প্রতি পদে সেনা, রেলের অনুমতি আর কত দিন, প্রশ্ন বাগডোগরায়

সরকারি ভরসায় না থেকে বাগডোগরায় একটা ফুটবল ও ক্রিকেট কোচিং সেন্টার চালানোর কথা ভেবেছিলেন স্থানীয় ক্রীড়াপ্রেমীরা। কিন্তু, ফাঁকা মাঠ তো বেশির ভাগ সেনাবাহিনীর অধীনে রয়েছে। বিস্তর কাঠখড় পুড়িয়েও সেই অনুমতি আদায় করতে পারেননি উদ্যোগীরা।

Advertisement

কিশোর সাহা

শিলিগুড়ি শেষ আপডেট: ০৯ অগস্ট ২০১৪ ০৩:২৩
Share:

ফাঁকা পড়ে মাঠ। একাধিকবার আবেদন করা হলেও ফুটবল বা ক্রিকেটের কোচিং সেন্টারের অনুমতি মেলেনি। বিশ্বরূপ বসাকের তোলা ছবি।

সরকারি ভরসায় না থেকে বাগডোগরায় একটা ফুটবল ও ক্রিকেট কোচিং সেন্টার চালানোর কথা ভেবেছিলেন স্থানীয় ক্রীড়াপ্রেমীরা। কিন্তু, ফাঁকা মাঠ তো বেশির ভাগ সেনাবাহিনীর অধীনে রয়েছে। বিস্তর কাঠখড় পুড়িয়েও সেই অনুমতি আদায় করতে পারেননি উদ্যোগীরা। হাল না ছেড়ে তাঁরা গিয়েছিলেন রেল কর্তৃপক্ষের কাছে। কারণ, বাগডোগরায় ফাঁকা জমির অনেকটা রেলের আওতায় রয়েছে। কিন্তু, কাটিহারের ডিআরএম অফিসে একাধিকবার ছোটাছুটি করেও সেই জমিতে কোচিং ক্যাম্প করার অনুমতি মেলেনি। তবে বছরে এক-আধবার ছোটখাট টুর্নামেন্ট চালানোর জন্য অনুমতি মিলেছে। তাই বাগডোগরার বাসিন্দাদের অনেকেই আক্ষেপ করে জানান, প্রতি পদে হয় সেনাবাহিনী না হলে রেলের অনুমতি নিতে হয় বলেই এগোনোর পথে বারেবারেই হোঁচট খেতে হচ্ছে।

Advertisement

তাই বাগডোগরার হাটে-বাজারে সর্বত্রই শোনা যায় আক্ষেপের সুর। ব্যবসায়ী সমিতির কর্তা থেকে শুরু করে নাগরিক কমিটির মুখপাত্র সখেদে জানিয়ে দেন, স্বাধীনতার পর থেকে একাধিক সরকার বদল হলেও বাগডোগরা বাসীর সেনা ও রেলের অনুমতি নির্ভর হয়ে বেঁচে থাকা প্রক্রিয়া পাল্টায়নি। এমনকী, রাজ্যে পরিবর্তনের পরেও বাগডোগরার হাল সে ভাবে বদলায়নি। উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী গৌতম দেবের উদ্যোগে এলাকায় কিছু রাস্তাঘাট হয়েছে। কংগ্রেস বিধায়ক শঙ্কর মালাকারের উদ্যোগে আবর্জনা তুলে নিয়ে অন্যত্র ফেলার জন্য ভ্যান-রিকশার ব্যবস্থা হয়েছে। কিন্তু, রেলের ফেলে রাখা জমিতে ব্যবসায়ীদের পুনর্বাসনের প্রক্রিয়া এতুটকুও এগোয়নি। তেমনই সেনাবাহিনীর কাছ থেকেও ফেলে রাখা জমি আদায়ের ব্যাপারে সরকারি তৎপরতা দেখা যায়নি। ফলে, বাগডোগরার বিস্তীর্ণ এলাকার বাসিন্দা ও ব্যবসায়ীরা সেই তিমিরেই রয়ে গিয়েছেন।

আরও একটা গুরুত্বপূর্ণ ক্ষেত্রে বাগডোগরার সার্বিক বিকাশের প্রভূত সম্ভাবনা রয়েছে বলে মনে করে বাগডোগরা ব্যবসায়ী সমিতি। তা হল পর্যটন কেন্দ্র হিসেবে বাগডোগরাকে যদি গড়ে তোলা যায়। বাগডোগরা বিমানবন্দর থেকে বেরিয়ে ৫ মিনিটের মধ্যেই পৌঁছে যাওয়া যায় আপার বাগডোগরা এলাকায়। সেখানে বড় মাপের জায়গা ঘিঞ্জি হয়ে রয়েছে। পরিকল্পিত ভাবে সেখানে ‘পরিবহণ নগর’ গড়ে তোলার জন্য সরকারের কাছে অনেকবার আর্জি জানিয়েছে সমিতি। সেই প্রস্তাব অনুযায়ী, পরিবহণ নগরী হলে লাগোয়া চা বাগান এলাকায় পর্যটকদের জন্য কটেজ তৈরি হবে। চা-পর্যটন শিল্পে গতি আসবে। কারণ, বাগডোগরায় রয়েছে একাধিক চা বাগান। তা ছাড়া, বাগডোগরা থেকে পানিঘাটা-দুধিয়া হয়ে দার্জিলিং যাওয়ার সুন্দর রাস্তা রয়েছে। সে ক্ষেত্রে শিলিগুড়ি কিংবা মাটিগাড়া হয়ে যাওয়ার চেয়ে কম সময় লাগবে। এলাকায় ছোট ও বড় গাড়ির চাহিদা বাড়বে। বাগডোগরা ব্যবসায়ী সমিতির সম্পাদক তথা এলাকার তৃণমূল নেতা প্রবীর রায় বললেন, “পর্যটন কেন্দ্র হিসেবে বাগডোগরাকে গড়ে তোলা খুব জরুরি। এতে প্রচুর কর্মসংস্থান হতে পারে। সরকারি মহলে আমরা সব জানিয়েছি। দেখা যাক কী হয়।” এর পরেই তাঁর সংযোজন, “জমি-জট না খুললে বাগডোগরা এগোতে পারবে না। সেটাই সবচেয়ে বড় সমস্যা।”

Advertisement

দলমত নির্বিশেষে বাগডোগরার নেতা-কর্তারা একটা ব্যাপারে সকলেই একান্তে ক্ষোভ প্রকাশ করে থাকেন। সিপিএম নেতা তথা প্রাক্তন পুরমন্ত্রী অশোক ভট্টাচার্যও মনে করেন, বাগডোগরার জমির সমস্যা মেটাতে কেন্দ্র ও রাজ্য সরকারের উদ্যোগী হওয়া উচিত। বাম আমলে তাঁরা নানা বাবে চেষ্টা করলেও কেন্দ্রের তরফে সহযোগিতা মেলেনি বলে তিনি দাবি করেছেন। মাটিগাড়া-নকশালবাড়ির কংগ্রেস বিধায়ক শঙ্করবাবু জানান, তাঁরা কেন্দ্রে ক্ষমতাসীন থাকার সময়ে জমি হস্তান্তরের ব্যাপারে চিঠি চালাচালি শুরু করেছিলেন। বাগডোগরার এয়ারপোর্ট মোড়ের এক প্রবীণ ব্যবসায়ী জানান, সকলে চেষ্টা করলে কী হবে, কাজের কাজটা তো হয়নি। সে জন্য চেষ্টার আন্তরিকতা নিয়ে সন্দেহ থেকেই যাচ্ছে তাঁদের।

দিনের পর দিন এমন চলতে পারে? এই প্রশ্ন তুলে একরাশ বিরক্তি প্রকাশ করেন বাগডোগরা নাগরিক কমিটির কর্মকর্তা সুশান্ত ঘোষ। তিনি বলেন, “শুনুন, আমরা বহুদিন ধরে চেষ্টা করছি। বাগডোগরার ব্যবসায়ী ও বাসিন্দারা যাতে জমির অধিকার পান, সে জন্য রাস্তায় নেমে আন্দোলন করেছি। অনেক কাণ্ড হয়েছে। বহু আশ্বাস পেয়েছি। সমস্যা মেটেনি। সেই রেল কিংবা সেনার অনুমতির ভরসায় অনেক কাজ থমকে যায়। এটার সমাধান করতে কেন্দ্র ও রাজ্যকে উদ্যোগী হতে হবে।”

(শেষ)

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন