বরাদ্দ ঘোষণা করে টেন্ডারও ডাকা হয়েছিল। কিন্তু কোন প্রকল্পে একটি ঠিকাদার সংস্থা দরপত্র জমা দেয়, কোনও প্রকল্পে আবার দরপত্র জমাই পড়েনি। এতে রাজ্যের ৫টি বড় সড়ক সংস্কার প্রকল্প রুপায়ন করা নিয়ে অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছে। উত্তরবঙ্গের কোচবিহার ছাড়াও দক্ষিণবঙ্গের হুগলি ও বর্ধমান জেলায় রাস্তাগুলি রয়েছে। ওই পূর্ত দফতরের রাজ্য ও জাতীয় সড়কগুলি চওড়া করে সংস্কার কাজের ঠিকাদার সংস্থাগুলির অনীহায় চিন্তায় পূর্ত কর্তারা। শনিবার কোচবিহার সফরে এসে ঠিকাদার সমস্যায় ঝুলে যাওয়া দুটি প্রকল্প নিয়ে প্রশাসনের কর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করেন রাজ্য পূর্ত দফতরের প্রধান সচিব ইন্দিবর পান্ডে।
তিনি বলেন, “টাকার অভাব নেই। বরং বরাদ্দ পড়ে রয়েছে। কিন্তু বড় অঙ্কের প্রকল্প নিয়ে ঠিকাদার সংস্থাগুলির তেমন আগ্রহ দেখা যাচ্ছে না। এতে রাজ্যে বেশ কয়েকটি বড় সড়ক সংস্কার করা নিয়ে সমস্যা তৈরি হয়েছে। নির্বাচন পর্ব মিটলে ফের টেন্ডার ডাকার পাশাপাশি বড় ঠিকাদার সংস্থাগুলির সঙ্গে যোগাযোগ করা হবে।” পূর্ত পরিষদীয় সচিব রবীন্দ্রনাথ ঘোষও সমস্যার কথা স্বীকার করে বলেন, “বড় অঙ্কের ওই কাজ কেউ করতেই চাইছে না। ভোট মিটলে থমকে থাকা বড় কাজের প্রকল্পগুলি নিয়ে ফের টেন্ডার ডাকা হবে।”
পূর্ত দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, কোচবিহারের পুন্ডিবাড়ি থেকে অসম সীমানার বক্সিরহাট ৩১ নম্বর জাতীয় সড়কের প্রায় ৪৫ কিমি এলাকা চওড়া করতে কেন্দ্রীয় সরকারের জাতীয় সড়ক কর্তৃপক্ষ ২৮৫ কোটি টাকা বরাদ্দ করেছে। রাস্তাটি এখন ৭ মিটার চওড়া রয়েছে। বিক্ষিপ্তভাবে বেশ কিছু এলাকায় খানাখন্দ তৈরি হয়েছে। তার ওপর বেড়েছে যানবাহনের চাপ। পরিস্থিতির জেরে রাস্তাটি সংস্কারের পাশাপাশি ৩ টি মিটার চওড়া করার পরিকল্পনা নেওয়া হয়। এছাড়াও ওই রাস্তার অসম সীমানা লাগোয়া জোড়াই মোড় এলাকায় অসম সীমানা পর্যন্ত এলাকায় ভিনরাজ্যে যাতায়াতকারী ট্রাকের লাইনের জেরে নিত্যযানজট এড়াতে ফোর লেন করার বিষয়টিও পরিকল্পনায় রাখা হয়। পূর্ত দফতরের তরফে ওই কাজের টেন্ডার ডাকা হয়। গত এপ্রিল মাসে টেন্ডার খোলা হলে দেখা যায় দরপত্র জমা পড়েনি।
কোচবিহার-চ্যাংরাবান্ধা ৯০ কিমি রাজ্য সড়ক দেড় মিটার চওড়া করে ৭ মিটার করে সংস্কার প্রকল্পের জন্য বরাদ্দ হয়েছে ১৭৫ কোটি টাকা। নির্ধারিত সময়সীমার মধ্যে ওই কাজের জন্য অবশ্য মাত্র একটি দরপত্র জমা পড়ে। নিয়ম অনুযায়ী অন্তত তিনটি সংস্থা দরপত্র জমা না দেওয়ায় টেন্ডার প্রক্রিয়া বাতিল করা হয়। পূর্ত দফতরের প্রধান সচিব ইন্দিবর পান্ডে জানান, বিপুল অঙ্কের টাকার একটি প্রকল্প নিয়ে ঠিকাদার সংস্থার অনীহার জন্য রাস্তাগুলিকে ছোট ছোট অংশে ভাগ করে ফের টেন্ডার ডাকা হচ্ছে। এই প্রসঙ্গে কোচবিহারের জেলাশাসক মোহন গাঁধী বলেন, “দুটি সড়কের দু’ধারেই পর্যাপ্ত জমি রয়েছে। সম্প্রসারণে সমস্যা নেই। নতুন করে টেন্ডার ডাকা হলে, আমাদের আশা ঠিকাদার সংস্থাগুলি অংশ নেবেন।” উত্তরবঙ্গের দুটি প্রকল্প ছাড়াও একই সমস্যা দেখা দিয়েছে দক্ষিণবঙ্গের অন্তত তিনটি সড়ক প্রকল্পেও। পূর্ত দফতর সূত্রেই জানা গিয়েছে, হুগলির আরামবাগ থেকে হুগলি এবং বর্ধমান জেলার দুটি সড়ক প্রকল্পের প্রতিটিতে গড়ে ১০০ কোটি টাকার বেশি বরাদ্দ রয়েছে। দফতরের এক কর্তার কথায়, ওই প্রকল্পগুলির জন্য দরপত্র জমা পড়েনি। একটি বড় প্রকল্পের বদলে অপেক্ষাকৃত কম বরাদ্দে একসঙ্গে তিন চারটি প্রকল্পের কাজ নেওয়ার দিকে ঠিকাদার সংস্থাগুলির ঝোঁক বেড়েছে বলে এমন সমস্যা হচ্ছে। ঠিকাদার সংস্থার কর্তারা অবশ্য তা মানতে চাননি। তাঁদের সংগঠন ফেডারেশন অব কন্ট্রাক্টরস অ্যাসোসিয়েশন অব ওয়েস্টবেঙ্গলের সদস্য শুভাশিস ঘোষ বলেন, “২০০৮ সালের শিডিউল মেনে রাজ্য সরকার বর্তমান সময়ে কাজ করাতে চাইছেন। বিটুমিন থেকে বিভিন্ন সামগ্রীর মূল্যবৃদ্ধির জেরে শিডিউল না বদলালে কাজ করা আখেরে ক্ষতি। টেন্ডারে অংশ নেওয়ার ব্যাপারে সংস্থাগুলির আগ্রহ নেই।”
সংগঠনের কোচবিহারের কয়েক জন সদস্য জানান, মূল্যবৃদ্ধির জেরে পুরানো শিডিউল মেনে চলতে থাকা প্রকল্পের কাজ সম্পূর্ণ করতে গিয়ে অনেকে ক্ষতির মুখে পড়েছেন। তা ছাড়া বড় কাজের জন্য যে পরিমাণ হাতে টাকা জমা থাকা, আধুনিক যন্ত্র দেখাতে হয় তা নিয়ে সমস্যা রয়েছে। তাই ছোট ছোট অংশে কাজ হলে অনেকেই করতে পারেন। ঠিকাদারদের অভিযোগ প্রসঙ্গে এ দিন রবীন্দ্রনাথবাবু কোনও মন্তব্য করতে চাননি।