গুলিবিদ্ধ তৌসিক।—নিজস্ব চিত্র।
২৪ ঘন্টাও কাটল না। ফের গুলি চলল কালিয়াচকের নওদা যদুপুরে।
বৃহস্পতিবারই খোট্টাপাড়া গ্রামে গুলিতে খুন হন সাদেক মৌমিন। ঘটনার অপরাধীদের গ্রেফতারের দাবিতে মৃতদেহ নিয়ে জাতীয় সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ দেখিয়েছিলেন পরিবারের লোকেরা। ঘটনায় একজনকেও গ্রেফতার করতে পারেনি পুলিশ। এর মধ্যে একই থানা এলাকার একই গ্রামে দুষ্কৃতীদের গুলিতে আহত হল এক স্কুল পড়ুয়া। শুক্রবার বেলা সাড়ে পাঁচটা ফের প্রকাশ্যে গুলির ঘটনায় উত্তেজিত হয়ে পড়েন গ্রামবাসীরা। এদিনের গুলি চালানোর ঘটনাতেও নাম জড়িয়েছে বহিষ্কৃত তৃণমূল নেতা বকুল শেখের। পুলিশ জানিয়েছে, আহত ছাত্রের নাম তৌসিক ইকবাল। সে স্থানীয় একটি ইংরেজি মাধ্যম স্কুলের দ্বিতীয় শ্রেণির পড়ুয়া। তার বাবা আব্দুল করিম পেশায় কাপড়ের ব্যবসায়ী। আশঙ্কাজনক অবস্থায় তৌসিক ভর্তি রয়েছে মালদহ মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালে। তৌসিকের মা মোহসিনা বিবি বলেন, আমার দুই ছেলে ছাদে খেলা করছিল। হঠাৎ করে বাইরে গুলির শব্দ শুনতে পাই। তাদেরকে ছাদ থেকে নিয়ে আসতে গেলে দেখি ছোট ছেলে রক্তাক্ত অবস্থায় কাতরাচ্ছে। তারপরেও আমরা তাকে হাসপাতালে নিয়ে আসি। এমন ঘটনায় আমরা খুবই আতঙ্কে রয়েছি। ঘর থেকে বের হতেই ভয় হচ্ছে। মালদহের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার অভিষেক মোদী বলেন, ঘটনাস্থলে পুলিশ রয়েছে। পুরো ঘটনার তদন্ত শুরু হয়েছে।
কালিয়াচকের নওদা যদুপুরে এলাকা দখলকে কেন্দ্র করে বহিষ্কৃত তৃণমূল নেতা বকুল শেখের সঙ্গে জাকির শেখের লড়াই চলছে। গত বৃহস্পতিবার নওদা যদুপুরের খোট্টা পাড়া গ্রামের বাসিন্দা সাদেক মৌমিনকে গুলি করে খুনের অভিযোগ ওঠে বহিষ্কৃত তৃণমূল নেতা বকুল শেখের বিরুদ্ধে। সাদেক ছিলেন তৃণমূল নেতা জাকির শেখের ছায়া সঙ্গী। সেই খোট্টাপাড়াতেই একটি কাপড়ের দোকান রয়েছে আব্দুল করিমের। তাঁর তিন ছেলে মেয়ে। মেয়ে স্থানীয় হাই স্কুলের দশম শ্রেণির ছাত্রী। আর এক ছেলে আসিক ইকবাল জালালপুর হাই স্কুলের পঞ্চম শ্রেণিতে এবং তৌসিক স্থানীয় একটি ইংরেজি মাধ্যম স্কুলে দ্বিতীয় শ্রেণিতে পড়াশুনা করে। এদিন বিকেল বেলা আসিক এবং তৌসিক বাড়ির ছাদের মধ্যে খেলা করছিল। সেই সময় এলাকাতে বহিরাগত একদল দুষ্কৃতী শুন্যে গুলি ছুড়ছিল। গুলির শব্দে তৌসিক এবং আসিক ছাদ থেকে উঁকি ফেরে দেখতে যায়। সেই সময় একটি গুলি ছুটে গিয়ে লাগে তৌসিক শেখের ডান হাতে। রক্তাক্ত অবস্থায় মাটিতে লুটিয়ে পড়ে তৌসিক।
একই এলাকায় পরপর গুলি চলার ঘটনায় পুলিশের ভুমিকায় ক্ষোভ প্রকাশ করেন স্থানীয় বাসিন্দারা। পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, নওদা যদুপুর বাজারে একটি অস্থায়ী পুলিশ ক্যাম্প করা হয়েছে। সেখানে এক অফিসার-সহ পাঁচ পুলিশ কর্মী রয়েছে। অস্থায়ী পুলিশ ক্যাম্প থেকে ঘটনাস্থলের দূরত্ব প্রায় এক কিলোমিটার। তারপরেও পুলিশ সময় মতো ঘটনাস্থলে আসেনি বলে অভিযোগ। যার জন্য এলাকায় আগ্নেয়াস্ত্র নিয়ে দুষ্কৃতীরা দাপিয়ে বেড়িয়েছে বলে দাবি সাধারণ মানুষের। স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, পাঁচটি মোটরবাইকে জনা কুড়ি আগ্নেয়াস্ত্রধারী যুবক বেলা সাড়ে চারটে থেকে ঘন্টা খানেক ধরে এলাকায় দাপিয়ে বেড়ায়। দুষ্কৃতীদের ভয়ে পুলিশ এলাকায় যাওয়ার সাহস দেখায়নি বলেও অভিযোগ জনতার।