জেলা ও ব্লক স্তরের কয়েক জন পুরানো নেতাকে সরিয়ে নতুনদের দায়িত্ব দেওয়ার জেরে তৃণমূল কার্যালয়ে নিগৃহীত হন জলপাইগুড়ির দলীয় পর্যবেক্ষক সৌরভ চক্রবর্তী। সেই ঘটনার তিন দিনের মাথায় জলপাইগুড়িতে কর্মিসভা করে সৌরভবাবুকেই জেলায় নির্বাচন পরিচালনার দায়িত্ব দিলেন প্রদেশ তৃণমূল সভাপতি সুব্রত বক্সি। ওই সভায় উপস্থিত ছিলেন তৃণমূলের উত্তরবঙ্গের কোর কমিটির চেয়ারম্যান তথা উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী গৌতম দেবও। সুব্রতবাবু বলেন, “জলপাইগুড়ি এবং আলিপুরদুয়ার দুই লোকসভা কেন্দ্রের দায়িত্ব সৌরভবাবুকে দেওয়া হয়েছে। জেলার যাবতীয় পুরানো কমিটি ভোট প্রক্রিয়া শেষ হওয়া পর্যন্ত অকেজো করা হল। সৌরভ নতুন কমিটি গড়ে ভোট পরিচালনা করবেন।”
এতদিন পর্যন্ত দার্জিলিং ছাড়াও জলপাইগুড়ি লোকসভা কেন্দ্রে ভোটের প্রচার করছিলেন গৌতমবাবু। তিন দিন আগে ধূপগুড়িতে কর্মিসভাও করেছেন তিনি। এদিনের সিদ্ধান্তের ফলে গৌতমবাবুর গুরুত্ব কিছুটা কমানো হল কি না, তা নিয়ে দলের অন্দরেই নানা আলোচনা শুরু হয়েছে। এই প্রসঙ্গে প্রশ্ন করা হলে সুব্রতবাবু বলেন, “দার্জিলিং পাহাড়ের পরিস্থিতি পাল্টেছে। গৌতম পাহাড় নিয়ে খুবই ব্যস্ত থাকবে। সে জন্য জলপাইগুড়ির দায়িত্ব সৌরভকে দেওয়া হয়েছে।” তবে তিনি জানিয়েছেন, জলপাইগুড়ির ডাবগ্রাম-ফুলবাড়ি বিধানসভা কেন্দ্র গৌতমবাবুই দেখবেন। তিনিই সেখানকার বিধায়ক। দল সূত্রের খবর, মুখ্যমন্ত্রী তথা দলনেত্রীও গৌতমবাবুকে শুধু দার্জিলিং কেন্দ্রে মনোবিবেশ করার নির্দেশ দিয়েছেন।
গৌতমবাবুরও দাবি, তৃণমূলে উপদলীয় কোন্দল নেই। তাঁর কথায়, “আমাদের দলের একজনই নেত্রী। সকলে তাঁর কথা শুনেই কাজ করে থাকি।” এর পরে তাঁর সংযোজন, “ভোটের আগে সময় বেশি নেই। তাই সব দিকে নজর দেওয়া সমস্যা হতে পারে। জলপাইগুড়ির দায়িত্ব সৌরভ নেওয়ায় সুবিধে হবে। এর পর কোনও প্রয়োজন হলে নিশ্চয়ই দেখব।”
এদিন দুপুরে জলপাইগুড়ির আর্ট গ্যালারিতে কর্মিসভায় পৌঁছে সুব্রতবাবু নিজেই দর্শকাসন থেকে সৌরভবাবুকে মঞ্চে ডেকে নেন। তার পরে সভার গোড়াতেই সুব্রতবাবু স্পষ্ট করে দেন, অন্তর্দ্বন্দ্ব বরদাস্ত করা হবে না। গত রবিবার দলের জেলা কার্যালয়ে সৌরভবাবু এবং তাঁর অনুগামীদের নিগ্রহের অভিযোগ ওঠে। ঘটনার পরে জেলায় দলের ক্ষমতাসীন গোষ্ঠী রাজ্য নেতৃত্বকে সৌরভবাবুর বিরুদ্ধেই অভিযোগ করেছিলেন। তাঁদের দাবি ছিল, আলোচনা না করে সৌরভবাবু একতরফা ভাবে সদ্য তৃণমূলে যোগ দেওয়া কয়েকজনকে বিভিন্ন দায়িত্ব দেওয়ায় দলে ক্ষোভ তৈরি হয়েছে। পক্ষান্তরে, হামলায় যাঁদের নাম জড়ায়, তাঁদের ভূমিকা নিয়ে দলের শীর্ষ নেতাদের কাছে ক্ষোভ জানান সৌরভবাবু। দল সূত্রের খবর, উভয়পক্ষের মত শোনার পরেই সুব্রতবাবু ভোট প্রক্রিয়ার জন্য নতুন করে দলের জলপাইগুড়ি জেলার সব স্তরের কমিটি গড়ার ভার দেন সৌরভবাবুকে।