নিকাশি-পরিকাঠামো বেহাল, জমা আবর্জনায় ঢাকছে শহর

পুরসভার উদাসীনতায় শিলিগুড়ি শহরের নানা এলাকায় জঞ্জাল সাফাই ও নিকাশি বেহাল হয়ে পড়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। বিধান রোড, হিলকার্ট রোড, সেবক রোডের মতো বাণিজ্যিক এলাকা থেকে শুরু করে পাড়ায়-পাড়ায় নর্দমা আবর্জনায় ভরে গিয়েছে। বাসিন্দাদের অবিযোগ, প্রায় দু সপ্তাহ ধরে নর্দমা সাফাইয়ের কর্মীদের দেখা মিলছে না। হাকিমপাড়া, সুভাষপল্লি, আশ্রমপাড়া, ভারতনগর, ডাবগ্রাম সহ বিস্তীর্ণ এলাকায় নদর্মার বেহাল দশা।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

শিলিগুড়ি শেষ আপডেট: ২২ এপ্রিল ২০১৪ ০২:১৬
Share:

নিয়মিত সাফাই না হওয়ায় রাস্তার উপরেই চলে এসেছে জঞ্জালের স্তূপ। শহর জুড়েই এই ছবি শিলিগুড়িতে। বিশ্বরূপ বসাকের তোলা ছবি।

পুরসভার উদাসীনতায় শিলিগুড়ি শহরের নানা এলাকায় জঞ্জাল সাফাই ও নিকাশি বেহাল হয়ে পড়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। বিধান রোড, হিলকার্ট রোড, সেবক রোডের মতো বাণিজ্যিক এলাকা থেকে শুরু করে পাড়ায়-পাড়ায় নর্দমা আবর্জনায় ভরে গিয়েছে। বাসিন্দাদের অবিযোগ, প্রায় দু সপ্তাহ ধরে নর্দমা সাফাইয়ের কর্মীদের দেখা মিলছে না। হাকিমপাড়া, সুভাষপল্লি, আশ্রমপাড়া, ভারতনগর, ডাবগ্রাম সহ বিস্তীর্ণ এলাকায় নদর্মার বেহাল দশা। কিন্তু, অদিকাংশ ক্ষেত্রেই পুরসবার কোনও হেলদোল নেই। কয়েকজন কাউন্সিলরের ভূমিকা নিয়ে বাসিন্দাদের মধ্যে ক্ষোভ দানা বাঁধছে। পুরসভার সাফাই বিভাগের বিরুদ্ধেও অভিযোগ করছেন ভুক্তভোগীরা।

Advertisement

শহরের ৬ নম্বর ওয়ার্ডের কথাই ধরা যাক। সেখানে রাজেন্দ্র প্রসাদ স্কুলের পিছনের রাস্তায় বাড়ি ভাঙার অংশ ও অন্যান্য আবর্জনা জমে রয়েছে অন্তত ২০ দিন ধরে। কাউন্সিলর প্রতিদিনই তা সরাতে অনুরোধ করছেন সাফাই বিভাগের মেয়র পারিষদকে। অথচ আজও তা সরেনি। সেবক রোড, হিলকার্ড রোডের বিভিন্ন এলাকার আবর্জনা স্তূপাকারে পড়ে রয়েছে। গত ১ সপ্তাহ ধরে ১০ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর কমল অগ্রবাল মহানন্দা পাড়ার এক জায়গায় আবর্জনার স্তূপ সরাতে সাফাই বিভাগের মেয়র পারিষদকে জঞ্জাল তোলার গাড়ি পাঠাতে বলছেন। অথচ আজ হবে, কাল হবে করে সেই আবর্জনা পড়েই থাকে বলে অভিযোগ।

২৪ নম্বর ওয়ার্ডে গুরুসদয় দত্ত রোডের বিভিন্ন জায়গায় আবর্জনার স্তূপ। ওয়ার্ডে নিকাশি নালাগুলি দীর্ঘদিন ধরে সাফাইয়ের অভাবে বন্ধ হয়ে পড়েছে। শহরের, ১০, ১১, ১২, ২৪, ২৬, ২৮, ৪১-৪৪, ৪৬ নম্বর ওয়ার্ড-সহ বিভিন্ন এলাকায় আবর্জনার স্তূপ জমেছে বলে স্থানীয় বাসিন্দারা অভিযোগ করেছেন। নির্বাচনের আগে থেকেই শিলিগুড়ি শহরের সাফাই পরিষেবা শিকেয় উঠেছে। বাড়ির সামনে রাস্তায় আবর্জনার স্তূপ জমে থাকায় বা তা পেরিয়ে যাতায়াত করতে দুভোর্গ পোহাতে হচ্ছে বাসিন্দাদের।

Advertisement

এই মুহূর্তে শহরের বাইরে রয়েছেন মেয়র গঙ্গোত্রী দত্ত। তিনি বলেন, “ভোটের সময় কাজের কিছুটা সমস্যা হয়। তবে সাফাইয়ের পরিষেবা যাতে ঠিক মত হয় তা গুরুত্ব দিয়ে দেখা হচ্ছে।” পুরসভার ২৩ নম্বর ওয়ার্ডের তৃণমূল কাউন্সিলর কৃষ্ণ পাল জানান, আগে শহরে মাছির উপদ্রব ছিল না। শহরের পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতার অভাবে এখন বিভিন্ন এলাকাতেই মাছির উপদ্রব শুরু হয়েছে। অনেক মানুষ অভিযোগ করছেন। সঠিক ভাবে সাফাইয়ের কাজ না-হওয়া, ব্লিচিং না ছড়ানোর কারণেই মাছি, মশার উপদ্রব শুরু হয়েছে। সন্ধ্যার পর থেকে শহরে মশার উপদ্রবের জন্য পুর কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা না নেওয়ার অভিযোগ তুলেছেন তিনি। নিকাশি নালাগুলি ঠিক মতো পরিষ্কার করা হচ্ছে না বলে তাঁর অভিযোগ।

সাফাই বিভাগের মেয়র পারিষদ স্বপন চন্দ জানিয়েছেন, নির্বাচনের দিন শহরের সাফাই পরিষেবা কিছুটা বিপর্যস্ত হয়েছিল। কর্মীদের অনেকে ভোট নিয়ে ব্যস্ত থাকায় কাজে আসেনি। তা সামাল দিতে দুটো দিন সময় লাগছে। তবে সোমবারের মধ্যেই কোথাও যাতে কোনও আবর্জনার স্তূপ না-জমে থাকে সেই ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। নিকাশি নালাগুলি পরিষ্কারেও ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানান।

কংগ্রেসের ক্ষমতায় থাকা পুর বোর্ডের সাফাই বিভাগের মেয়র পারিষদ যে আশ্বাস-ই দেন না কেন বিরোধী সিপিএম, তৃণমূল কাউন্সিলর এমনকী কংগ্রেসের কাউন্সিলরদের কেউ কেউ ওয়ার্ডের সাফাই পরিষেবা নিয়ে বিপাকে। ৬ নম্বর ওয়ার্ডের ফকিরটোলা, কুরেশিমহল্লা, মহাবীর স্থানের উড়ালপুলের নীচে আবর্জনা জমে থাকার কারণে বাসিন্দারাও কাউন্সিলরকে দোষারোপ করছেন। ওয়ার্ডের কংগ্রেস কাউন্সিলর রুমা নাথ বলেন, “এটা ঠিক কুরেশিমহল্লা, ফকিরটোলা এলাকার মতো কয়েকটি জায়গায় আবর্জনা ঠিক মতো সাফাই না-হওয়ায় সমস্যা রয়েছে। এক সপ্তাহ ধরে সাফাই বিভাগের কাছে গাড়ি চাওয়া হচ্ছে আবর্জনা তোলার জন্য। অথচ গাড়ি না-মেলায় তা তোলা যাচ্ছে না বলে জানানো হচ্ছে। বাসিন্দারা আমাকে রোজই নানা কথা বলছেন।” কুরেশি মহল্লার নিকাশি সাফাই নিয়েও বিপাকে পড়েছেন। তিনি। হাইড্রেনের বিভিন্ন অংশে আবর্জনা জমে বেহাল হয়ে পড়েছে বলে অভিযোগ।

বিরোধী দলনেতা মুন্সি নুরুল ইসলাম সাফাই বিভাগের পরিষেবা নিয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন। তিনি জানান নানা ওয়ার্ডে সাফাই পরিষেবার হাল অত্যন্ত খারাপ। ওয়ার্ডের সাফাই কর্মীরা আবর্জনা তুলে অনেক ক্ষেত্রে জমা করে রাখছেন। কিন্তু সেগুলি ডাম্পিং গ্রাউন্ডে নিয়ে না যাওয়ায় গত ১৫ দিনের বেশি ওয়ার্ডে আবর্জনা জমে রয়েছে। হাই ড্রেনের মতো নিকাশি নালাগুলি পরিষ্কার করা হচ্ছে না। শহরের বিভিন্ন রাস্তায় আবর্জনার ঠিক মতো সাফাই না হওয়ায় ক্ষুব্ধ বাসিন্দারা। মেয়রের ১২ নম্বর ওয়ার্ডে রাজা রামমোহন রায় রোড বাইলেনে, চার্চরোডের একাধিক জায়গায়, বিধান মার্কেটের বিভিন্ন অংশে, মহাবীরস্থানের উড়ালপুলের নিচের অংশে আবর্জনার স্তূপ রয়েছে বলে তাঁদের অভিযোগ।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন