোনও অসুবিধে না হয় সেদিকে আমরা লক্ষ রাখছি।”

উত্তমবাবুর পাল্টা অভিযোগ, “ছকমল-সহ দলের একটি গোষ্ঠী আমাদের বদনাম করার চেষ্টা করছে।” তাঁর দাবি, তিনি বা তাঁর দলের সদস্যরা বাজারে গিয়ে হুমকি দেওয়ার অভিযোগ মিথ্যা। পুলিশ জানিয়েছে, উত্তমবাবুর নেতৃত্বেই পুলিশের উপরে হামলা হয়েছে।

ঘটনার ২৪ ঘণ্টা পরেও বিষয়টি ‘জানেন না’ বলে দাবি করেছেন স্থানীয় তৃণমূল বিধায়ক হিতেন বর্মন এবং জেলা তৃণমূল সভাপতি রবীন্দ্রনাথ ঘোষ। হিতেনবাবুর মন্তব্য, “বিধানসভা চলছে। কলকাতায় আছি। খোঁজ নিচ্ছি।” তবে অভিযুক্তকে দোষী মানতে নারাজ দলের শীতলখুচি ব্লক সভাপতি আবেদ আলি মিয়াঁ। তিনি বলেন, “কারও বিরুদ্ধে অভিযোগ হলেই তিনি দোষী নন। তদন্তে উত্তমবাবু দোষী প্রমাণিত হলে পুলিশ ব্যবস্থা নিক।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন