মালদহের হরিশ্চন্দ্রপুরে প্রতিবেশী খুনে অভিযুক্তের পুলিশি হেফাজতে মৃত্যুর ঘটনায় আদালতে যাচ্ছে গণতান্ত্রিক অধিকার রক্ষা কমিটি ও স্থানীয় একটি মানবাধিকার সংগঠন।
বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় মালদহ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল থেকে ওই অভিযুক্তকে কলকাতায় স্থানান্তরিত করা হয়। কলকাতায় এসএসকেএম হাসপাতালে ভর্তি করানোর পরেই রাত দেড়টায় ওই অভিযুক্তের মৃত্যু হয়। এদিন সেখানেই মৃতের দেহ ময়নাতদন্ত করা হয়। পুলিশ জানায়, মৃতের নাম ওবাইদুল রহমান (৫২)। গ্রেফতারের সময় পুলিশের পাশাপাশি কয়েকজন প্রতিবেশী অভিযুক্ত ওবাইদুলকে মারধর করে বলে অভিযোগ। ঘটনার তদন্তের দাবি জানিয়ে জেলা পুলিশ সুপারের কাছে মৃতের পরিবারের তরফে লিখিত অভিযোগও জানানো হয়েছে। কিন্তু পুলিশ ব্যবস্থা নিতে গড়িমসি করছে বলে অভিযোগ তুলে আদালতে যাওয়ার হুমকি দিয়েছে ওই দুই সংগঠন। পুলিশ অবশ্য অভিযুক্তকে মারধরের অভিযোগ অস্বীকার করেছে। চিকিৎসকের রিপোর্ট উদ্ধৃত করে ওই অভিযুক্তের সেরিব্রাল অ্যাটাকেই মৃত্যু হয়েছে বলে দাবি পুলিশের।
পুলিশ সুপার প্রসূন বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “বিষয়টি আদালতকে জানানো হয়েছে। ম্যাজিস্ট্রেট পর্যায়ে তদন্ত হচ্ছে। পুলিশ ওই অভিযুক্তকে মারধর করেনি বলে প্রাথমিক তদন্তে জানা গিয়েছে। তবুও অভিযোগ যখন উঠেছে গোটা ঘটনা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। অভিযোগ প্রমাণ হলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।” গণতান্ত্রিক অধিকার রক্ষা কমিটির জেলা সম্পাদক জিষ্ণু রায়চৌধুরী বলেন, “পুলিশ ওই ঘটনায় কোনও ব্যবস্থা তো নেয়নি। উল্টে নানা অপযুক্তি খাড়া করে ঘটনা ধামাচাপা দিতে চাইছে বলে মনে হচ্ছে। আমরা আদালতে যাব।” গৌড়বঙ্গ হিউম্যান রাইটস অ্যাওয়ারনেস সেন্টারের সহ সম্পাদক সুদীপ্ত গঙ্গোপাধ্যায়ও বলেন, “আমরা তদন্তের দাবি জানিয়েছি। কিন্তু পুলিশ কোনও ব্যবস্থা নেয়নি। আমরাও প্রয়োজনে আদালতে যাব।”
গত ৬ জানুয়ারি হরিশ্চন্দ্রপুরের সোনাকুল এলাকায় জমি বিবাদে প্রতিবেশী ইব্রাহিম শেখকে হাঁসুয়া দিয়ে কোপানোর অভিযোগ ওঠে ওবাইদুল সহ পাঁচ প্রতিবেশীর বিরুদ্ধে। বুধবার কলকাতায় এসএসকেএম হাসপাতালে ইব্রাহিমের (৪৯) মৃত্যু হয়। ওইদিন রাতেই মেয়ের বাড়ি রতুয়ার বালুপুরে লুকিয়ে থাকা ওবাইদুলকে ধরতে যায় পুলিশ। গ্রেফতারের পরেই অসুস্থ হয়ে পড়ায় পুলিশ তাকে হরিশ্চন্দ্রপুর হাসপাতালে ভর্তি করে। সেখান থেকে মালদহ ও পরে কলকাতায় স্থানান্তরিত করা হয় ওই অভিযুক্তকে।
জেলা পুলিশ সুপারের কাছে মৃতার পরিবার লিখিত অভিযোগে জানিয়েছে যে, পুলিশের সঙ্গে এলাকায় গিয়েছিলেন নিহত শেখ ইব্রাহিমের স্ত্রী নাজিমা বিবি, তার ছেলে ইমদাদুল ও তাদের দুই আত্মীয়। গ্রেফতারের পর তদন্তকারী অফিসার বিকাশ হালদারের পাশাপাশি নিহত শেখ ইব্রাহিমের পরিবারের লোকজন ওবাইদুলকে লাঠি ও টর্চলাইট দিয়ে মাথায় ও শরীরে মারতে থাকে বলে অভিযোগ। পরে পুলিশের তরফে অভিযুক্ত হাসপাতালে ভর্তি বলে জানানো হয়। অভিযুক্তকে মারধরের পাশাপাশি নিহত ইব্রাহিম শেখের পরিবারের লোকজনকে নিয়ে অভিযুক্তকে ধরতে যাওয়ার কথা অবশ্য পুলিশ অস্বীকার করেছে। তদন্তকারী অফিসার বিকাশ হালদার বলেন, গ্রেফতারের পর অভিযুক্ত অসুস্থ হয়ে পড়ায় আমরাই হাসপাতালে ভর্তি করাই। কেন যে মিথ্যা অভিযোগ তোলা হচ্ছে জানি না।”
নিহত শেখ ইব্রাহিমের স্ত্রী নাজিমা বিবি এদিন বলেন, “ওইদিন কলকাতা থেকে স্বামীর ফেরার অপেক্ষায় সবাই বাড়িতে ছিলাম। অথচ চক্রান্ত করে আমাদের নাম জড়ানো হচ্ছে।” যদিও মৃত ওবাইদুলের মেয়ে হাসনারা বিবির দাবি, “ওরা মারধর করার ফলেই বাবা অসুস্থ হয়ে পড়েন। গোটা ঘটনা পুলিশ সুপারকে জানিয়ে তদন্তের দাবি জানিয়েছি।”